ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি
কেউ মানছে, কেউ মানছে না
মাহবুবা খানম। ঢাকার ধানমন্ডি এলাকার বাসিন্দা। রবিবার মিরপুর রোডের আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গুর শনাক্তের এনএসওয়ান ও সিবিসি পরীক্ষা করান। তার কাছ থেকে দুটি পরীক্ষায় রাখা হয় যথাক্রমে ১৯২৫ ও ৫৯০ টাকা।
মাহবুবা যখন হাসপাতালে পরীক্ষা করান তখন বিকাল প্রায় পাঁচটা। অথচ দুপুরের দিকেই সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সব বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গুর এনএসওয়ান পরীক্ষা করতে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা নেওয়া যাবে। আর সিবিসি পরীক্ষার জন্য নেওয়া যাবে সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা।
হাসপাতাল থেকে পরীক্ষা শেষ করে বাসায় ফেরার পর মাহবুবা ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি বেঁধে দিয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত জানতে পারেন। আর পরদিন হাসপাতাল যান বাড়তি হিসেবে নেয়া টাকা তুলে ফেরত নিতে।
তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নারাজ। সোমবার দুপুরের দিকে আনোয়ার খান মডার্নে এসে বাড়তি হিসেবে নেয়া টাকা ফেরত চাইলে কাউন্টার থেকে বলা হয়, সরকার রাত ১০টা থেকে এই নিয়ম কার্যকর করেছে। তার কাছ থেকে কোনো বাড়তি টাকা রাখা হয়নি।
সরকারের সিদ্ধান্ত কখন থেকে কার্যকরের ঘোষণা আসে সেটা আবার নিশ্চিত হন মাহবুবা। এরপর তিনি দ্বিতীয়বার টাকা ফেরত চাইতে হাসপাতালে গেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে জানান, সন্ধ্যা ৭টার দিকে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা আসে। তিনি টাকা পাচ্ছেন না।
মাহবুবা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমি সব জেনেশুনে হাসপাতালে গিয়েছি টাকা ফেরত নিতে, একবার নয়, দুই বার। কিন্তু তারা আমাকে উল্টাপাল্টা বুঝিয়ে দেয়। যেহেতু সরকার আমার পরীক্ষা করার আগে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তাদের অবশ্যই আমার টাকা ফেরত দিতে হবে। না হলে আমি আইনি ব্যবস্থা নেব।’
ডেঙ্গু জ্বরের বিস্তারের মধ্যে রাজধানীর বেসরকারি হাসপাতাল ও রোগ পরীক্ষাকেন্দ্রে ইচ্ছামতো ফি আদায়ে অভিযোগ পায় সরকার। আর এই লাগাম টানার উদ্দেশ্যে গত রবিবার ডেঙ্গু শনাক্তের পরীক্ষায় সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। সর্বোচ্চ কত টাকা নেয়া যাবে, তাও ঠিক করে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে আর বেসরকারি চিকিৎসালয়ে এনএসওয়ান, আইজিজি ও আইজিএম পরীক্ষার মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৫০০ টাকা। সিবিসি পরীক্ষার মূল্য হবে ৪০০ টাকা।
সরকারের এই সিদ্ধান্ত আসার পর গতকাল সব কয়টি বেসকারি হাসপাতাল এমনকি সরকারি হাসপাতালে আগের নিয়মে পরীক্ষা ফি নেওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোর একটাই অযুহাত, তারা নির্দেশনার কথা জানে না।
দ্বিতীয় দিনেও বেশ কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, ডেঙ্গু পরীক্ষায় এখনো বাড়তি ফি নিচ্ছে হাসপাতালগুলো। এদেরই একটি আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। সেখানে এনএসওয়ান, আইজিজি ও আইজিএম এবং সিবিসি-তিনটি পরীক্ষার জন্য নেয়া হচ্ছিল দুই হাজার টাকা নিচ্ছেন। অর্থাৎ সরকারের নির্ধারিত ফির চেয়ে ৬০০ টাকা বেশি নিচ্ছে হাসপাতালটি।
একই অবস্থা গ্রিন রোডের গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেরও। তারাও তিনটি পরীক্ষায় দুই হাজার টাকা নিচ্ছে।
মিরপুর রোডের পাশেই অবস্থিত গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে আইজিজি ও আইজিএমের জন্য ৮০০ এবং সিবিসির জন্য রোগীদের জন্য নেওয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা। অর্থাৎ প্রথম পরীক্ষায় বাড়তি ৩০০ এবং দ্বিতীয়টিতে ১০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।
সেখান থেকে ল্যাব এইড হাসপাতালে গিয়ে জানা যায়, হাসপাতালটি তিনটি পরীক্ষায় এক হাজার ৪৮০ টাকা নিচ্ছেন। অর্থাৎ বাড়তি ৮০ টাকা নিচ্ছে হাসপাতালটি। তারপাশেই সেন্ট্রাল হাসপাতালে আইজিজি ও আইজিএমের এবং সিবিসির জন্য মোট ৯৪০ টাকা নিতে দেখা যায়। অর্থাৎ এই হাসপাতালটি ৪০ টাকা বাড়তি নিচ্ছে।
তবে কয়েকটি হাসপাতাল আবার সরকারের বেঁধে দেওয়া ফিই রাখছে। এগুলো হলো বিআরবি, স্কয়ার ও সমরিতা। এর মধ্যে স্কয়ার সম্প্র্রতি এক রোগীর কাছে থেকে ২২ ঘণ্টায় এক লাখ ৮২ হাজার টাকা বিল করে তুমুল সমালোচিত হয়েছে।
ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্তে সব ধরনের পরীক্ষায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী নেওয়া হচ্ছে কি না, তা তদারক করতে ১০টি দল গঠন করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
জানতে চাইলে অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার পরিচালক আমিনুল হাসান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা জেনেছি কয়েকটি হাসপাতাল সকারের নির্ধারিত ফির চেয়ে বেশি নিচ্ছে। যারা বেশি নিচ্ছে, সেসব হাসপাতালের নাম আমরা মোবাইলকোর্ট পরিচালনার পাশাপাশি হাইকোর্টের কাছেও তাদের নাম জমা দিচ্ছি। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণও ঢাকা টাইমসকে জানিয়েছিল বাড়তি ফি আদায় করা হচ্ছে কিনা সেটার তদারক করবে সংস্থাটি। জানতে চাইলে সংস্থাটির ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আফরোজা রহমান বলেন, ‘আমরা আজ সাতটা হাসপাতাল ভিজিট করেছি। এদের মধ্যে পপুলারকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছি, কারণ তারা সরকারের সিদ্ধান্ত যেটা, সেটার চেয়ে বেশি বিল রেখে বাড়তি টাকাটা ডিসকাউন্ট বলে চালাচ্ছে। সরকারের সিদ্ধান্তের পরও যারা বাড়তি নিয়েছে তাদের মধ্যে স্কয়ারের শুনানি হয়েছে, কাল (আজ) ল্যাবএইডের হবে।’
ঢাকাটাইমস/৩০জুলাই/এনআই/এমআর