আগামী বছর শতভাগ চালু হবে সাভার চামড়া শিল্পনগরী: শিল্প সচিব

প্রকাশ | ৩১ জুলাই ২০১৯, ১৭:২২

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস

আগামী ২০২০ সালের জুনের মধ্যে সাভারের চামড়া শিল্পনগরী শতভাগ চালু হবে বলে জানিয়েছেন শিল্প সচিব মো. আবদুল হালিম। তিনি বলেছেন, চামড়া শিল্পনগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের কার্যক্রম ইতোমধ্যে শেষে হয়েছে। কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি), ডাম্পিং সহ বেশি কিছু কাজ শেষের পর্যায়ে। এগুলো সম্পূর্ন করতে আরো এক বছর সময় প্রয়োজন হবে। তবে প্রকেল্পর সার্বিক অগ্রগতি প্রায় ৭৪ শতাংশ। 

বুধবার সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে চামড়া শিল্পনগরি এর সর্বশেষ অবস্থা ও লবন মজুদ পরিস্থিতি নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় শিল্পসচিব এসব কথা বলেন। এসময় শিল্পমন্ত্রানলয়, সাভার চামড়া শিল্পনগরি ও বিসিকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

শিল্প সচিব মো. আবদুল হালিম বলেছেন, কোরবানি ঈদের সময় দেশে সবচেয়ে বেশি চামড়া সংগৃহিত হয়ে থাকে। তবে সে চামড়া প্রক্রিয়াকরনের ক্ষেত্রে সাভারের চামড়া শিল্পনগরি প্রস্তুত আছে। মূলত ঈদের পরপরই চামড়া শিল্পনগরীতে চামড়া আসে না। বরং সংগৃহিত চামড়া শিল্পনগরীতে আসতে প্রায় এক থেকে দেড় মাস সময় লেগে যায়। তিনি বলেন, সিইটিপি পুরোদমে চালু না হওয়ায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। মূলত এ বিষয়ে আমাদের আগের কোন অভিজ্ঞতা না থাকায় প্রথম দিকে বেশি জটিলতা হয়েছে। বর্তমানে আমরা বিশে^র বিভিন্ন দেশের সিইটিপি নির্মাণ ও কার্যক্রম সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। এর পরিপ্রেক্ষিতে সাভারের চামড়া শিল্পনগরিতে যে সিইটিপি তৈরি করা হয়েছে তা আন্তর্জাতিক মানের। ট্যানারীর বর্জ্য ডাম্পিং নিয়ে কিছুটা সমস্যা আছে। এজন্য একটি প্রকল্পও হাতে নেয়া হয়েছে। ট্যানারীর বর্জ্যগুলোকে পরিবেশ সম্মত করতে যে সব যন্ত্রাংশ প্রয়োজন হবে সেগুলোর আমদানি করা হয়েছে, যা চট্টগ্রাম পোর্টে আছে। আশা করা যায় শিগগিরই সেগুলো ছাড়িয়ে সাভারে নিয়ে আসা হবে। তখন বর্জ্য ডাম্পিং নিয়েও প্রশ্ন উঠবে না।

তিনি বলেন, বর্তমানে চামড়া রপ্তানি অনেকাংশেই কমে গেছে। আগামীতে সেটি হবে না। আমাদের রপ্তানির বাণিজ্যের তৈরি পোশাকের পরই চামড়া শিল্পের অবস্থান। বাংলাদেশে এর কাঁচামাল থাকায় শতকরা ৬০ ভাগ মূল্য সংযোজনের সুযোগ রয়েছে। তাই আগামী ২০২১ সাল নাগাদ এ শিল্প থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি হবে বলে আশা করা যায়। বর্তমানে বিশ^ বাজারে চামড়া ও চামড়াজাত পন্যের ২২০ বিলিয়ন ডলারের বাজার রয়েছে। আমরা এ খাতের মাত্র ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করছি।

শিল্প সচিব তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, ২০০৩ সালে এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৭৫ কোটি টাকা। তবে বর্তমানে এর মোট প্রাক্কলিত ব্যয় এসে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এরমধ্যে ট্যানারী স্থানান্তরের অনুদান হিসাবে দেয়া হয়েছে ২৬০ কোটি টাকা, যার ২৩০ কোটি টাকা ইতোমধ্যে ট্যানারী মালিকদের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সিইটিপি, ডাম্পিং ইয়ার্ড, এসটিপি ও এসপিজিএস এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০৫ কােটি ৬৫ লাখ টাকা। অন্যান্য উন্নয়ন ও রাজস্ব ব্যয় ধরা হয়েছে ২১৩ কোটি ৩ লাখ টাকা। এ হিসাবে ৩০ জুন ২০১৯ পর্যন্ত প্রকল্পের ব্যয় হয়েছে ৭৯২ কোটি ১০ লাখ টাকা।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৯৪ দশমিক ৪০ একর জায়গার উপর নির্মিত সাভারের চামড়া শিল্পনগরিতে ১৫৫টি শিল্প ইউনিট আছে। এরমধ্যে ১৫৪টি প্লট বরাদ্দ করা হয়েছে। মামলা জনিত কারণে ১টি প্লট বরাদ্দপত্র জারি করা হয়নি। লে-আউট প্লান অনুমোদন করা হয়েছে ১৫৪টির। কারখানার মূল ভবনের কাজ বাস্তবায়ন শুরু করেছে ১৫১টি প্লটে।

মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, আসন্ন কোরবানির ঈদের চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে যে পরিমাণ লবন প্রয়োজন হবে তা মজুদ আছে। লবনের দাম বৃদ্ধির কোন সম্ভাবনা নেই। বছরে লবনের প্রয়োজন হয় ১৮ লাখ টন। এরমধ্যে শুধু কোরবানি চামড়া প্রক্রিয়াকরনে প্রয়োজন হয় প্রায় ৮২ হাজার টন। বর্তমানে লবন মজুদ আছে ৯ লাখ টন। আর দেশে লবনের উৎপাদন ভাল হওয়ায় চামড়া প্রক্রিয়াকরনের ঘাটতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। 

ঢাকা টাইমস/ ৩১ জুলাই/ আরএ