এডিসের ‘কারখানা’ নির্মাণাধীন ভবন

সৈয়দ ঋয়াদ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৩ আগস্ট ২০১৯, ১০:৩৯ | প্রকাশিত : ০৩ আগস্ট ২০১৯, ০৮:৪৪

মুগদাপাড়ার মদিনাবাগ প্রধান সড়কের নির্মাণাধীন একটি ভবনে কাজ করছেন একদল শ্রমিক। ছাদের বিভিন্ন অংশে পানি জমে আছে। বোঝাই যাচ্ছে অনেক দিনের পুরনো। স্বচ্ছ পানির ওপর পড়েছে শ্যাওলা। ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার প্রজননের আদর্শ জায়গা। কিন্তু শ্রমিকদের কারো মধ্যে ধারণা নেই, ফলে নেই ভ্রুক্ষেপ।

সাধারণ মশার সঙ্গে এডিস ইজিপ্টি মশার পার্থক্য এখানেই যে, এই মশাটি মানুষের কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করে আর ডিম পাড়ে জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবন বা ছাদে টব বা অন্য কোনো কৌটা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র বা অন্য কোথাও জমে থাকা পানি এডিস মশার সম্ভাব্য প্রজননস্থল। ডেঙ্গুর বিস্তারের মধ্যে ঘরের ভেতর এডিসের উৎসস্থল ধ্বংস করতে দেড় লাখ শিক্ষার্থীকে হাতে কলমে প্রশিক্ষণও দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু নির্মাণাধীন ভবনগুলো এক বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে রয়েছে। এর প্রধান কারণ, শ্রমিকদের অসচেতনতা। প্রধানত নিরক্ষর বা অল্প পড়াশোনা করা লোকদের মধ্যে এ বিষয়ে জ্ঞানের ঘাটতি স্পষ্ট। আর ভবন মালিকরাও সেভাবে খোঁজ-খবর রাখেন না। তাদের মধ্যেও যে তথ্যের অভাব রয়েছে, সেটাও জানা গেছে।

এডিসের সম্ভাব্য প্রজননস্থল নির্মাণাধীন ভবনে এরই মধ্যে অভিযান শুরু করেছে নগর কর্তৃপক্ষ। একাধিক ভবনে পানি জমে থাকায় করা হয়েছে বড় অংকের জরিমানা। একটি ভবনের তত্ত্বাবধায়ককে দেওয়া হয়েছে সাত দিনের কারাদণ্ড। কিন্তু এই অভিযান ব্যাপক আকারে হয়নি, আর এর তথ্যও সেভাবে ছড়ায়নি, সেটা বোঝাই যাচ্ছে। মুগদা, বাসাবো এবং আশেপাশের এলাকার বহু নির্মাণাধীন ভবন ঘুরে দেখা গেছে, জমে থাকা পানি অপসারণে কোনো উদ্যোগই নেই।

মুগদার সেই ভবনে নির্মাণ কাজে নিয়োজিত রাজমিস্ত্রীর সর্দারের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল, তার কোনো ধারণাই নেই যে এডিসের জন্মস্থান হতে পারে তার ভবনটি।

মালেক নামে এই শ্রমিকের সর্দার বললেন, ‘এইহানে আর মশা অইব কেমনে?’

মালেক না জানলেও তার সহকর্মীরাই কিন্তু ভুক্তভোগী। নিজেই জানালেন, তাদের সঙ্গে কাজ করতো দুই জন শ্রমিকের গত সপ্তাহে ডেঙ্গু হয়েছে। শুনেছেন এই ধরনের রোগ তুলনামূলক সম্পদশালীদের হয়। কিন্তু শ্রমিকদের কেন হলো, সেটা জানা নেই।

মালেকের সঙ্গে কথা বলার সময় তার সহকারী বাবুল চিৎকার করে জানালেন, এই বাড়ির মালিকের ছেলের নাকি ডেঙ্গু হয়েছে।

এরই মধ্যে ভবনের ছাদে উঠে আসেন বাড়ির মালিক আব্দুর রউফ। বাড়ির ছাদে আর টবে পানি জমে থাকার বিষয়টি দেখিয়ে এটি যে এডিসের ডিম পারার উপযুক্ত স্থান- এই বিষয়টি বলা হয় তাকেও। আর রাজমিস্ত্রী মালেকের মতোই এমন তথ্য জেনে অবাক তিনিও।

ঢাকাটাইমসকে রউফ বলেন, ‘আমি ভাবছি মশা নর্দমায় হয়। পরিষ্কার পানিতে মশা হয়, এই কথা প্রথম শুনলাম।’

এডিস নিয়ে সচেতনতা গড়তে সিটি করপোরেশনের লিফলেট দেখানো হলে রউফ বুঝতে পারেন, তিনি এতদিন ভুল জেনেছেন। জানালেন, এতদিন এই লিফলেট তার হাতে পৌঁছেনি। আর টিভিতেও সেভাবে দেখেছেন বলে মনে পড়ে না।

গত দুই দিনে রাজধানীর বাসাবো, মুগদা, খিলগাঁও, মদিনাবাগ, মাদারটেকে অসংখ্য বাসায়, ছাদে ও নির্মাণধীন ভবনে পানি জমে থাকার চিত্র দেখা গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আয়েশা আক্তার বলেন, ‘আমাদের চারপাশে মশার প্রজনন বৃদ্ধির জন্য আমরাই দায়ী। সাধারণ বিষয়গুলোতে আমাদের নিজেদের বিন্দুমাত্র সচেতনতা নেই। নেই কোনো ধরনের আগ্রহ। অথচ এখন দেশে মশার আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।’

পানি সম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এখন যে পরিস্থিতি, এখান থেকেও শিক্ষা না নিলে বিপর্যয় কোনোভাবেই ঠেকানো সম্ভব হবে না। বারবার আঘাত আনবে।’

‘শহরকে প্রতিনিয়ত নোংরা কিন্তু আমরাই করছি। নিজেদের তৈরি করা বিপদের সম্মুখীন হচ্ছে পুরো দেশের মানুষ। তার এর থেকে আমাদের সন্তানদের রক্ষার পথ আমাদেরকেই খুঁজতে হবে।’

এই জন অসচেতনতার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে মানুষকে জানাতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। লিফলেট বিতরণ হচ্ছে। রেডিও, টেলিভিশনেও তথ্যগুলো ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি রেড ক্রিসেন্ট, রোবার স্কাউট, বিএনসিসিও কাজ করছে বিভিন্ন এলাকায়। যদি কোনো এলাকায় মানুষের মধ্যে পর্যাপ্ত তথ্যের অভাবের কথা জানতে পারেন, আমাদেরকে জানাবেন। আমরা সেখানে বিশেষভাবে কার্যক্রম চালাব।’

ঢাকাটাইমস/৩আগস্ট/এসআর/ডব্লিউবি/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :