কাঁদছে শিশু হাসপাতাল

কাজী রফিক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৯ জুলাই ২০১৯, ০৯:৫৬

ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিবেশ হয়ে উঠেছে ভারী। এখানকার রোগী যারা, তারা নিজেদের মনের ভাব প্রকাশ করার মতো বয়স হয়নি এখনো। নিজের বেদনা প্রকাশ করে কান্নায়। আর উদ্বিগ্ন, উৎকণ্ঠিত অভিভাবকরা থাকেন শঙ্কায়।

ডেঙ্গু জ্বরের বিস্তারের সময় শিশু হাসপাতালের শয্যা যে ফাঁকা থাকবে না, এটাই স্বাভাবিক। হয়েছেও তাই। আর সারাক্ষণ শিশুরা সেখানে কেঁদে চলছে। একজনের কান্না দেখে ভয়ে কাঁদছে অন্যরাও।

গতকাল সকালে হাসপাতালের প্রধান ফটক দিয়ে গেট দিয়ে প্রবেশ করতেই কানে আসে স্বজনদের কান্নার শব্দ। পাঁচ দিন ডেঙ্গুতে ভুগে সইতে পারেনি নয় বছরের শিশু জারিফা জাহান। বাবা জামিল আহমেদ ও মা রেহানা বেগমের ছোট সন্তান ছিল। আজিমপুরের লিটল অ্যাঞ্জেলে স্কুলে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিল। সন্তান হারা মা-বাবা কান্নার জন্য কথাই বলতে পারছিলেন না।

জারিফার মামা সুমন বলেন, ‘বুধবার জারিফাকে শিশু হাসপাতালে ভর্তি করি। ভর্তির পর থেকেই তাকে আইসিইউতেই ছিল। ও মারা গেছে।’- বলতে বলতে ডুকরে কেঁদে উঠেন তিনিও।

হাসপাতালটিতে গতকাল সকাল পর্যন্ত ৯৬টি শিশু চিকিৎসা নিচ্ছিল। বি-ব্লকের ১০ নম্বর ওয়ার্ড পুরোটাই ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুতে ভরপুর।

সেখানে গিয়ে দেখা যায়, শিশুদের কান্নার চিত্র। মশারির মধ্যে রাখা শিশুরা জ্বরে ছটফট করছে। কথা হয় কয়েকজন শিশু এবং তাদের পরিবারের সঙ্গে। স্বজনরা জানান, সতর্ক থাকার পরেও তারা সন্তানদের এডিস মশা থেকে রক্ষা করতে পারেননি।

মিরপুর-১০ নম্বর এলাকা আসা মিলি বেগমের আট বছর বয়সী শিশু মাইমুনাকে ভর্তি করা হয়েছে শনিবার রাতে। বলেন, ‘আবার বাচ্চাটা দুই দিন ধরে জ্বরে ভুগছিল। মিরপুর শিশু হাসপাতালে নিয়ে যাই, সেখানে তার ডেঙ্গু ধরা পরে। ওই হাসপাতালে শয্যা খালি না থাকায় এখানে নিয়ে আসি।’

‘দুই দিন ধরে জ্বর ১০৪ এর নিচে নামছিল না। কয়েকজন ডাক্তার দেখাইছি। তারা ওষুধ দিছে, কিন্তু লাভ হয় নাই। পরে গতকাল রাত তিনটায় এইখানে আনলাম। এখন অবস্থা আগের চাইতে ভালো।’

মাইমুনার শয্যার বিপরীতের শয্যায় শুয়ে আছে মিতু। মিরপুর মনিপুর স্কুলের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী সে। বয়স আট বছর। পাশে বসে তার মাথায় হাত বোলাচ্ছে নানি সেতারা বেগম।

সেতারা বেগম জানান, তার বাড়ির আশপাশে বেশ কিছু জায়গায় জমাটবদ্ধ পানি আছে। সেখানে নিয়মিত খেলাধুলা করতো তার নাতিন। সম্ভবত সেখানেই মশা কামড়েছে তাকে। মিতু বলে, ‘আমার ভালো লাগে না। মাথা ব্যাথা করে। কষ্ট লাগে।’

একই ওয়ার্ডে ভর্তি পাঁচ বছর বয়সী শিশু মুসলাল। পাঁচ দিন ধরে চিকিৎসাধীন সে। মা হাসিনা আক্তার বলেন, ‘আমার মেয়ের ১০ দিন ধরে জ্বর। প্রথমে বাসায় রাখলেও অবস্থা খারাপ হওয়ায় এখানে ভর্তি করিয়েছি। এখন কিছুটা সুস্থ।’

ফার্মগেট এলাকার বাসিন্দা হাসিনা আক্তার বলেন, তার বাসার চারপাশ ফাঁকা জায়গা। প্রতি বছর মশার ওষুধ দিলেও এবার একবারের জন্যও কেউ আসেনি। ডেঙ্গু আতঙ্কে দিনের বেলায়ও তারা মশারি টানিয়ে রাখতেন। বাচ্চাদের বাইরে যেতেও দিতেন না। এত সতর্কতার পরেও কোনো লাভ হয়নি।

রায়েরবাজার এলাকা থেকে আসা রিয়াজুল হকের ছেলে ডেঙ্গু আক্রান্ত নন। কিন্তু তার মনে আশঙ্কা, ছেলের আবার এই জ্বর হয় কি না। তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গুর যে অবস্থায় গেছে, তাতে তো আমরাও চিন্তায় আছি। আমার বাচ্চাও তো এখানে ভর্তি। ওই রোগীদের না হয় মশারি দিয়া রাখছে। কিন্তু আমাদের রোগী তো মশারি ছাড়া। তার কী হবে?’

হাসপাতালের পরিচালক সৈয়দ সফি আহমেদ মুয়াজ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘শিশুদের ক্ষেত্রে বিষয়টি (ডেঙ্গু) একটু জটিল। কারণ, তারা বলতে পারছে না কোথায় সমস্যা হচ্ছে। ফলে অভিভাবকদের একটু বাড়তি সতর্কতার সঙ্গে দৃষ্টি রাখতে হয়। বিশেষ করে জ্বর কমার পরের তিন থেকে চার দিন ঝুঁকিপূর্ণ সময়। এই সময়ে বাড়তি সতর্কতা থাকতে হয়।’

গর্ভবতীদের জন্য ডেঙ্গু মারাত্মক হতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন এই চিকিৎসক। বলেন, ‘এই মুহূর্তে গর্ভবতী মা এবং নবজাতকের মায়ের জন্য বিশেষ করে খেয়াল রাখতে হবে। তাদের যেনো কোনোভাবেই মশা কামড় না দিতে পারে। সে জন্য খেয়াল রাখতে হবে।’

ঢাকাটাইমস/২৯জুলাই/কারই/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :