দৌলতদিয়ায় পারের অপেক্ষায় দুই শতাধিক গরুবাহী ট্রাক
ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন হাটে গরু বিক্রি করতে যাওয়া প্রায় দুই শতাধিক ট্রাক এখন রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে নদী পার হতে অপেক্ষা করছে। ফলে গরুবাহী ট্রাকের চাপ বাড়ায় ঘাট এলাকায় দেখা দিয়েছে দীর্ঘ যানজট। পারের অপেক্ষায় থেকে ট্রাকে গাদাগাদি করে বেঁেধ রাখা গরুগুলো অসুস্থ হয়ে পড়ছে। মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে সরজমিনে দেখা গেছে, দৌলতদিয়া জিরো পয়েন্ট থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার পর্যন্ত ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে নদী পারের জন্য অপেক্ষা করছে গরুবাহী ট্রাকসহ প্রায় চার শতাধিক যানবাহন। এর মধ্যে কোরবানির পশুবাহী ট্রাকের সংখ্যাই বেশি। ফেরি সংকট ও নদীতে তীব্র স্র্রোতের কারণে ফেরি পারাপারে সময় বেশি লাগায় দৌলতদিয়া ঘাটে এই যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
তবে ট্রাক চালকরা বলেন, ফেরি সংকট কৃত্রিম। ঈদে গরুর ট্রাক পার হবে আর অতিরিক্ত টাকা দালালের মাধ্যমে বিআইডব্লিউটিসি ও অদৃশ্য একটি শক্তি পাবে না- তা কি করে হয়? ঈদের সময় দৌলতদিয়া ঘাটে যানজট হতেই হবে এটাই চিরাচরিত নিয়ম।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) আবু আব্দুল্লাহ রনি বলেন, গত সোমবার থেকে ঘাটে গরুর ট্রাকের চাপ বেড়ে গেছে। এখন ঘাটে অতিরিক্ত ফেরির খুবই প্রয়োজন। বর্তমান ১৮টি ফেরির মধ্যে ১৭টি ফেরি চলাচল করছে। তবে আশা করছি, খুব দ্রুতই এই নৌরুটে ২০টি ফেরি বহরে যোগ হবে।
তবে দৌলতদিয়া প্রান্তে গরুবাহী ট্রাকের চাপ লক্ষ করা যাচ্ছে। গত সোমবার বিকাল পর্যন্ত গরুবাহী ট্রাক, যাত্রীবাহী বাসসহ অন্যান্য যানবাহনের লাইন প্রায় তিন কিলোমিটার ছাড়িয়ে যায়।
তবে নদীতে স্রোত থাকায় ধীর গতিতে চলাচল করছে ফেরি। যে কারণে ঘাট এলাকায় আটকে যাচ্ছে যানবাহন। তবে ঈদ এলেই এ ঘাটে যানবাহন ও ঘরে ফেরা মানুষের সংখ্যা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। এই চাপ সামলাতে পবিত্র ঈদুল ফিতরে দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে সাধারণ মানুষের নির্বিঘ্ন যাতায়াত ও যানজট নিরসনে নির্বাহী হাকিম ও ট্রাফিক পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য ঘাট এলাকায় থাকবে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সেই সঙ্গে ঘাট এলাকার সড়কে ঈদের আগেই বৈদ্যুতিক লাইট স্থাপন এবং লঞ্চ ও ফেরি ঘাটের রাস্তা সংস্কারসহ সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে দৌলতদিয়া ঘাট। নদী পার হতে না পেরে ভোগান্তিতে পড়েছে গরু ব্যবসায়ীরা। সময়মতো গরুগুলো হাটে তুলতে না পারলে অর্থনৈতিকভাবে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবে তারা।
কুষ্টিয়া থেকে আসা গরু ব্যবসায়ী রহমত মিয়া বলেন, নদী পারের জন্য এখানে প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছি। কখন পার হতে পারব তা জানি না। সময় মতো যদি গরু হাটে তুলতে না পারি, তাহলে আমাদের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যাবে।
গরু ব্যবসায়ীরা ঘাট পার হতে না পেরে চিন্তায় পড়েছেন দৌলতদিয়া ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আবুল হোসেন বলেন, আজ ঘাটে গরুর ট্রাকের অতিরিক্ত চাপ। তবে আমরা সিরিয়াল মতো অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ট্রাকগুলোকে নদী পার করছি। তবে সকাল থেকেই গরু নিয়ে ঘাট পারের জন্য অপেক্ষা করছেন অনেক ব্যবসায়ী।
এদিকে আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট দিয়ে মানুষের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও দৌলতদিয়া ঘাট কর্তৃপক্ষ।
২১ জেলার ঈদে ঘরমুখো মানুষ ও হাজারো যানবাহন পারাপারে এ রুটে ঈদের ৩/৪ দিন আগে থেকে ২০টি ফেরি ও ৩৪টি লঞ্চ চলাচলের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সেই সাথে ঘাট এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করতে স্থাপন করা হচ্ছে সিসি ক্যামেরা। যানজট নিরসনে এখন থেকে আর এসি বাসগুলো পাবে না ভিআইপি ব্যবস্থা।
(ঢাকাটাইমস/৬আগস্ট/এলএ)