‘ভিআইপি বলে তো আর অমানবিক হওয়া যাবে না’

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ৩০ জুলাই ২০১৯, ১২:২৭
ফেরি আটকে রাখায় মারা যাওয়া তিতাস ঘোষ

সরকারের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার জন্য ফেরি অপেক্ষা করিয়ে রাখার পর অ্যাম্বুলেন্সে থাকা কিশোরের মৃত্যুতে তোলপাড়। প্রশ্ন উঠেছে ‘ভিআইপি’ কারা। কাদের জন্য সড়ক বা ফেরির আটকে রাখা যাবে।

যে কর্মকর্তার জন্য ফেরিটি আটকে রাখা হয়, তিনি একজন যুগ্মসচিব। নাম আবদুস সবুর মণ্ডল। কাজ করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পে।

বৃহস্পতিবার মাদারীপুরের কাঁঠালিয়া ঘাটে তিন ঘণ্টা ফেরি আটকে রাখা হয় এই যুগ্মসচিব নদী পার হবেন বলে। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা কিশোর তিতাস ঘোষ একটি অ্যাম্বুলেন্সে ছিলেন ঢাকার পথে। তার স্বজনরা অ্যাম্বুলেন্সটির জন্য ফেরি ছাড়তে অনুনয় বিনয় করেন, পায়ে পর্যন্ত ধরেন। কিন্তু মন গলেনি কারো।

সরকারের সাবেক আমলারা বলছেন, সরকারি উচ্চ পদে কাজ করছে কিছু সম্মান পাওয়া যায়। সরকারি অনুষ্ঠানে তাদের জন্য আসন বরাদ্দ থাকে। কিন্তু এই ‘ভিআইপি’ প্রটোকলের নামে অমানবিক হওয়া যাবে না। সাধারণ জনগণের অসুবিধা করে এই ধরনের সুবিধা নেয়া অযৌক্তিক।

অন্যদিকে যে কর্মকর্তার নাম এসেছে, তিনি বলছেন, ফেরি পারাপারের জন্য যে অ্যাম্বুলেন্সে গুরুতর রোগী আছে সেটি তিনি জানতেন না। জানলে এমন অনাকাঙিক্ষত ঘটনা ঘটত না।

রাষ্ট্রের মর্যাদাক্রম বা ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্সে কারা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বা ভিআইপি হিসেবে কতটুকু সুবিধা পাবেন তা বলা আছে। রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে যুগ্মসচিব পর্যন্ত আমন্ত্রণ পেয়ে থাকেন। তবে এর বাইরে কোথাও কোনো ধরনের সুবিধা কোনো কর্মকর্তা পাবেন কি না সেটাও রাষ্ট্র নির্ধারণ করে থাকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য আখতার হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘একটা মানুষের জীবনের থেকে তো প্রটোকল বড় নয়।’

ফেরিতে গুরুতর আহত রোগী থাকার বিষয়টি ওই যুগ্মসচিব এবং সংশ্লিষ্ট জেলা মাদারীপুরের জেলা প্রশাসকের জানা ছিল না- এমনটা মানতে নারাজ এই অধ্যাপক। বলেন, ‘এখানে ঘাট কর্তৃপক্ষেরও ব্যর্থতা আছে। কর্মকর্তাদেরও ব্যর্থতা আছে। তদন্ত করে যারা দায়ী তাদের শাস্তি হওয়া দিতে হবে।’

‘শুধু ফেরি ঘাটেই নয় অনেক জায়গায় এমনটা ঘটনা ঘটে। আর শুধু সরকারি কর্মকর্তারাই নয়, রাজনৈতিক নেতারাও ভিআইপি হিসেবে চলেন। এটা পুরোপুরি উঠিয়ে দিতে হবে। তবে অবশ্যই সেটা রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য নয়।’

‘প্রয়োজনে ঘাটে তালিকা দিয়ে দিতে হবে কারা গুরুত্বপূর্ণ, কাদের সেফটি, সিকিউরিটির স্বার্থে একটু বাড়তি সুবিধা পাবেন। তবে সবকিছু করার আগে মানুষের জীবনের কথা চিন্তা করতে হবে।’

সাবেক নৌসচিব শফিক আলম মেহেদী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘যে বিষয়টি হয়েছে এটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। তবে রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হলেও তারা মানুষ। সরকারি কর্মকর্তারা আসলেই জনগণের সেবক। তবে যাদের জন্য ফেরি বিলম্ব হয়েছে বলা হয়েছে। আমার বিশ্বাস গুরুতর অসুস্থ রোগীর বিষয়টি তারা জানলে এমনটা ঘটত না। এখানে হয়ত তথ্য আদান প্রদানের কোনো ঘাটতি ছিল।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারের এক সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ভিআইপি বিষয়টি নিয়ে যে আলোচনা হচ্ছে এটা বিব্রতকর। তবে অনেকে অনেকভাবে হয়ত সুযোগ নেয়। কিন্তু রাষ্ট্রীয় আচার অনুষ্ঠানে যুগ্মসচিব পর্যন্ত আমন্ত্রণ জানানো হয়ে থাকে। সে হিসেবে ভিআইপি বলেন আর যেভাবেই বলেন। ব্যক্তিগত কাজ বা অন্য কোনো কিছুতে এটা প্রযোজ্য হওয়ার কথা নয়।’

সেদিনের ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মাদারীপুরের ওপর দিয়ে ২১ জেলার মানুষ চলাচল করে। যে কারণে হয়ত অনেকে সহায়তা চান। গত দুই বছর ধরে আমি এখানে কর্মরত। কেউ হেল্প চাইলে ঘাট কর্তৃপক্ষকে সাধারণত হেল্প করার জন্য বলা হয়। কিন্তু সেখানে ভিআইপি বা আলাদা করে প্রটোকল দিয়ে ফেরিতে নেয়ার কথা কখনো বলিনি। আর যখন অ্যাম্বুলেন্স বা অন্য কোনো ধরনের জরুরি বিষয় থাকে তখন তো ভিআইপি বা অনুরোধের সুযোগই নেই। কারণ আগে মানুষের জীবন।’

সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘যুগ্মসচিব স্যার যখন আমাকে ফোন করেন তখন বেলা সাড়ে ১২টা ২৭ মিনিট। তখন আমরা মিটিংয়ে ছিলাম। তখন আমার পাশে থাকা ঘাটের ব্যবস্থাপক সালাম হোসেনের সঙ্গে কথা বলার ব্যবস্থা করে দেই। তারা দুজন ফোন নম্বর আদান-প্রদান করেন। পরে তিনি ফেরিতে উঠেন সাড়ে দশটার পরে।’

‘এর মধ্যে কী হয়েছে না হয়েছে আমার জানা নেই। সিনিয়র কর্মকর্তা হিসেবে তাকে হেল্প করতে বলেছি। বিশেষ নজর দিতেও বলেনি। আর ফেরিতে অ্যাম্বুলেন্সবাহী রোগীর বিষয়টিও অবগত ছিলাম না।’

এদিকে তিতাসের মৃত্যুর বিষয়ে যুগ্মসচিব আবদুস সবুর মণ্ডল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এ বিষয়টি নিয়ে আমি বিব্রত এবং একই সঙ্গে হতবাক। আমি যে কী পরিমাণ অস্বস্তির মধ্যে আছি, তা বলে বোঝাতে পারব না। আমি ফেরি আটকে রাখতে বলিনি। আমি শুধু বলেছি আমি যাব-একটা ব্যবস্থা করতে। আমার কাছে কোনো সিদ্ধান্তও জানতে চাওয়া হয়নি।’

সরকারের সাবেক যোগাযোগ সচিব এ এস এম আলী কবীর ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ভিআইপি আইনটি কী, সেটা জনগণের কল্যাণে না অকল্যাণে ব্যয় করছেন সেটা বিষয়। কিন্তু ভিআইপি বলে তো কোনো বিষয় অমানবিক হওয়া যাবে না।’

ঢাকাটাইমস/৩০জুলাই/বিইউ/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

কথায় কথায় মানুষ পেটানো এডিসি হারুন কোথায়? থানায় ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরের তদন্ত কোথায় আটকে গেল?

মজুত ফুরালেই বাড়তি দামে বিক্রি হবে সয়াবিন তেল

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে ইরান-ইসরায়েল সংকট

ছাদ থেকে পড়ে ডিবি কর্মকর্তার গৃহকর্মীর মৃত্যু: প্রতিবেদনে আদালতকে যা জানাল পুলিশ

উইমেন্স ওয়ার্ল্ড: স্পর্শকাতর ভিডিও পর্নোগ্রাফিতে গেছে কি না খুঁজছে পুলিশ

জাবির হলে স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে জঙ্গলে ধর্ষণ, কোথায় আটকে আছে তদন্ত?

নাথান বমের স্ত্রী কোথায়

চালের বস্তায় জাত-দাম লিখতে গড়িমসি

গুলিস্তান আন্ডারপাসে অপরিকল্পিত পাতাল মার্কেট অতি অগ্নিঝুঁকিতে 

সিদ্ধেশ্বরীতে ব্যাংক কর্মকর্তার মৃত্যু: তিন মাস পেরিয়ে গেলেও অন্ধকারে পুলিশ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :