ডেঙ্গু রোগীদের স্বেচ্ছাসেবায় তৃপ্তির হাসি
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সরকারি- বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, চিকিৎসক, নার্সসহ স্টাফদের। ঠিক এইসময় সাব্বির, ইফতেখারুল ইসলাম, আবির দত্ত ও সোনিয়া হালদার বৃষ্টিরা স্বেচ্ছায় মানুষের সেবায় এগিয়ে এসেছেন।
এই চার কিশোর-কিশোরী রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবক। এমন অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবক এই হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে নিয়ম করে ডেঙ্গু রোগী ও চিকিৎসকদের সহায়তা করে যাচ্ছেন।
দিনভর সেবা শেষে রোগী ও স্বজনদের তৃপ্তির হাসিকে খোরাক করে বাসায় ফেরেন সাব্বিররা। দেশের এমন পরিস্থিতিতে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরে এরা প্রত্যেকেই দারুণ খুশি। তাদের ভাষ্য- ‘এমন সুযোগ সবাই পায় না।’
গতকাল শনিবার বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের ডেঙ্গু সেলের সামনে যখন এই চার স্বেচ্ছাসেবকের সঙ্গে কথা হয় তখন সময় বিকাল চারটা। হাসপাতালের কেবিন ব্লকের নীচে ডেঙ্গু সেলে দায়িত্ব পালন শেষে বাসায় ফিরছিলেন।
ডেঙ্গু ওয়ার্ড থেকে বের হতেই সামনে একজন পঞ্চাশোর্ধ মানুষের ডাকে দাঁড়িয়ে যায় ওরা। কৌতুহলী সেই মানুষটি জানতে চান এরা কেন, কিভাবে, কিসের বিনিয়মে এখানে সেবা দিচ্ছেন। তাদের কাছ থেকে হাসিমুখে সব প্রশ্নের জবাব পেয়ে ধন্যবাদ দিয়ে বিদায় দিলেন তিনি।
পরে ঢাকা টাইমসের সঙ্গে কথা হয় এই চার স্বেচ্ছাসেবকের। সকাল নয়টা থেকে শুরু হওয়া দায়িত্ব শেষ হওয়ার কথা বেলা তিনটায়। কিন্তু রোগীর চাপ বেশি হওয়ায় তাদের চারটা পর্যন্ত কাজ করতে হয়েছে। দুপুরের খাবারও তখন খায়নি এরা।
এদের মধ্যে সাব্বির ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে বিশ^বিদ্যালয়ের ভর্তি প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইফতেখারুল ইসলাম এইচএসসি পাস করেছেন বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে। আর সানিয়া হালদার বৃষ্টি পড়ছেন ‘এ’ লেভেলে। আবীর দত্ত ন্যাশনাল পলিটিকনিকালের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।
বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে ডেঙ্গু সেলের নীচতলায় জরুরি বিভাগে ডেঙ্গু শনাক্তে আসা রোগীদের রক্তের পরীক্ষা চল্ েসেখানে শৃঙ্খলা বজায় রাখা, চিকিৎসকদের কাজে সহায়তা করেন এসব স্বেচ্ছাসেবকরা।
আর দ্বিতীয় তলায় যেখানে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি, সেখানে তাদের মশারি ঠিকঠাক করে দেওয়া, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ঠিক আছে কি না সেটারও দেখভাল করেন স্বেচ্ছাসেবকরা। নোংরা থাকলে পরিষ্কার করার কাজও করতে হয় তাদের।
শুধু বঙ্গবন্ধু মেডিকেলই নয়, ঢাকার বেশিরভাগ হাসপাতালেই রেডক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করছেন। সাব্বিররা ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরুর পর থেকে কেউ বাড়ডেম কেউ হলি ফ্যামিলি হাসপাতালেও কাজ করেছেন।
ডেঙ্গু রোগীদের জন্য কাজ করতে পেরে কেমন অনুভূতি হচ্ছে- জানতে চাইলে সাব্বির ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘দেশের মানুষ এখন সবাই আতঙ্কে। প্রতিদিন রোগীর ভিড় বাড়ছে। চিকিৎসক, নার্সসহ অনেকেই এই সময় দিনরাত কাজ করছেন। এমন একটা সময় আমিও মানুষের জন্য একটু হলেও কাজ করতে পারছি এটা বড় প্রাপ্তি।’
তিনবছর ধরে এই সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার কথাও জানান সাব্বির।
আর স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার অনুপ্রেরণা বাবার কাছ থেকে পেয়েছেন বৃষ্টি। তার বাবা গত ৪০ বছর ধরে রেডক্রিসেন্ট, রেডক্রসসহ অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে কাজ করছেন। ঢাকা টাইমসকে বৃষ্টি বলেন, ‘রোগী ও তাদের স্বজনদের পাশে থাকার পর তারা যে খুশি মনে হাসি দেয়। এটাই আমাদের তৃপ্তি। মনে করি এটাই আমাদের জন্য আশীর্বাদ। কখনোই ভাবি না সেবা পেয়ে কেউ ধন্যবাদ দেবে কি দেবে না।’
টিমের আরেক সদস্য আবীর দত্ত বলেন, ‘মানুষকে সহায়তা করি, এটাই আত্মতৃপ্তি। অনেক সময় যখন ছোট্ট একটা ধন্যবাদ দেয় কেউ সেটাই বড় পাওয়া।’
ইফতেখারুল বললেন, ‘এই কাজ করে আমি আনন্দ পাই। শান্তি লাগে। এটাই অনুভূতি।’
(ঢাকাটাইমস/০৪আগস্ট/ডব্লিউবি/জেবি)