বদলি ঠেকাতে রংপুরের সেই শিক্ষা কর্মকর্তার রিট

রংপুর ব্যুরো, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৬ আগস্ট ২০১৯, ১৭:২৯

মন্ত্রণালয় থেকে তিন দফায় বদলির আদেশ পাওয়ার পর অদৃশ্য এক শক্তির ইশারায় বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদান করছেন না রংপুর সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাকিরুল হাসান।

নতুন কর্মকস্থলে যোগদান না করে বরং কেন তাকে রংপুর সদর উপজেলা থেকে বদলি করা হলো, সেই বদলি ঠেকাতে সংশ্লিষ্টদের চ্যালেঞ্জ করে চলতি বছরের ৩০ জুন বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি সোহরাওয়ার্দির বেঞ্চে রিট দায়ের করেন। যার নং ৬৭৭৩/২০১৯।

এতে বাদী করা হয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, উপ-সচিব ( প্রশাসন) এবং মহাপরিচালক(ডিজি) কে।

তবে মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে জাকিরুল হাসানের বিরুদ্ধে নতুন কোনো আদেশ দেয়নি। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আগের আদেশই বহাল রয়েছে। ফলে, দায়িত্ব হস্তান্তর না করায় নিয়ম অনুযায়ী ২০ জুন থেকে বর্তমান পর্যন্ত তিনি বেতন-ভাতা গ্রহণ করতে পারবেন না। ওই বেতন গ্রহণ করলে সেই বেতন সরকারি কোষাগারে ফেরত দিতে হবে।

এদিকে, জাকিরুল হাসানের পরিবর্তে রংপুর সদর উপজেলায় বদলির আদেশ পাওয়া আখতারুল ইসলাম রংপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে যোগদান করলেও নিজ কর্মস্থলে যোগদান করতে পারছেন না। অথচ, তিনি আগের কর্মস্থল থেকে দায়িত্ব হস্তান্তর করে এসেছেন।

আর সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাকিরুল হাসান দায়িত্ব হস্তান্তর না করায় কার্যত একই উপজেলায় দুইজন শিক্ষা কর্মকর্তা থাকছেন।

অভিযোগ রয়েছে, আখতারুল ইসলামের ‘ট্রানজিটলিভ’ শেষ হলেও অজ্ঞাত কারণে জেলা শিক্ষা অফিস কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। এনিয়ে প্রশাসনিক কাঠামো ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে রংপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে।

অভিযোগে জানা গেছে, তৎকালীন রংপুরের কাউনিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাকিরুল হাসান পারষ্পরিক বদলির দোহাই দিয়ে চলতি বছরের ২০ জানুয়ালি তৎকালীন রংপুর সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আখতারুল ইসলামের স্বাক্ষর জাল করে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলা থেকে রংপুর সদর উপজেলায় বদলির আবেদন করেন। ওই বদলির কাগজপত্র তৎকালীন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম যাচাই-বাচাই না করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে পাঠান। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে ডিজি রংপুর সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে জাকিরুল হাসানের বদলির আদেশ করেন। এই জালিয়াতির ঘটনায় আখতারুল ইসলাম ক্ষুব্ধ হয়ে বিচার চেয়ে রংপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, সচিবসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন।

অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন দপ্তরে আখতারুল ইসলাম অভিযোগ করলেও ওই লিখিত অভিযোগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সচিব পর্যন্ত পৌঁছাতে দেননি জালিয়াতিতে অভিযুক্ত জাকিরুল হাসান। ফলে কোনো বিচারই হয়নি জাকিরুল হাসানের। তিন তিনবার বদলির আদেশ হওয়ার পরেও এবার সেই আদেশ ঠেকানোর চেষ্টা করছেন উচ্চ আদালতে রিট করে!

এ ঘটনায় রংপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, কেন তিনি রংপুর সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসেই থাকতে চান?

বদলির আদেশের কাগজপত্রে দেখে গেছে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মনোয়ারা ইশরাত স্বাক্ষরিত এক আদেশে চলতি বছরের ২৩ মে রংপুর সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার জাকিরুল হাসানকে কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার হিসেবে বদলি করা হয়। ওই আদেশ পাওয়ার পর জাকিরুল হাসান পারিবারিক সমস্যার কথা উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সি, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেনের সুপারিশ সম্বলিত একটি আবেদন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর দাখিল করেন। পরে তাঁকে রৌমারী উপজেলা থেকে ১৬ জুন/১৯ কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলা শিক্ষা অফিসার হিসেবে বদলীর আদেশ দেন। এই আদেশ পাওয়ার পর কেন তাকে রংপুর সদর উপজেলা থেকে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলায় বদলি করা হলো তা জানতে চেয়ে এবং বদলির আদেশ স্থগিত চেয়ে ৩০ জুন/১৯ একটি রিট পিটিশন করেন।

জানা গেছে, জাকিরুল হাসান উচ্চ আদালতে এই রিট করলেও তার বদলি স্থগিত করেনি সংশ্লিষ্ট দপ্তর। ফলে নিয়ম অনুযায়ী অবৈধভাবেই তিনি সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সকল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে, রংপুর সদর উপজেলায় বদলির আদেশ পাওয়া কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আখতারুল ইসলাম ১৯ জুন তার দায়িত্ব হস্তান্তর করে নতুন কর্মস্থলে যোগদানের জন্য এসে দপ্তর পাচ্ছেন না বলে রংপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন।

আখতারুল ইসলাম লিখিতভাবে জানিয়েছেন, তাকে চলতি বছরের ১৬ জুন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি থেকে রংপুর সদর উপজেলায় বদলি করা হয়। আমি ১৯ জুন/১৯ দায়িত্ব হস্তান্ত করে ২০ জুন রংপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলামের কাছে সকল কাগজপত্র দাখিল করে তাঁর নির্দেশে সদর উপজেলায় যোগদান করতে যান। কিন্তু তিনি দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন না সাফ জানিয়ে দেন। ফলে তিনি লিখিতভাবে সচিব এবং জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানান।

সাবেক এক শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, কোনো সরকারি কর্মকর্তা বদলির আদেশ পাবার পর স্বেচ্ছায় দায়িত্ব হস্তান্তর না করলে ১৯৮৫ সালের বাংলাদেশ সার্ভিস রুল ২৬ ধারার বিধি অনুুযায়ী আচরণবিধির সুস্পষ্ট লংঘন।

রংপুর সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার জাকিরুল হাসান বলেন, আমার প্রতি অবিচার করে তিনবার বদলি করা হয়েছে। তাই আমি উচ্চ আদালতের আশ্রয় নিয়েছি। স্বাক্ষর জালিয়াতির বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, ফুলবাড়ি উপজেলা শিক্ষা অফিসার আখতারুল ইসলাম আমার অফিসে যোগদান করেছেন ঠিকই। কিন্তু সদর উপজেলা শিক্ষা অফিজার জাকিরুল হাসানের বদলির বিষয়ে উচ্চ আদালতে স্থগিতাদেশ নেয়ায় বিষয়টি জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি এখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দেখবেন।

সুজন রংপুর মহানগর কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, কোন সরকারি কর্মকর্তা জালিয়াতি করলে তাৎক্ষণিক বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। বিচারহীনতার প্রবণতা চললে দপ্তরগুলোতে অনিয়ম অনাচার বেড়েই চলবে। তাই বিষয়গুলো তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।

ঢাকাটাইমস/০৬আগস্ট/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :