বেসিক ব্যাংকের লোকসানি শাখা বন্ধের ঘোষণা অর্থমন্ত্রীর

প্রকাশ | ০১ আগস্ট ২০১৯, ২১:২৯

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
  • ৩৬টি শাখা লোকসানে
  • বেসিক ব্যাংকে স্পেশাল অডিট হবে
  • দুর্নীতিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
  • ছাড় পাবে না বেনামে ঋণগ্রহীতারা
  • ঋণ আদায় সহজ হবে কিন্তু মাফ হবে না
  • ব্যাংকের সম্মাননা ক্রেস্ট নিলেন না অর্থমন্ত্রী

বেসিক ব্যাংকের যেসব শাখা টানা তিন বছর লোকসান করেছে বা কোন লাভ দিতে পারেনি সেসব শাখাগুলোকে বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বৃহস্পতিবার বেসিক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এক আলোচনা সভা শেষে এসব কথা জানান তিনি। সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম প্রমুখ।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত অনেক দুর্নীতি হয়েছে। সে সময়ে নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে যেসব ব্যাংক কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে এবং বেনামে ঋণ দেওয়া হয়েছে সেসব শাখাগুলো এখন আর লাভ করতে পারছে না। ওইসব শাখাগুলোর মধ্যে যেগুলো গত দুই বছর এবং বর্তমান বছরে লাভ দেখাতে ব্যর্থ হবে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে। যারা দুই বছর ধরে লোকসানে আছেন তারা এই বছর সতর্ক হয়ে যান বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম প্রমুখ।

বর্তমানে ব্যাংকটির মোট লোকসানের পরিমাণ তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা। ২০১৮ সালেও ব্যাংকটি লোকসান করেছে ৩৫৬ কোটি টাকা। ব্যাংকটির ৩৬টি শাখা লোকসানে আছে এখন।

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘যারা বেনামে ঋণ নিয়েছে টাকা ফেরত না দেয়ার জন্য, তাদের ছাড় দেয়া হবে না। তাদের পেছনে আমরা এজেন্সির লোক নিয়োগ দেব। দেশ-বিদেশে যেখানেই থাকুক তাদের বের করা হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। আমরা ঋণ আদায় সহজ করে দেব কিন্তু ঋণ মাফ করতে পারব না।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, বেসিক ব্যাংকে স্পেশাল অডিট করা হবে। অনিয়ম দুর্নীতির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কম হলেও শাস্তি দেয়া হবে। সময় খারাপ হবে, আপানাদের সিদ্ধান্তও তত কঠিন হবে। একটি ব্যাংক দীর্ঘদিন খারাপ অবস্থায় থাকতে পারে না। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের সিদ্ধান্ত আপনাদেরকেই নিতে হবে।

অনুষ্ঠানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ব্যাংক ইচ্ছা করলে খেলাপি ঋণ আদায় করতে পারে। ঋণ আদায়ে শক্ত হতে হবে। বর্তমানে দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্টে সরকার পুনঃতফসিলের সুযোগ দেয়া হয়েছে। এটি গ্রহণ করে কেউ যদি আসে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন। এতো দুর্নাম নিয়ে একটি প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম বলেন, বেসিক ব্যাংক থেকে প্রচুর সম্পদ চলে গেছে। এটা জনগণের সম্পদ, এটা আমরা অ্যালাও করবো না। এ অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে।                      

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফজলুল হক বলেন, ২০০৯ সালে ৭০০শ জন জনবল দিয়ে ৭২টি শাখার কার্যক্রম চললেও এখন দুই হাজারের বেশি কর্মকর্তা।  অন্যান্য ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মত বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দক্ষ ও উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে। আইসিটিতে দক্ষতা বাড়াতে হবে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন এ মাজিদ বলেন, বেসিক ব্যাংকে বেশ কিছু ঋণের অনিয়ম হয়েছিল। আমরা অনিয়মগুলো চিহ্নিত করে ঋণ আদায় ও পুনঃতফসিল করি। কিন্ত দেখা গেছে পুনঃতফসিল করা ঋণও আবার খেলাপি হয়ে যাচ্ছে। এখন নন পারফরমেন্স লোন ৫৯ শতাংশে এসেছে। পূর্বে যা ছিল ৬৭ শতাংশ। এ অবস্থায় আমাদের মূলধন সহায়তা প্রয়োজন। তা পেলে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।

অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রীকে ব্যাংকটির পক্ষ থেকে সম্মানসূচক ক্রেস্ট দিতে চাইলে; তা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এখন ক্রেস্ট নেব না। এক বছরে যদি বেসিক ব্যাংক ভালো করতে পারে তাহলে ক্রেস্ট নেব। আপনারা ভালো করেন আগামীতে আপনাদের সঙ্গে আমরা পিকনিক করব।’

এ সময় অর্থমন্ত্রীর পাশাপাশি অনুষ্ঠানে থাকা অন্য অতিথিরাও ক্রেস্ট গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান।

(ঢাকাটাইমস/আরএ/ডিএম)