ডেঙ্গু চিকিৎসার হাসপাতালই যখন ‘রোগী’

শিশু ও সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে মশার অনুকূল পরিবেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৮ জুলাই ২০১৯, ২০:৪১ | প্রকাশিত : ২৮ জুলাই ২০১৯, ১৯:০৭

ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু বা প্রাপ্তবয়স্ক রোগীর চিকিৎসা দেওয়া ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিবেশই অপরিচ্ছন্ন।

দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের অভিযানে দেখা দেখা গেছে মশা জন্মের অনুকূল পরিবেশ। সেই সঙ্গে নোংরা, আবর্জনায় ভরপুর চারপাশ। রক্ত পরীক্ষার মেশিনও একটি হাসপাতালে বিকল। যেটি রোগীর জীবনের ওপর ঝুঁকি তৈরি করছে। কিন্তু এসবের কোনো যুতসই জবাবও দিতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

রবিবার সংস্থাটির হটলাইন নম্বর ১০৬-এ ফোন করে হাসপাতাল দুটির ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ নিয়ে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগীরা। আর এরপর অভিযানে যায় দুদকের দল।

তিন সদস্যের একটি দলের নেতৃত্ব দেন সহকারী পরিচালক নারগিস আক্তার। উপসহকারী পরিচালক মনিরুল ইসলাম এবং মেডিকেল অফিসার অনুপ কুমার বিশ্বাসও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত দুটি হাসপাতালে ডেঙ্গুু রোগে আক্রান্ত হয়ে বিপুল পরিমাণ রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাদের একটি বড় অংশ সুস্থ হয়ে বাসায়ও ফিরেছেন। কেউ কেউ হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। গতকালও শিশু হাসপাতালে প্রাণ গেছে একটি শিশুর।

শিশু হাসপাতালে মশার অনুকূল পরিবেশ

ঢাকা শিশু হাসপাতালের ভেতরে ও আশপাশে পানি জমে থাকার চিত্র খুঁজে পায় দুদকের দল। পরিচ্ছন্ন পানিতে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার জন্ম হতে পারে, এই তথ্যটি অজানা থাকার কথা নয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। তকে সেখানকার কর্মীদের কোনো উদ্যোগ ছিল- এর কোনো প্রমাণ মেলেনি।

ডেঙ্গু জ্বরের বিস্তারের মধ্যে ঘর বাড়িতে জমে থাকা পানি অপসারণে বারবার আহ্বান জানানো হচ্ছে নগর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে। আর এ নিয়ে জনসচেতনতার অভাবও স্পষ্ট। কিন্তু যেসব হাসপাতাল ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেয়, সেখানেই এমন চিত্র হতাশ করেছে দুদক দলকে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবশ্য অযুহাতের শেষ নেই। তারা বলছে, সিটি করপোরেশনকে অনুরোধ করার পরও তারা ওষুধ ছিটানোর উদ্যোগ নেয়নি। পরে নিজ উদ্যোগেই ওষুধ ছিটানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু জমে থাকা পানি কি সিটি করপোরেশন এসে সরিয়ে দিয়ে যাবে- এমন প্রশ্নের কোনো জবাব ছিল না কারো কাছে।

অভিযানের পর হাসপাতালটির পরিচালক সৈয়দ শফি আহমেদ তাৎক্ষণিক সমাধানের উদ্যোগ নেন। পরিবেশ পরিচ্ছন্ন করতে নির্দেশ দেন কর্মচারীদের।

সোহরাওয়ার্দীতে রক্ত পরীক্ষার মেশিন বিকল

অভিযান চলাকালে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ব্লাড এনালাইজার দুটি মেশিন বিকল অবস্থায় পাওয়া যায়। মেশিন দুটি বিকল থাকার কারণে সিবিসি রিপোর্ট (রক্ত পরীক্ষা) জন্য রক্ত দেয়া হলেও তিন দিন যাবৎ রোগীরা রিপোর্ট পাচ্ছে না। ফলে ডেঙ্গু শনাক্ত এবং চিকিৎসা দিতে বিলম্ব হচ্ছে। রক্তের নমুনা সংগ্রহ এবং রিপোর্ট পাওয়ার ক্ষেত্রেও রোগীদের হয়রানির চিত্র পেয়েছে দুদক।

ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর জন্য রক্ত পরীক্ষার দ্রুত প্রতিবেদন পাওয়া জরুরি। কারণ, তার রক্তে কত প্লাটিলেট আছে, সেটা জেনে রক্ত দান বা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হয়। সামান্য বিলম্ব একজন মানুষের জীবনের ওপর ঝুঁকি তৈরি করে। এই অবস্থায় একটি মেশিন বিকল্প থাকার পরও কেন এই সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয়নি-সে প্রশ্ন তোলে দুদকের দল।

জবাবে হাসপাতাল পরিচালক উত্তম কুমার বড়ুয়া দুদক দলকে দিনের মধ্যেই মধ্যেই সিবিসি রিপোর্ট তৈরি করে রোগীদের দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।

দুদক জানায়, ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় ব্যবহৃত আইভি ফ্লুইড নরমাল স্যালাইন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোগীদেরকে কিনতে হচ্ছে। হাসপাতালের পরিচালক জানান, অপর্যাপ্ত সরবরাহের কারণে এমনটি হয়েছে। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টদেরকে চিঠি দেয়া হলেও কার্যকরী উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

ঢাকাটাইমস/২৮জুলাই/কারই/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজধানী এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :