এলিজাবেথ টেলরের অজানা গল্প

প্রকাশ | ২৬ জুলাই ২০১৯, ০৮:৫০

বিনোদন ডেস্ক

‘ডিস্টিকিয়া’ এক ধরনের জিনগত সমস্যা। এর ফলে আঁখিপল্লব ত্রুটিপূর্ণ হয়। এই ত্রুটি নিয়েই ভূমিষ্ঠ হয়েছিল শিশুটি। তার চোখের পাতা বা আইল্যাশের দুটি স্তর ছিল। পরবর্তীকালে সেটাই হয়ে দাঁড়ায় তার মোহময়ী রূপের তুরূপের তাস। ওই তাস দিয়েই দীর্ঘ কয়েক দশক তিনি শাসন করেছিলেন হলিউড। বলা হচ্ছে মার্কিন অভিনেত্রী এলিজাবেথ টেলর বা লিজ টেলর সম্পর্কে।

পুরো নাম এলিজাবেথ রোজমন্ড টেলর। জন্ম ১৯৩২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি লন্ডনের হ্যাম্পস্টেডে। তার বাবা-মা ছিলেন মার্কিন বংশোদ্ভূত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ১৯৩৯ সালে তারা সপরিবারে আমেরিকায় চলে এসেছিলেন।

মাত্র ১০ বছর বয়সে ‘ওয়ার্ন বর্ন এভরি মিনিট’ ছবির মাধ্যমে হলিউডে অভিষেক হয়েছিল এলিজাবেথের। প্রথম বিরতি নেন ১৯৪৪ সালে ‘ন্যাশনার ভেলভেট’ ছবিতে অভিনয় করে। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী এলিজাবেথ পরে ইহুদি ধর্ম গ্রহণ করেন। তার নতুন নাম হয় এলিশেবা র‌্যাশেল।

সুন্দরী এলিজাবেথ মোট সাতজন পুরুষকে আটবার বিয়ে করেছিলেন। এর মধ্যে প্রথম বিয়েটা করেছিলেন মাত্র ১৭ বছর বয়সে। তার প্রথম স্বামী ছিলেন বিখ্যাত হোটেল ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান নিকি হিলটন জুনিয়র। তাদের পারিবারিক ব্যবসা ছিল হিলটন গ্রুপ অব হোটেলস।

দ্বিতীয় স্বামী ছিলেন মাইকেল ওয়াইল্ডিং। তৃতীয় বিয়ে মাইকেল টডকে। চতুর্থ বার জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন এডি ফিশারকে। পঞ্চম ও ষষ্ঠ স্বামী ছিলেন রিচার্ড বার্টন। একবার বিয়ের পরে ডিভোর্স দিয়ে আবার তাকেই বিয়ে করেছিলেন লাস্যময়ী অভিনেত্রী। সপ্তম স্বামী জন ওয়ার্নার। অষ্টম তথা শেষ স্বামী ল্যারি ফর্টেনস্কি।

এলিজাবেথের তৃতীয় স্বামী চলচ্চিত্র পরিচালক মাইকেল টড বিমান দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন। তারপর তিনি বিয়ে করেছিলেন এডি ফিশারকে। বাকি বিয়েগুলো করেছিলেন বিবাহবিচ্ছেদের পরে। এডি ছিলেন তার বান্ধবী ডেবি রেনল্ডসের স্বামী। এলিজাবেথকে বিয়ের জন্য ডেবিকে ডিভোর্স করেছিলেন টড।

এলিজাবেথের কেরিয়ারের মাইলফলক সিনেমা ‘ক্লিওপেট্রা’। যশ, খ্যাতি, অর্থ সব কিছুই তাকে দিয়েছিল এই ছবি। সেই সঙ্গে দিয়েছিল জীবনসঙ্গী রিচার্ড বার্টনকেও। এই ছবির সেটেই আলাপ হয়েছিল দুজনের। বার্টনকে দুইবার বিয়ে, দুইবার ডিভোর্স দিয়েছিলেন এলিজাবেথ। নায়িকা বলেছিলেন, ১৯৮৪ সালে বার্টন মারা না গেলে তিনি আবারও তাকে বিয়ে করতেন।

আট বার বিয়ে থেকে মোট চারজন সন্তানের মা হয়েছিলেন এলিজাবেথ। মাইকেল ওয়াইল্ডিং ও এলিজাবেথের দুই ছেলে। মাইকেল জুনিয়র এবং ক্রিস্টোফার এডওয়ার্ড। মাইক টডের সঙ্গে তার বিয়েতে জন্ম হয়েছিল কন্যা লিজার। রিচার্ড বার্টন ও এলিজাবেথ টেলরের কন্যার নাম মারিয়া বার্টন।

জীবনে মোট পাঁচ বার অস্কার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন এলিজাবেথ। পেয়েছেন দুইবার। ‘হুজ অ্যাফ্রেড অব ভার্জিনিয়া উল্ফ’ এবং ‘বাটারফিল্ড ৮’ ছবিতে অভিনয় তাকে এনে দিয়েছে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জন্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার। ৬৭ বছর বয়সে এলিজাবেথ ‘ডেম কমান্ডার অব দ্য অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার’-এ সম্মানিত হন। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ তাকে এই সম্মাননা দিয়েছিলেন।

সুগন্ধি খুব ভালোবাসতেন এলিজাবেথ। এক মুহূর্তও পারফিউম ছাড়া থাকতে পারতেন না। নিজেও বানিয়েছিলেন একটি সুগন্ধি। ভক্তরা সেই পারফিউমের নাম দিয়েছিলেন ‘ভায়োলেট আইজ’। রিচার্ড বার্টন তাকে ৩৩.১৯ ক্যারাটের হিরের আংটি উপহার দিয়েছিলেন। হিরের নাম হয়েছিল ‘দ্য এলিজাবেথ টেলর ডায়মন্ড’।

এলিজাবেথের মৃত্যুর পরে নিলাম হয়েছিল তার বিপুল অলংকার সম্ভার। ক্রিস্টির নিলামে সেসব গয়নার দাম উঠেছিল বাংলাদেশি টাকায় নয় কোটি টাকারও বেশি। পুরো টাকাই ব্যবহৃত হয়েছিল এলিজাবেথ টেলরের নামাঙ্কিত এডস গবেষণা সংক্রান্ত সংস্থায়।

বার্ধক্যে পৌঁছে দীর্ঘ দিন রোগাক্রান্ত ছিলেন এলিজাবেথ টেলর। ডায়াবেটিস, হিপ রিপ্লেসমেন্ট সার্জারি, হৃদরোগ, ব্রেন টিউমারসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় জর্জরিত ছিলেন তিনি। দীর্ঘ ২০ বছর অসুস্থ থাকার পরে চিরতরুণী এই নায়িকার মৃত্যু হয়েছিল ২০১১ সালের ২৩ মার্চ।

ঢাকাটাইমস/২৬ জুলাই/এএইচ