অ্যাকর্ডের একতরফা সতর্কতায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে পোশাকখাত: বিজিএমইএ

প্রকাশ | ০৩ আগস্ট ২০১৯, ১৮:৪৩ | আপডেট: ০৩ আগস্ট ২০১৯, ২০:২৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বিজিএমইএর সঙ্গে কোন যোগাযোগ না করেই অ্যাকর্ড চারশত কারখানাকে সতর্কতা দিয়েছে। তারা নতুন নতুন শর্ত দিচ্ছে । এতে পোশাকখাতের ক্ষতি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি রুবানা হক।
রুবানা হক বলেন, কারখানা সংস্থারে নতুন নতুন শর্ত দিচ্ছে অ্যাকর্ড এটা হতে পারে না। এ ব্যপারে আমরা অ্যাকর্ডের স্টিয়ারিং কমিটির সঙ্গে কথা বলবো। 
শনিবার রাজধানীর হোটেল আমারিতে পোশাক কারখানার অগ্নিনিরাপত্তা সংক্রান্ত কর্মশালা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি রুবানা হক। এ সময় অ্যাকর্ডের চীফ সেফটি ইন্সপেক্টর স্টিফেন কুইন উপস্থিত ছিলেন।
রুবানা হক বলেন, ফায়ার শেফটি বিষয়ে কারখানা সংস্থারে নতুন নতুন শর্ত দিচ্ছে অ্যাকর্ড। বিগত ছয় বছরে অ্যাকর্ড ১ হাজার ৬০০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ২০০ প্রতিষ্ঠানকে পরিদর্শন সনদ দিয়েছে। গত ৮ মে থেকে তারা সময় বাড়িয়ে ২৮১ দিনের সময় নিয়েছে ১ হাজার ৪০০ প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করতে। এটা কীভাবে সম্ভব। তিনি বলেন, বিজিএমইএর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছাড়াই ৪০০ কারখানাকে সতর্ক (এক্সেলেটেড) করেছে অ্যাকর্ড। কারখানাগুলোর নকশা, বিল্ডিং সেফটি, ফায়ার সেফটির পরও টেস্টিংয়ে ফেল দেখানো হচ্ছে। এতে রপ্তানি আদেশ ও কারখানার ব্যবসা কমেছে। শ্রমিকরা চাকরি হারাচ্ছে।
রুবানা হক বলেন, অ্যাকর্ড ও বিজিএমইএর চুক্তি অনুসারে কারখানাগুলোতে নতুন শর্ত আরোপের আগে বিজিএমইএর সঙ্গে কথা বলতে হয়, কিন্ত কারখানাগুলোর অগ্নি নিরাপত্তা বিষয়ে অ্যাকর্ড আমাদের ওপর নতুন নতুন শর্ত চাপিয়ে দিচ্ছে। হাইকোর্টের আদেশের পর চলতি বছর সমঝোতা চুক্তি হয়।
রুবানা হক বলেন, অ্যাকর্ড ২০১৩ সাল থেকে কাজ শুরু করেছে। যে কাজটি তাদের পাঁচ বছর আগে করার কথা ছিল সেটি তারা এখন করছে। যা আমাদের জন্য বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 
হাইকোর্টের আদেশের পর সমঝোতা চুক্তি হয়। কিন্তু অ্যাকর্ড চুক্তির শর্ত না মেনে একতরফা নতুন নতুন শর্ত জুড়ে দিচ্ছে- এমন অভিযোগ করে রুবানা হক বলেন, অ্যাকর্ড ২০১৩ সাল থেকে আমাদের দেশে কাজ শুরু করে সেভাবেই আমাদের কারখানাগুলোর সেফটির বিষয়টি মাথায় রেখেই শিল্পসংশ্লিষ্টরা বিনিয়োগ করেন। তবে তাদের সঙ্গে আমাদের নতুন করে হওয়া চুক্তিতে একসঙ্গে কাজ করার কথা ছিল। কিন্তু তারা আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই নতুন নতুন শর্ত জুড়ে দিচ্ছে। বিজিএমইএর অজান্তেই গঠন করা হয়েছে অ্যাকর্ডের প্রোটোকল। এছাড়া অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়ে অ্যাকর্ড কারখানাগুলোর ওপর নতুন নতুন শর্ত চাপিয়ে দিচ্ছে। 
গুলশানের হোটেল আমারিতে ‘ওয়ার্কসপ অন ফায়ার সেফটি এন্ড টেকনিকাল গাইডলাইন’ শীর্ষক এক কর্মশালা আয়োজন করে বিজিএমইএ। কর্মশালয় ১৮০ টি ফ্যাক্টরির প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছে। যেখানে  ১০ টি ফ্যাক্টরির কেস স্টাডি উপস্থাপন করা হয়।  
কর্মশালা পরবর্তী এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বিজিএমইএ’র সিনিয়র সহ-সভাপতি ফয়সাল সামাদ, বিজিএমইএ’র পরিচালক মিরান আলী, পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল মোমেন, ইকবাল হামিদ কোরাইশী (আদনান), শরীফ জহির, আসিফ ইব্রাহিম ।  
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে রুবানা হক বলেন, আমরা অ্যাকর্ডকে বলেছি  ফায়ার সেফটি বিষয়ে প্রপার গাইডলইন দিতে। কিন্তু আমাদের সেটা দেয়া হচ্ছে না। গাইডলইন পাওয়া গেলে আমরা সে অনুযায়ি কাজ করতে পারবো। 

 রুবানা হক বলেন, অবকাঠামো ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ফ্যাক্টরিগুলো অ্যাকর্ডের পর্যালোচনায় ভালো করলেও অগ্নি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এসে ভালো করতে পারছে না। একেকটা কারখানা ৪/৫ বার পর্যন্ত পরিদর্শন করা হয়েছে, তবুও তাদের চাহিদা মতো সমাধান আসছেনা।প্রথম ইনস্পেকশনে যেটা ধরা পড়া উচিত ছিল সেটা গিয়ে ধরতে তৃতীয় কিংবা চতুর্থ ইনস্পেকশনে। এভাবে একেকটি কারখানায় ৩৫টি পর্যন্ত ফাইন্ডিংস (ত্রুটি) চিহ্নিত করা হচ্ছে ধাপে ধাপে। এতে একদিকে সময় গড়িয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে সনদ মিলছে না।

অ্যাকর্ড একেক সময় একেক ধরনের নিরাপত্তা স্ট্যান্ডার্ড ঠিক করার করাণে মালিকরা টাকা খরচ করার পরও অগ্নিনিরাপত্তা সনদ পাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন রুবানা। বলেন, ১৬০০ কারখানার মধ্যে গত ৬ বছরে মাত্র দুইশ কারখানা নিরাপত্তা সনদ পেয়েছে। বাকিদের কাজ ৮০ শতাংশ হলেও নতুন নতুন শর্তের কারণে তারা সনদ পাচ্ছেনা। এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশের কারখানাগুলো কখনও সনদ পাবে না ।
রুবানা হক বলেন, ফায়ার সেফটি বিষয়ে আমরা একটা ফাস্ট ট্রাক কমিটি গঠন করার প্রস্তাব করেছি। যেখানে সব পক্ষের লোক থাকবে।  কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে সবাইকে জানিয়ে নেয়া হবে। তিনি জানান ফায়ার সেফটি বিষয়ে অ্যাকর্ডের স্টিয়ারিং কমিটির সঙ্গে চলতি মাসের ৯ তারিখ বৈঠক করবে বিজিএমইএ। সেখানে বিষগুলো তুলে ধরা হবে। 

অ্যাকর্ডের চীফ সেফটি ইন্সপেক্টর স্টিফেন কুইন বলেন, মালিকপক্ষের উদ্বেগের বিষয়গুলো তিনি নোট নিয়েছেন এবং যথাযত কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়গুলো তুলে ধরবেন।
প্রসঙ্গত, রানা প্লাজার ধস এবং তারও আগে তাজরীন গার্মেন্টসে অগ্নিকান্ডে শত শত শ্রমিক নিহত হওয়ার প্রেক্ষাপটে কারখানার সেফটিতে কাজ করতে ইউরোপ এবং আমেরিকার ক্রেতাদের দু'টি জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স গঠন হয়। বাংলাদেশ সরকারের সাথে জোট এ ব্যাপারে চুক্তি করেছিল ২০১৩ সালে। সে অনুযায়ী অ্যালায়েন্স ইতোমধ্যেই তাদের কাজ শেষ করেছে। 
(ঢাকাটাইমস/ জেআর/আরএ)