মাদারীপুরে সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু শনাক্তের ব্যবস্থা নেই, আক্রান্ত ১৩

মাদারীপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৮ জুলাই ২০১৯, ১৭:২৬

মাদারীপুর জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে নেই ডেঙ্গুজ্বর শনাক্ত করার যথাযথ ব্যবস্থা। রোগীরা প্রাইভেট ক্লিনিক থেকে প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন। এরপর তাদের প্রাথমিক সেবা দেয়া হয়। সরকারি হাসপাতালে কাঙ্খিত সেবা না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রোগীরা। আর চলতি বছর সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু শনাক্তের মেশিন আসার সম্ভাবনা নেই বলেও কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

জানা যায়, গত ৫ জুলাই থেকে এই পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৩ জন। যার মধ্যে গত এক সপ্তাহে ভর্তি হয়েছে ১০ জন। এদের মধ্যে মাদারীপুরের নিজ এলাকা থেকে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন দুজন। আক্রান্তদের মধ্যে ১১ জনই ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে মাদারীপুরে এসেছেন বলে জানান সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক শশাঙ্ক চন্দ্র ঘোষ।

সরেজমিনে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সাধারণ রোগীদের সঙ্গেই রাখা হয়েছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের। কথা হয়, সদর উপজেলার কালিকাপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, তিনদিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত তিনি। এই জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছেন মাদারীপুর সদর হাসপাতালে। ডেঙ্গু পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় প্রাইভেট ক্লিনিক থেকে পরীক্ষা করে জানতে পারেন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত। এরপরই মাদারীপুর সদর হাসপাতাল থেকে পাঠানো হয়েছে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

ঢাকার স্টেট ইউনিভার্সিটির ছাত্রী প্রিয়াঙ্কা আক্তার। ঢাকাতে থাকা অবস্থায় আক্রান্ত হয়েছেন জ্বরে। সেখানে তার সেবা যত্ন করার কেউ না থাকায় চলে এসেছেন গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের কেন্দুয়াতে। পরে সদর হাসপাতালে এসে জানতে পারেন তিনি ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘কয়েকদির ধরে জ্বরে আক্রান্ত ছিলাম। পরে জানতে পারি এটা ডেঙ্গুজ্বর। মাদারীপুর সদর হাসপাতালে কোন চিকিৎসা না থাকায় আমাকে অন্যত্র পাঠানো হয়েছে। একটি সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা নেই। এটা খুবই দুঃখজনক।’

এদিকে, ডাসার থানার ধুয়াসার গ্রামের মোসলেম কবিরাজও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত। তিনি এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা। বাড়িতে থাকতেই আক্রান্ত হয়েছেন ডেঙ্গুজ্বরে। সদর হাসপাতালে ভর্তির পরই তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হচ্ছে ঢাকা অথবা ফরিদপুর।

আরেক রোগী মাদারীপুর সদর উপজেলা আনোয়ার হোসেন জানান, তিনি কখনও ঢাকায় যাননি। হঠাৎ করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। কিন্তু এখানে চিকিৎসা সেবা না থাকায় তাকে ঢাকা অথবা ফরিদপুর নিয়ে যেতে বলেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তিনি দুঃখ করে বলেন, ‘এখানে যদি যথাযথ চিকিৎসা থাকতো তাহলে অন্যত্র যেতে হতো না।’

মাদারীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক শশাঙ্ক চন্দ্র ঘোষ জানান, গত ৫ জুলাই থেকে এই হাসপাতালে মোট ১৩ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। যাদের মধ্যে গত এক সপ্তাহে ভর্তি হয়েছে ১০ জন। এছাড়া গেলো ২৪ ঘণ্টায় আরো তিনজন ভর্তি হয়েছে। যাদের সবাইকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্যে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেছি। আমাদের সাধ্য মতো চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করেছি।’

ডেঙ্গু শনাক্তের ব্যবস্থা না থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন মাদারীপুরের সিভিল সার্জন ডা. শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকারি হাসপাতাগুলোতে ডেঙ্গুজ্বর শনাক্ত করণের যন্ত্র নেই। যে কারণে ডেঙ্গু সনাক্ত করে রোগীরা এলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। যদি কোনো রোগীর অবস্থার অবনতি হয়, তাহলে উন্নত চিকিৎসার জন্যে অন্যত্র রেফার করি।’

চলতি বছর অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকার সম্ভাবনা থাকলেও এ বছর মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু শনাক্তের মেশিন আসছে না- সেটা জানা গেল সিভিল সার্জনের কথায়।

তিনি বলেন, ‘আগামী বছর ডেঙ্গু শনাক্তকরণ কিট ক্রয়ের জন্যে অর্থ বরাদ্দ চাইবো।’

ঢাকাটাইমস/২৮জুলাই/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :