স্কুলে থাকতে উদ্যোক্তা হিসেবে নাম লেখান সাহার মতিন

প্রকাশ | ২৬ জুলাই ২০১৯, ২১:০২ | আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৯, ১০:৫৩

শেখ সাইফ

উদ্যোক্তা হিসেবে যখন মাঠে নামেন সাহার মতিন, তখন তিনি অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। সেটা ২০১৬ সালের কথা। এখন স্বপ্ন দেখছেন বাংলাদেশের প্রথম সারির একজন ফ্যাশন ডিজাইনার হওয়ার। আর চেষ্টা করবেন নিজেকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যেতে। এরই মধ্যে একটু একটু করে বেশ এগিয়ে গেছেন। বিভিন্ন স্থানে পোশাক প্রদর্শনীতে নিয়মিত অংশ নিচ্ছে তরুণ এই উদ্যোক্তার প্রতিষ্ঠান ‘সাহার মতিন কোচুয়ার’।

রাজধানীর গুলশান-২ এর ইউনিমার্টে গতকাল শুরু হয়েছে দুই দিনের পানাস মেলা। সেখানে নিজের ডিজাইন করা পোশাক নিয়ে স্টল দিয়েছেন তিনি। ঢাকা টাইমসের সঙ্গে একান্ত আলাপে সাহার মতিন জানিয়েছেন নিজের উদোক্তা হয়ে ওঠার গল্প।

উদ্যোক্তা হিসেবে শুরুর গল্পটা বলুন।

২০১৬ সালে কাজটা শুরু করি। তখন আমি অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি। আমি বাবাকে শখের বশে বলেছিলাম একটা কাজ করতে চাই। বাবা আমাকে খুবই উৎসাহ দিলেন। পাশাপাশি মাও আমাকে সাহস জোগালেন। বাবা বললেন তুমি শুরু করো। এরপর থেকেই আমি দোকানে দোকানে ঘুরে পছন্দের কাপড় সংগ্রহ করতে থাকি। সেগুলোতে নিজের মতো করে সাধারণ ডিজাইন দিয়ে কাজ শুরু করি।

ফ্যাশন ডিজাইনটা কেন বেছে নিলেন?

ছোটবেলা বেলা থেকে সাজগোজের প্রতি আমার একটা দুর্বলতা ছিল। ছোটবেলায় মাকে দেখতাম নিজের ও আমাদের জন্য নিজ হাতে পোশাক কেটে ডিজাইন করতে। আমি অধিকাংশ মায়ের হাতের ডিজাইন করা পোশাক পরেছি। তো মাকে দেখে দেখে আমার ভেতর ইচ্ছা তৈরি হয়।

পড়াশোনার পাশাপাশি উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছেন, কীভাবে এই চ্যালেঞ্জ নিলেন?

আমি যখন ও-লেভেল শেষ করি তখন কাজ একটু বন্ধ রেখেছিলাম। একটা প্রদর্শনী করে পড়াশোনাটা শেষ করলাম। এরপর পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর আমি আবার কাজ শুরু করি। যেহেতু আমার এটা অনলাইন বেইজ বিজনেস প্লাটফর্ম, আমি অনলাইনে আমার পেজে ছবি আপলোড করব। এখান থেকেই ক্রেতারা দেখবে এবং আমার প্রতিষ্ঠানটি ধীরে ধীরে পরিচিতি লাভ করবে।

আপনার প্রতিষ্ঠানের নাম সম্পর্কে জানতে চাই।

‘শাহার মতিন কোচুয়ার’ আমার বিজনেস প্লাটফর্মের নাম। বর্তমানে ফ্যাশন প্লাটফর্ম একটা বড় মার্কেট। অনেকেই পোশাক নিয়ে কাজ করছে। পোশাকের ব্যবসা করছে। আমি চেষ্টা করি আমার ক্লায়েন্টের চাহিদামতো পোশাকের ডিজাইন করতে। আমি খুব বেশি আড়ম্বর ডিজাইন করি না। হালকা ওয়েস্টার্ন ডিজাইন দিয়ে কাজ করতে বেশি পছন্দ করি।

নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করতে চাইলে কোন দিকে বেশি মনোযোগ দিতে হবে?

প্রথমত নিজের ইচ্ছাটা থাকতে হবে। আমি এই কাজে সফল হবই। আমাকে সফল হতেই হবে। এমন সংকল্প নিজের ভেতর ইচ্ছা পোষণ করতে হবে। করতে যেয়ে একটু বাধা পেলে যদি হাল ছেড়ে দেয় তাহলে সে করতে পারবে না। অবশ্যই তাকে চ্যালেঞ্জ নিতে হবে।

আপনার প্রতিষ্ঠান নিয়ে এখন কেমন স্বপ্ন দেখেন?

আমার ইচ্ছা বাংলাদেশের প্রথম সারির একজন ফ্যাশন ডিজাইনার হওয়া। আর চেষ্টা থাকবে যদি ভাগ্য সহায় হয় তবে আন্তর্জাতিক মানের একজন হওয়া। আমি আমার স্বপ্ন বাস্তবায়নে কোনো কম্প্রমাইজ করি না। আমি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কাজ দেখি এবং সেভাবেই নিজেকে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি।

এই যে আপনি মেলায় এসেছেন, এই মেলা কেমন মনে হচ্ছে?

এই মেলায় আয়োজন করেছে পানাস হাব। পানাস হাবের স্বত্বাধিকারী হচ্ছেন সাবেরা আনোয়ার। তিনি এই  প্রতিবছর ঈদের আগে এই মেলার আয়োজন করে থাকেন। মেলাতে আসলে অনেক ক্রেতাদের সঙ্গে বাস্তবে পরিচয় ঘটে। পণ্যের সঙ্গে পরিচয় ঘটে। অনলাইনটা বাস্তবে দেখতে পারে। অনেক লোকের সমাগম ঘটে। আমি এই মেলাকে পজেটিভ হিসেবে দেখি। আমি কামিজ, কুর্দি, শাড়ি ইত্যাদি এনেছি। আমার কাপড়ের ভেতরে ডবল জর্জেট থেকে শুরু করে শিফন ও অন্যান্য রয়েছে। এখানে ৬ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে পোশাক পাওয়া যাবে। অধিকাংশ পোশাকই ট্র্যাডিশনাল। এখানে মেয়েদের পোশাকই বেশি। এ ছাড়া অর্নামেন্ট, জুয়েলারি, জুতা ও ছেলেদের কিছু পোশাক এসেছে। ক্রেতা সমাগম সন্তোষজনক বলা চলে।

আমাদের দেশে অনলাইনে উদ্যোক্তা হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ কতটুকু আছে বলে আপনি মনে করেন?

এখানে অনেক সুযোগ আছে। অর্থনৈতিক সুবিধা যদি পায়। তবে কাজটা বুঝেশুনে করতে হবে। হুটহাট করে কাজে হাত দিলে হবে না। অন্যের ওপর নির্ভর করে কাজে নামলে হবে না। এখানে অনেক শেখার আছে। শিখে কাজে আসা উচিৎ। বর্তমানে ইনটারনেট, গুগোল থেকে অনেক কিছু শেখা যায়।  এমনকি গবেষণাও করতে পারে।

আপনাকে দেখে আপনার বন্ধুরা কেমন উদ্বুদ্ধ হচ্ছে?

আমার বন্ধুরা, কাছের মানুষেরা খুবই সাহস জুগিয়েছে। আমার প্রদর্শনীতে এসেছে। আমার কাছ থেকে কেনাকাটা করেছে। আমার দেখাদেখি আমার এক বন্ধুও কাজ শুরু করেছে। সে পাঞ্জাবির কাজ নিয়ে প্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়েছে।

পড়াশোনা শেষে তো নিশ্চয়ই এই উদ্যোক্তা হিসেবেই সফল হতে চাইবেন?

আমার প্রতিষ্ঠানকেই অনেক বড় পরিসরে দেখার ইচ্ছা। একদিন অনেক বড় নাম হবে। সবাই একনামে চিনবে। আমার বাবা একজন ব্যবসায়ী। আমারও বাবার মতো ব্যাবসায়ী হওয়ার ইচ্ছা। এ ছাড়া বাবার প্রতিষ্ঠানে কাজ করার ইচ্ছা আছে।