‘সাউথ ইস্টের কোনো ছাত্র বেকার বলে শুনিনি’

নজরুল ইসলাম, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০২ আগস্ট ২০১৯, ০৯:৩৬
অধ্যাপক ড. এ এন এম মেশকাত উদ্দীন

সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের দ্বিতীয় প্রজন্মের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি। ২০০২ সালে মাত্র ১০৭ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু করা বিশ্ববিদ্যালটির বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১২ হাজারেও বেশি। প্রায় দেড় যুগ হতে চলা প্রতিষ্ঠানটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সেরাদের একটি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যায়টির উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক ড. এ এন এম মেশকাত উদ্দীন। দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থেকে অবদান রেখে যাচ্ছেন তিনি। সম্প্রতি তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির বিশেষত্ব ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন দৈনিক ঢাকাটাইমসের সঙ্গে।

সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির শুরুটা কেমন ছিল?

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯২ সালে। আর সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুটা ছিল ২০০২ সালে। এখন প্রশ্ন আসতে পারে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থাকার পরও কেন এটা প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন হলো? কারণ প্রথম সারির যেসব বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে তাদের খরচ কিন্তু অনেক বেশি। সেই দিক থেকে এখনাকার মালিকপক্ষ বা বোর্ড অব ট্রাস্টির সদস্যরা চিন্তা করলেন এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয় হবে যেখানে কম খরচে শিক্ষার্থীরা মানসম্মত শিক্ষা পাবে। এই কারণে সাউথইস্ট চিন্তা করল এত বেশি টাকা দেওয়া সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব না। তাই সবার জন্য কম খরচে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্যই সাউথইস্টের যাত্রা।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সাউথইস্ট কেন আলাদা বা এর বিশেষত্ব কী?

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্যই হচ্ছে উচ্চশিক্ষার জন্য সুযোগ বঞ্চিত, মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে সমাজের সব ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করা। তাছাড়া অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যেগুলোতে বাংলা, ইংরেজি বা অর্থনীতির মতো বিষয় পড়ানো হয় না। কারণ এসব বিষয় ব্যবসায়িকভাবে অলাভজনক। কিন্তু সাউথইস্ট এই চিন্তা করেনি, চিন্তা করেছে এখানে সব জ্ঞানভাণ্ডারগুলো এক জায়গায় থাকবে।

আমাদের আরেকটা বিশেষ বিশেষত্ব হচ্ছে বিশ্বমানের অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ভারত ও চায়নাসহ নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে এমওইউ করা। যেটার জন্য চায়নার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫জন শিক্ষার্থী আমাদের এখান থেকে বাংলা সাহিত্যে পড়াশোনা করে দেশে ফিরে গেছে। সামনের সেমিস্টারে আরও ১৬ জনের মত এখানে বাংলা পড়তে আসবে। আর এসব সম্ভব হয়েছে এমওইউর কারণে।

সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীরা কী ধরনের সুবিধা পাচ্ছে?

সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ পলিসি চালু রয়েছে। ‘পিপলস পার্সোনাল এক্সিডেন্ট ইন্স্যুরেন্স পলিসি’ নামের এই পলিসির আওতায় শিক্ষার্থীরা যে কোনো দুর্ঘটনার শিকার হলে আর্থিক সহায়তা পায় যেটার মাধ্যমে নির্বিঘ্নে তাদের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারে। এ ছাড়াও সার্বক্ষণিক সাস্থ্য পরীক্ষার জন্য রয়েছেন ফুলটাইম চিকিৎসক। তাছাড়া মেধাবি ও গরিব শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাবৃত্তি। এ ছাড়াও শিক্ষার্থীদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের কোর্স কারিকুলাম, গবেষণার জন্য রয়েছে ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং, উন্নত মানের ল্যাব, লাইব্রেরি ও ১৫টি ক্লাবের অধীনে ইনডোর গেম, আউটডোর গেম।

গবেষণাকে সাউথইস্ট কতটুকু গুরুত্ব দেয়?

কিছুদিন আগে বেসকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে একটা র‌্যাংঙ্কিং হয়েছে। সেখানে আমরা সংখ্যা দিক থেকে তৃতীয় আর ১০৪টা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে গবেষণায় পঞ্চম। প্রতি বছর আমরা গবেষণার জন্য দুই কোটি টাকা দিয়ে থাকি। এখানে সবচেয়ে বেশি গবেষণা হয় ফার্মেসি বিভাগে। সিএসই বিভাগের জন্য অত্যাধুনিক টেলিকমিউনিকেশন ল্যাব, ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের জন্য এনালগ ও ডিজিটাল ইলেক্ট্রনিক্স ল্যাব, মেশিন ল্যাব, পাওয়ার সিস্টেম ল্যাব, টেলিকমিউনিকেশন ও মাইক্রোওয়েভ ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাব, ফার্মেসির জন্য ছয়টি ল্যাব, মাইক্রোবাইয়োলজি ল্যাব, টেক্সটাইল বিভিাগের জন্য টেক্সটাইল ল্যাব, নিটিং ল্যাব, ডাইং ল্যাব, ওভেন ল্যাব, এক্স-রাইট স্পেকট্রোফটোমিটারসহ প্রয়োজনীয় সকল সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে।

উপাচার্য হিসেবে কোন বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছেন?

উপাচার্য হিসেবে সবচেয়ে বেশি গুরত্ব দেই গবেষণাকে। এর বাহিরে যেটা দেখি, শিক্ষার্থীদের কিসে সুবিধা হবে। এ ছাড়া শিক্ষকদের মানের বিষয়টা বেশ গুরত্ব দেওয়ার চেষ্টা করছি। শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে লেকচারও পিএইচডি হোল্ডার কিনা সেটা দেখে নেই। কারণ শিক্ষকের মান ভালো হলে তো শিক্ষার্থীরা ভালো করবে।

তেজগাঁওয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে পুরোপুরি শিফট করবেন কবে?

আমরা স্থায়ী ক্যাম্পাসে এ বছরের শেষ নাগাদ অথবা আগামী বছরের শুরুতে আমরা চলে যাব। ইতিমধ্যে ছয় তলা হয়ে গেছে। আরও চার তলার কাজ খুব দ্রুত হয়ে যাবে। তখন আমরা পুরোপুরি চলে যাব। তখন আমরা প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থীকে সেখানে জায়গা দিতে পারব।

নতুন করে বিভাগ খোলার পরিকল্পনা আছে কী?

আরও কিছু বিষয় খোলার জন্য অনুমোদন দিয়ে রেখেছি। স্থায়ী ক্যাম্পাসে না গেলে অনুমতি দিচ্ছে না। আমরা যুগপোযোগী কিছু বিষয় নিয়ে আসব।

গুণগত দিক থেকে সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান কেমন?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তুলনা করলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় একেবারে নবীণ। তুলনামূলক যারা ভালো শিক্ষার্থী তারা চেষ্টা করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে। যারা একেবারে চান্স না পায় তখন তারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চেষ্টা করে। তারপর আবার তারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র‌্যাংঙ্কিং এক, দুই বা তিনকে বেছে নেয়।

আমি একেবারে খারাপ বলব না তুলনামূলকভাবে দুর্বল যারা তারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করে। আর এদেরই ঘষেমেজে বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য প্রস্তুত করতে হয়। সেই জায়গা থেকে আমি বলব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনেক এগিয়েছে। এখান থেকে পড়ে শিক্ষার্থীরা পাবলিক পড়ুয়াদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে জব সেক্টরে কাজ করছে। এগিয়েছে বলেই আরও নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় আসছে।

কর্মক্ষেত্রে সাউথইস্টের শিক্ষার্থীরা কেমন করছে?

সাউথইস্টের শিক্ষার্থীরা আমার জানা মতে কেউ বেকার নেই। যারাই বের হচ্ছে হয়ত কেউ সরকারি চাকরি করছে, কেউবা বেসরকারি। আবার অনেকে দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষার জন্য চলে যাচ্ছে। আমাদের এখান থেকে বের হয়ে অনেকে উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কী ধরনের সুবিধা দরকার বলে মনে করেন?

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য সরকার জায়গা দিচ্ছে, আবাসনের জন্য দিচ্ছে। যেটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নেই। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য সরকার অর্থনৈতিক কোনো সাপোর্টই করছে না, বরং তদারকিতে কঠোর হচ্ছে। তবে এটা আমরা ভালো দৃষ্টিতে দেখি। সরকার থেকে যদি কিছু অনুদান দেওয়া হতো তাহলে হয়তো শিক্ষার মানও আরও ভালো হতো এবং বেসকারি ও পাবলিকের মধ্যে আর বৈষম্য হতো না।

নতুন করে যারা সাউথইস্টে ভর্তি হতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।

নতুন যারা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পা রাখবে তাদের বলব, তোমরা যেখানেই ভর্তি হও না কেন সেটা দেখেশুনে করবে। যেখানে ভালো মান অর্থাৎ মানসম্মত শিক্ষা যেখানে আছে সেখানে ভর্তি হবে। আর সময়ের অপচয় একদম করবে না। পাশাপাশি বন্ধু নির্বাচনে খুব সতর্ক থাকবে।

সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আপনার লক্ষ্য কী?

আমাদের ভিশন হচ্ছে ২০২০ সালের মধ্যে গুনগত শিক্ষা নিশ্চিত করা। এরপর ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বমানের শিক্ষা নিশ্চিত করা। এ ছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হওয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যে আমরা যেই যেই কাজগুলো করা দরকার সব করছি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :