বিনামূল্যে ডেঙ্গুর চিকিৎসা দেয়ার দাবি বিএনপির

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৩ আগস্ট ২০১৯, ২১:৪২

সারাদেশে ভয়াবহ আকার ধারণ করা ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলটি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে এবং ভর্তুকি দিয়ে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা করানো দাবি জানিয়েছে। এছাড়া সবাই যেন বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে পারে সে ব্যাপারেও প্রস্তাব দিয়েছে।

শনিবার সন্ধ্যায় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাবের কথা জানান। তারা দলীয়ভাবে ডেঙ্গু প্রতিরোধে তাদের অবস্থান থেকে ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব।

ফখরুল বলেন, ‘আমরা প্রস্তাব রাখছি যে সেটা হচ্ছে, সরকার ডেঙ্গু চিকিৎসায় জন্য প্রয়োজনীয় ভর্তুকি দেবে এবং জনগণের জন্য বিনামূল্যে এই পরীক্ষার ব্যবস্থা নেবে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকার এত টাকা খরচ করতে পারে, বিভিন্ন সেক্টরে, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে কোটি কোটি টাকা জমা হয়, সেটা দেখা যায় যে বিভিন্ন ব্যক্তির জন্য চলে যায়, তাদের পছন্দের ব্যক্তিদের জন্য। কিন্তু সমাজ ও রাষ্ট্রের মানুষ যখন বিপদে পড়েছে তখন তাদের জন্য এই অর্থ ব্যবহার করাটা অত্যন্ত জরুরি বলে আমরা মনে করি। সরকারের উচিত হবে এ বিষয়ে আরও ফান্ড যোগাড় করে সেখানে বিনামূল্যে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।’

অনলাইনে ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিসে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাবের সহযোগিতায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। সেখানে থেকে অনলাইনে ডেঙ্গু রোগীদের ডাক্তাররা পরামর্শ দেবেন।’

ফখরুল বলেন, ‘গতকাল আমার একটা বক্তব্যে কনফিউশন তৈরি হয়েছে। জরুরি অবস্থার বিষয়টি। আসলে এটি ওইভাবে আমি ঠিক বলতে চাইনি। আমি যেটা বলতে চেয়েছি তা হলো আপদকালীন জরুরি ব্যবস্থা। অর্থাৎ ডেঙ্গু একটা বড় রকমের সমস্যা তৈরি হয়েছে, যেটা মোকাবেলায় আমি আপদকালীন জরুরি ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলে জরুরি অবস্থার কথাটা বলেছিলাম।’

ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু সম্পর্কে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বিদেশ যাওয়া এবং সিটি করপোরেশনের মেয়রদের বক্তব্যসমূহ মিলিয়ে এটা একটা লেজে-গোবরে তৈরি করে ফেলেছে সরকার। তারা এই সমস্যা সমাধান করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। এটা এখন এত বড় আকার ধারণ করেছে যে, এটা এখন ৬৪ জেলায় চলে গেছে। এটা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যে ব্যবস্থা দরকার ছিল সে ব্যবস্থা সরকার নিতে পারেনি। অর্থাৎ মশা মারার জন্য যে ঔষধ যেটা তারা আনতে পারেনি এবং এতো অল্প সময়ের মধ্যে আমদানি করার সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।’

নিজের বাসা উত্তরায় মশার উপদ্রুপের কথা বলতে গিয়ে ফখরুল বলেন, ‘আমি যে বাসায় থাকি তার পাশেই একটা বড় পাকা ড্রেন আছে যা আজ পর্যন্ত আমি দেখিনি পরিষ্কার করতে। আর মশার ঔষধ যারা দেয় তাদেরকে গত দেড় মাস আমি দেখিনি। ঢাকা শহরে এই ব্যাপারটা সবাই জানে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা গতকাল একটি হাসপাতালে গিয়েছিলাম। সেখানে দেখেছি, নিজ নিজ উদ্যোগে চিকিৎসা নিচ্ছে। এ্খানে সরকার একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, তারা সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিনামূল্যে পরীক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো, এটা এতো অপ্রতুল যে সুবিধা পাচ্ছে না। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ৫০০ টাকা নির্ধারণ করেছিল পরীক্ষার জন্য, সেটা কিন্তু তিনটা পরীক্ষা করতে হয়। ফলে ১৫০০ টাকা এমনই এসে যায়।’

বন্যা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বন্যা পরবর্তী দুর্গতদের মধ্যে কেন্দ্রীয় ত্রাণ কমিটির নেতৃত্বে ড্যাব দুর্গত এলাকায় ঔষধপত্র বিতরণ ও চিকিৎসাসেবা দেবে। একই সঙ্গে কৃষকদের কৃষি পুনর্বাসনের জন্য দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।’ এই কমিটিতে কৃষক দল ও এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা থাকবেন বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।

নির্বাচন কমিশনের স্মার্ট কার্ড প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা দেখেছি যে, নির্বাচন কমিশনের স্মার্ট কার্ডের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টাইগার আইটি। এটাকে বিশ্বব্যাংক কালো তালিকাভুক্ত করেছে দুর্নীতির কারণে। এই বিষয়টা জাতির কাছে একেবারে অস্পষ্ট। এখন পর্যন্ত স্পষ্ট কোনো কিছু জাতি জানে না। আমরা নির্বাচন কমিশন ও সরকারের কাছ থেকে একটা পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা দাবি করছি।’

কয়েকটি গণমাধ্যমে খালেদা জিয়া প্যারোলে মুক্তি নিয়ে সোদি আরব যাচ্ছে- এই রকম সংবাদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি এ সম্পর্কে কিছুই বলতে পারবো না। এই সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। আসলে প্যারোলের ব্যাপারে আমরা এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করিনি, কোথাও কোনো চিঠিও দিইনি, আমরা কোথাও কোনো কথাও বলিওনি। সুতরাং এটার প্রশ্নই উঠতে পারে না আমাদের দিক থেকে, আওয়ার পার্টি পয়েন্ট অব ভিউ। এটা সম্ভবত ওই যে সৃজনশীলতা আপনাদের সাংবাদিকদের সেখান থেকে বোধহয় এসেছে আর কী।’

বিএনপি মহাসচিব জানান, ঈদের পর খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন আরও বেগবান করার জন্য বিভাগীয় সমাবেশগুলো দ্রুত শুরু করা হবে।

বৈঠকে মহাসচিব ছাড়া খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমিরউদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।

লন্ডন থেকে স্কাইপে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যুক্ত ছিলেন।

(ঢাকাটাইমস/০৩আগস্ট/বিইউ/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :