নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছে ১৫৭ পরিবার

প্রকাশ | ২৫ জুলাই ২০১৯, ০৮:৩২ | আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৯, ০৯:৩০

মেহেদি জামান লিজন, ত্রিশাল (ময়মনসিংহ)
প্রধানমন্ত্রীর ঘর নির্মাণ প্রকল্পের ঘর পৌঁছে দিতে সরেজমিন তদন্ত করছেন ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল জাকির

ফজিলা খাতুন সত্তরোর্ধ্ব বয়স্ক বৃদ্ধা জীবনযুদ্ধের শেষে এসে যেন আনন্দে আত্মহারা। ত্রিশাল উপজেলার সদর ইউনিয়নের ছলিমপুর গ্রামে বাপের বাড়িতে ঠাঁই হয়েছে শেষ বয়সে। সবসময় আঁচল পেতে দোয়া করেন যারা ঘরের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, আল্লাহ যেন তাদের ভালো রাখেন।

সত্তরের দশকে উপজেলার গোলাভিটা গ্রামে আব্দুল বারেকের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। স্বামী ও ছয় সন্তান নিয়ে তার সংসার চলছিল অভাব-অনটনের মধ্যে। এরই মধ্যে ১৯৯৮ সালে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় চার সন্তানসহ স্বামী নিহত হন। নিজেও আহত হয়ে মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েন। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পাবনা মানসিক হাসপাতালে প্রায় দুই বছর চিকিৎসার পরে নিজ বাড়ি ফিরে দেখেন ডায়রিয়ায় তার বাকি দুই সন্তানও মারা গেছে।

স্বামী-সন্তানহারা ফজিলার স্বামীর বাড়িতে ঠাঁই হলো না। বাধ্য হয়ে ফিরে আসেন বাপের ভিটায়। কোনদিন খাবার জুটত, আবার কোনদিন না খেয়ে থাকতে হতো। তাই এক সময় বেছে নিয়েছিলেন ভিক্ষাবৃত্তি।

ভিক্ষা করতে ভালো না লাগায় বেছে নেন অন্যপথ। প্রতিদিন ত্রিশাল বাজারে এসে মিষ্টির দোকানের খালি দইয়ের পাতিল কুড়িয়ে নিয়ে তা পরিস্কার করে গ্রামের পাড়ায় পাড়ায় বিক্রি করেন চালের বিনিময়ে। যা পান তা দিয়েই কোন রকমে দিন চলে যায় তার। নতুন ঘরে শুয়ে মরার স্বপ্ন দেখতেন না কোনদিনও।

এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘জমি আছে ঘর নাই, নিজ জমিতে গৃহনির্মাণ, আশ্রয়ন প্রকল্প-২’ এর আওতায় ইউএনওর অনুসন্ধানে পান ফজিলা খাতুন। এতে আনন্দে আত্মহারা তিনি। ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল জাকির নিজে সরজমিনে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘরগুলো প্রকৃত প্রাপ্য লোকদের কাছে পৌঁছে দিতে কাজ করে যাচ্ছেন।

গতকাল সকালে উপজেলার সদর ও ধানীখোলা ইউনিয়নে গিয়ে দেখা গেছে, ঝকঝক করছে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর উদ্যোগে দরিদ্র পরিবারের মাঝে দেয়া নতুন ঘরগুলো। দূর থেকে চোখে ভেসে উঠে নতুন ঘরগুলো। ঘর পেয়ে গ্রামের অসহায় মানুষের মাঝে আনন্দের বন্যা বইছে। স্বপ্নের নতুন ঘর পেয়ে অসহায় পরিবারগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মঙ্গল কামনা করে হাত তুলে আল্লাহ কাছে দোয়া করছেন। প্রকল্পের আওতায় ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ১৫৭টি দরিদ্র পরিবারের মাঝে ঘর নির্মাণ কাজের মধ্যে ৮০টি পরিবার নতুন ঘরে বসবাস করছেন।

‘জমি আছে ঘর নাই, নিজ জমিতে গৃহনির্মাণ, আশ্রয়ন প্রকল্প-২’ এর আওতায় ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের এক কোটি ৫৭ লাখ টাকায় ১৫৭টি অসহায় দিনমজুর ও ভিক্ষুক পরিবারের মাঝে বিনামূল্যে বাসস্থানের ব্যবস্থা করায় আনন্দ বিরাজ করছে তাদের মাঝে।

প্রকল্পটি সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে কাজ করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল জাকির। প্রতিটি ঘর তৈরি হচ্ছে দৈর্ঘ্য ১৬ ও প্রস্থ ১৫ ফুট করে। উপজেলার অসহায় পরিবারের তালিকা দেখে তিন ধাপে যাচাই-বাছাই করে প্রথমধাপে ১৫৭টি পরিবার ঘর পাচ্ছে।

ধানীখোলা ইউনিয়নের মধ্য ভাটিপাড়া গ্রামের মাহমুদা খাতুনের স্বামী দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থ। কাজ করতে পারেন না। দুই সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে দিনমজুরের কাজ করে বাবার চিকিৎসা ও সংসারের খরচ চালায়। স্বামীর আমলে নির্মিত মাটির ঘরে থাকতেন তিনি। কোনদিন পাকা মেঝে তো দূরের কথা টিনসেট ঘরের কথা জীবনেও কল্পনা করতে পারেননি। এখন তারা সবাই নতুন টিনের ঘরে থাকছেন। তাদের আনন্দের কোন শেষ নেই।

চকপাচপাড়া গ্রামের নাছিমা খাতুন। প্রতিবন্ধী স্বামী ও তিন সন্তানকে নিয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করে সংসার চালাতেন। পলিথিনে মোড়ানো ঘরে স্বামী-সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন। রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে সন্তানদের নিয়ে কোথাও ঠাঁই নেয়ার জায়গাটুকুও ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর উপহার পাওয়ায় আনন্দে আত্মহারা নাছিমা।

ইউএনও আব্দুল্লাহ আল জাকির বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘জমি আছে ঘর নাই, নিজ জমিতে গৃহনির্মাণ, আশ্রয়ন প্রকল্প-২’ এর কর্মসূচির আওতায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দেয়া তালিকা ও আবেদনের প্রেক্ষিতে সরেজমিন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের নায়েবদের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে যাদের জমি ছাড়া কিছুই নেই, সেইসব প্রকৃত অসহায় পরিবারের মাঝে এক লাখ টাকা খরচ করে টিনসেট ঘর তৈরি করে দেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে ১৫৭টির মধ্যে ৮০টি পরিবার নতুন ঘরে বসবাস করছেন।’

ত্রিশাল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মতিন সরকার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দেয়া গৃহহীনদের ঘর নির্মাণে ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরেজমিন গিয়ে প্রকৃত গৃহহীনদের ঘর দিয়েছেন। এতে করে ১৫৭টি অসহায় দরিদ্র পরিবার নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন পেয়েছে।’

(ঢাকাটাইমস/২৫জুলাই/প্রতিনিধি/এমআর)