স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও দুই মেয়রের পদত্যাগ চায় বিএনপি

প্রকাশ | ৩০ জুলাই ২০১৯, ০৯:৩০

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

দেশজুড়ে আতঙ্কের নাম ডেঙ্গু। ডেঙ্গু মশার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছেন দাবি করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম ও দক্ষিণ সিটির মেয়র সাঈদ খোকনের পদত্যাগ দাবি করেছে বিএনপি।

সোমবার রাতে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ফখরুল বলেন, ‘মশানিধনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও দুই সিটি মেয়র সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। এই ব্যর্থতার দায়ে আমরা এই তিনজনের পদত্যাগ দাবি করছি।’

প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা গেলেও এবার তা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। চলতি বছরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। সরকারি হিসাবে আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে শয্যা পেতেই হিমশিম খাচ্ছে রোগীরা। আর প্রায় প্রতিদিনই আসছে মৃত্যুর খবর। আর উদ্বিগ্ন হচ্ছে মানুষ।

রাজধানীর পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা শহরেও শনাক্ত হচ্ছে রোগীরা। অবশ্য তাদের সিংহভাগই ঢাকা থেকে যাওয়া। এই পরিস্থিতিতে মশা নিধনে ব্যর্থতার জন্য ঢাকার দুই মেয়র সাঈদ খোকন ও আতিকুল ইসলাম তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন। তার মধ্যে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকনের সাম্প্রতিক এক উক্তিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার এক আলোচনায় ঢাকা দক্ষিণের মেয়র বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে ‘ছেলেধরা’র মতো গুজব ছড়ানো হচ্ছে।’ একইদিন অন্য একটি আলোচনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন বলেন, ‘ডেঙ্গু মশার প্রজনন রোহিঙ্গাদের মতো, তাই এটি প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না।’

ফখরুল বলেন, ‘সিটি করপোরেশনগুলো মশানিধনে ব্যর্থ হয়েছে। অনেক আগেই আইসিডিডিআরবি অনেক আগেই সর্তকবার্তা দিয়ে বলেছিল, সিটি করপোরেশনগুলো মশানিধনে যে ওষুধ ব্যবহার করে, সেগুলো কার্যকরী নয়। সেগুলোকে পরিবর্তন করে কার্যকরী ওষুধ আনার কথা বলেছিল। কিন্তু দুই মেয়র এটায় গুরুত্ব না দিয়ে ইতোমধ্যে তারা ৫০ কোটি টাকার ওষুধ ব্যবহার করেছে। আমি কোনও দিন আমার এলাকায় মশানিধনের কোনও কার্যক্রম দেখিনি।’

রংপুর-৩ আসনের উপ-নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তবে এই আসনের প্রার্থী ঠিক করার জন্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’

বন্যার কারণে কৃষকের খাতের আমন ধান নষ্ট হয়েছে বলে দাবি করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি কৃষক ধান লাগাতে গিয়ে ঋণ নিয়েছে, তা সম্পন্ন মওকুফ করার। আমরা মনে করি, এটাই এখন সব চেয়ে জরুরি। একইসঙ্গে কৃষকরা যে সব এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছে, তাদের সরকারের পক্ষ থেকে যথোপযুক্ত সহায়তা করার দাবি জানাচ্ছি। যেন তারা কৃষককে ছাড় দিতে পারে।’

ডেঙ্গু জ্বর ও বন্যা পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে সচেতনতামূলক লিফট বিতরণ করা হবে বলেও জানান মির্জা ফখরুল। বলেন, ‘ডেঙ্গু নিয়ে ডাক্তারদের সংগঠন ড্যাব সচেতনতামূলক লিফট বিতরণ করবে। আর অঙ্গ-সংগঠন বন্যার লিফলেট বিতরণ করবে।’

খালেদ জিয়ার মুক্তি ও পুনঃনির্বাচনের দাবিতে বিভাগীয় শহরগুলো চলমান সমাবেশ স্থগিত করা হয়েছে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতি কারণে সমাবেশ স্থগিত করা হয়েছে। বন্যার পরে আবার সমাবেশগুলোর তারিখ ঘোষণা করা হবে।

নির্বাচন কমিশন সব নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করার দ্রুত চেষ্টা চালাচ্ছে বলে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে আমাদের দলের অবস্থান আগের মতো রয়েছে। নির্বাচনে আমরা ইভিএম ব্যবহার সমর্থন করি না। কারণ এই পদ্ধতিতে মানুষের অভিমতের সঠিক মূল্যায়ন করা হয় না।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ডা. মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

(ঢাকাটাইমস/৩০ জুলাই/বিইউ/এমআর)