ব্র্যাক থেকে অবসরে ফজলে হাসান, নতুন চেয়ারম্যান জিল্লুর
বিশ্বের সর্ববৃহৎ এনজিও ব্র্যাক ও ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান পদ থেকে অবসর গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন এর প্রতিষ্ঠাতা ফজলে হাসান আবেদ। মঙ্গলবার ঢাকার ব্র্যাক সেন্টারে এক নৈশভোজ অনুষ্ঠানে এই ঘোষণা দেন তিনি।
ফজলে হাসানের বিদায়ে ব্র্যাকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারপারসনের পদে আসছেন হোসেন জিল্লুর রহমান। যিনি সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ১১ মাস উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেছেন।
সক্রিয় চেয়ারপারসনের পদ ছাড়লেও ব্রাকের সম্মানসূচক চেয়ারপারসন এমিরেটাস পদে অধিষ্ঠিত হচ্ছেন ৮৪ বছর বয়সী ফজলে হাসান।
অনুষ্ঠানে ফজলে হাসান আবেদ বলেন, ‘বিগত কয়েক বছর আমি ব্র্যাকে আমার পরবর্তী নেতৃত্ব নিয়ে অনেক ভেবেছি এবং সেই মতো প্রস্তুতি নিয়েছি। এখন আমার বয়স ৮৩ বছর। ব্র্যাককে সামনে এগিয়ে নেওয়ার কাজে যথাযোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচনের বিষয়টি ছিল আমার সিদ্ধান্তের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।’
ব্র্যাকের কর্মীদের স্মরণ করে ফজলে হাসান বলেন, ‘ব্র্যাক কখনোই আমি বা কোনো ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান ছিল না। আমি এর প্রতিষ্ঠাতা ঠিকই, কিন্তু ব্র্যাকের সুদৃঢ় ভিত্তি ও সুনাম তৈরি করেছেন এর নিবেদিত কর্মীরা, তাদের প্রত্যয় ও কর্মনিষ্ঠা দ্বারা।’
তিনি বলেন, ‘আমি স্বপ্ন দেখি, ব্র্যাক আগামীতে আরও বড় হয়ে উঠবে, নতুন উদ্ভাবন চালিয়ে যাবে, নতুন দিনের প্রয়োজনে এগিয়ে আসবে নতুন সমাধান নিয়ে।’
চেয়ারপারসন ফজলে হাসানের বিদায়ের সঙ্গে ব্র্যাকের পরিচালনা পর্ষদে সাতটি পদের পরিবর্তন এসেছে বলে গতকালের অনুষ্ঠানে জানানো হয়। পরিবর্তন এসেছে ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের পরিচালনা পর্ষদেও।
ব্র্যাকের বিদায়ী পরিচালনা পর্ষদে ছিলেন মুশতাক চৌধুরী, তাহেরুন্নেসা আবদুল্লাহ, লতিফুর রহমান, রোকিয়া আফজাল রহমান, লুভা নাহিদ চৌধুরী, মার্থা আলটার চেন, আদিব এইচ খান, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও সৈয়দ এস কায়সার কবির। ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের বিদায়ী পরিচালনা পর্ষদে ছিলেন সিলভিয়া বোরেন, শাবানা আজমী, দেবপ্রিয় ভট্টচার্য, শফিকুল হাসান কায়েস, আইরিন জুবাইদা খান, পারভিন মাহমুদা, মুশতাক চৌধুরী, ফওজিয়া রশিদ, ভিক্টোরিয়া সেকিটোলেকো ও মারিলো ফন গোলস্টেইন।
গত সপ্তাহেই ব্র্যাক বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান আসিফ সালেহ। তিনি ইতোমধ্যে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে গত মে মাসে যোগ দেন মুহাম্মাদ মুসা। তারা সংস্থার সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করছেন।
ফজলে হাসান আবেদের জন্ম ১৯৩৬ সালে। তার উচ্চতর পড়াশোনা হয় লন্ডনে, হিসাব বিজ্ঞানে। পড়াশোনার পর তিনি একটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের পাকিস্তান শাখায় যোগ দিলেও ১৯৭০ সালে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় বদলে দেয় তার জীবনপথ। চাকরি ছেড়ে তিনি চলে যান লন্ডনে, সেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য জনমত গঠনে কাজ শুরু করেন। এরপর ১৯৭২ সালে ফিরে দেশ পুনর্গঠনে প্রতিষ্ঠা করেন ব্র্যাক নামের সংস্থাটি।
বাংলাদেশের ৬৪টি জেলাসহ এশিয়া, আফ্রিকা এবং আমেরিকার ১৩টি দেশে এটির কার্যক্রম রয়েছে। দারিদ্র বিমোচন এবং দরিদ্রের ক্ষমতায়নে বিশেষ ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ ব্রিটিশ সরকার ফজলে হাসান আবেদকে নাইটহুডে ভূষিত করেন।
১৯৮০ সালে ম্যাগসেসে পুরস্কার পাওয়ার পর জীবনে অসংখ্য সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন ফজলে হাসান আবেদ। তার মধ্যে রয়েছে বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার, স্প্যানিশ অর্ডার অব সিভিল মেরিট, লিউ টলস্টয় ইন্টারন্যাশনাল গোল্ড মেডেল ইত্যাদি। ২০১৪ ও ২০১৭ সালে ফরচুন ম্যাগাজিনের নির্বাচিত ৫০ বিশ্বনেতার মধ্যে ফজলে হাসান আবেদের নাম স্থান পেয়েছিল।
ঢাকাটাইমস/৭আগস্ট/এমআর