ডেঙ্গু পরীক্ষায় হাসপাতালে ‘অতি মুনাফা’

সৈয়দ ঋয়াদ ও নজরুল ইসলাম
 | প্রকাশিত : ২৯ জুলাই ২০১৯, ১২:১২

ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহ বিস্তারের মধ্যে সুযোগ খোঁজা বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মুনাফা প্রবণতায় রাশ টানার চেষ্টা করছে সরকার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বেঁধে দিয়েছে, এখন থেকে তিন ধরনের রক্ত পরীক্ষার জন্য নেয়া যাবে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা। কিন্তু অধিদপ্তরে অঙ্গীকার করে এসেও হাসপাতালগুলো আগের মতোই অতিরিক্ত টাকা রাখছে।

জ্বর হলেই নগরবাসী ছুটছে হাসপাতাল ক্লিনিকে, পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে চাইছে ডেঙ্গু হয়েছে কি না। আর এই সুযোগ নিচ্ছে হাসপাতাল আর রোগ পরীক্ষাগারগুলো। সরকারি হাসপাতালের চেয়ে দ্বিগুণ-তিন গুণ, এমনকি চার গুণ টাকা আদায়ের তথ্য মিলেছে।

প্রথম ধাপের ডেঙ্গু পরীক্ষায় যেসব সামগ্রী লাগে তার দাম এক থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই পরীক্ষায় লাগে ৩০০ টাকা, বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে লাগে ৬০০ টাকা। অথচ বেসরকারি বিভিন্ন চিকিৎসালয়ে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত আদায়ের তথ্য মিলেছে।

এই বিপুল টাকা আদায় করা হলেও ডেঙ্গুর প্রথম ধাপের পরীক্ষায় যেসব সামগ্রী লাগে তার দাম এক থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতাল ও রোগ পরীক্ষাগারে মাত্রাতিরিক্ত ফি আদায় নিয়েও আছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া।

এই অবস্থায় গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হাসপাতাল/ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করে। ঠিক হয় ডেঙ্গুর প্রাথমিক পরীক্ষা এনএসওয়ান এবং আইজিএম ও আইজিইর জন্য নেওয়া যাবে এই ৫০০ টাকা। এতদিন ৮০০ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত আদায়ের তথ্য ছিল।

আর সিবিসি (আরবিসি, প্লাটিলেট ও হেমাটোক্রিট মিলিয়ে) নেয়া যাবে ৪০০ টাকা। একদিন এক হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হতো।

বৈঠকের পর অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে একটি লিখিত নির্দেশনা দেওয়া হয়। গণমাধ্যমেও এই নির্দেশনা ছাপা হয়। কিন্তু বৈঠকে সায় দিয়ে এসেও বেসরকারি হাসপাতালগুলো আগের হারেই অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে বলে তথ্য মিলেছে। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোর একটাই অযুহাত, তারা নির্দেশনার কথা জানে না।

সরকারের এই নির্দেশনা জারির প্রায় তিন ঘণ্টা পর ঢাকার ছয়টি হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি বেঁধে দেওয়ার কথা জানেই না কেউ।

এমনকি বাণিজ্যিক না হলেও হলিফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও নেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা।

এনএসওয়ান, আইজিএম ও আইজিই এবং আর সিবিসির পরীক্ষা করাতে গেলে যথাক্রমে ১২৪০, এক হাজার ও ৫০০ টাকার হিসাব দিয়ে মোট দুই হাজার ৭৪০ টাকা পরিশোধ করতে বলে তারা।

এরপর সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের কারণ জানতে চাইলে একজন কর্মী বলেন, ‘আমাদের সফটওয়ার আপডেট করতে হবে।’

জানতে চাইলে উপ-পরিচালক স্বপন কুমার বর্মণ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা এটা (সরকারি নির্দেশনা) দেখিনি। তাছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এটার জন্য আজ আমাদের ডাকেনি। আমরা সাধারণত সরকারি আদেশ মেইলে পাই, এরকম কিছু পাইনি। যেহেতু সরকার অর্ডার করেছে আমরা অবশ্যই এটা মানব।’

মালিবাগের ‘পদ্মা জেনারেল হাসপাতালে’ গিয়েও অতিরিক্ত টাকা আদায়ের প্রমাণ মিলেছে। সেখানে ‘এনএসওয়ান’ পরীক্ষাটি করতে রাখা হচ্ছে এক হাজার ২৮০ টাকা, যার সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ৭৮০ টাকা বেশি।

একই পরীক্ষা করতে মালিবাগে মোড়ের মেডিনোভা রাখছে এক হাজার ৫০০ টাকা, শাহজাহানপুরের ‘দ্য বারাকা’ হাসপাতাল রাখছে এক হাজার টাকা, প্যান প্যাসিফিক হাসপাতাল নিচ্ছে এক হাজার ৫২০ টাকা এবং ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল নিচ্ছে এক হাজার ২০ টাকা।’

সরকারের নির্ধারিত ফি এর চেয়ে বেশি রাখার বিষয় পদ্মা জেনারেল হাসপাতালের কাউন্টারে থাকা ব্যবস্থাপক বলেন, তারা ফি বেঁধে দেওয়ার কোনো প্রজ্ঞাপনের খবর জানেন না।

পদ্মায় আসা এক রোগীর স্বজন জানান, তাদের সবগুলো পরীক্ষা করতে লেগেছে প্রায় দুই হাজার ৮৯০ টাকা। এর মধ্যে এনএসওয়ান পরীক্ষা করতে নেয় এক হাজার ২৮০, আইজিই এক হাজার ২০ টাকা ও সিভিসির জন্য ৫৯০ টাকা।

সরকারের বেঁধে দেওয়া মূল্যতালিকা আমলে না নিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে মালিবাগের মেডিনোভা হাসাপাতালও। সেখানে ডেঙ্গুর তিনটি পরীক্ষা করতে নেওয়া হচ্ছে দুই হাজার ৯৫০ টাকা, অর্থাৎ নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে এক হাজার ৫৫০ টাকা বেশি।

এই অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার বিষয়ে কোনো হাসপাতালের কারো বক্তব্যই পাওয়া যায়নি। কেউ কথা বলতেই রাজি হয়নি।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার পরিচালক আমিনুল হাসান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আগে সবাই ইচ্ছামতো নিত। আমরা এই তিনটা টেস্টের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছি। এর বেশি কেউ নিতে পারবে না। এই সিদ্ধান্ত সবার তো মানা উচিত ছিল, কারণ তারা এখানে ছিল। আর তারা এই সিদ্ধান্ত মেনেই গিয়েছে।’

কিন্তু সিদ্ধান্ত তো মানছে না, এখন রোগীর স্বার্থ রক্ষায় আপনারা কী ব্যবস্থা নেবেন- এই প্রশ্ন করতেই ব্যস্ততার কথা বলে ফোন কেটে দেন এই সরকারি কর্মকর্তা।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আফরোজা রহমান বলেছেন, সরকারের এই নির্দেশ অমান্য করলে তারা ব্যবস্থা নেবেন। গতকাল রাতে ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘আমরা আগামীকালই (আজ) বের হব। যারা সরকার নির্ধারিত মূল্য মানছে না, আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেব।’

ঢাকাটাইমস/২৯জুলাই/এসআর/এনআই/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :