পরিচ্ছন্ন নয় নগর ভবনের চারপাশ

প্রকাশ | ০৯ আগস্ট ২০১৯, ১২:৪৮

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস

নগর পরিচ্ছন্ন রাখার আহ্বান জানানো ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন তার নগর ভবনের চারপাশকেই পরিষ্কার রাখতে পারছে না। সামনের অংশ ছিমছাম থাকলেও পেছনেই আবর্জনার স্তূপ। আর যে পরিবেশ ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার পছন্দের, সেটি আছে নগর ভবনের আশেপাশেই।

ডেঙ্গুর বিস্তারের মধ্যে বাসা বাড়িতে গিয়ে এডিসের লার্ভা ধ্বংস করার কাজও শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। নির্মাণাধীন ভবনে লার্ভা পাওয়া গেলে করা হচ্ছে জরিমানা। নোংরা পরিবেশ থাকলে সাজা দিচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

তবে ভবনের চারপাশ ঘুরে দেখা গেছে, ম্যাজিস্ট্রেটরা অনেকটা সময় চাইলে ব্যয় করতে পারেন সেখানেই। ভবনের পেছনের অংশ তো বটেই সীমানা প্রাচীরের ভেতরেও স্থানে স্থানে জমে আছে পানি বা এমন পরিবেশ আছে যেটি এডিস মশার ডিম পারার জন্য উপযুক্ত।

ডেঙ্গুর বিস্তারের মধ্যে নগর ভবন তার চারপাশ পরিচ্ছন্ন এবং জমে থাকা পানিমুক্ত রাখতে না পারায় বিব্রত সেখানকার কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পরিবারের লোকজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।

নগর ভবনের চারপাশে সীমানা প্রাচীরের বদলে দেওয়া আলে রেলিং। ভেতরে ভবনের ঠিক পেছনের দিকের রাস্তায় দেখা যায়,কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আনা নেয়ার বেশ কয়েকটি বাস রাখা। আর পূর্বপাশের লাশ বহনের জন্য একটি গাড়ি, দুটি ময়লা নেয়ার গাড়িসহ আরো বেশ কিছু ছোট বড় যানবাহন রাখা। আর ভবনের পশ্চিম দিকে অনেকগুলো ড্রামের স্তুপ।

ভবনের পেছনের চিত্র আরো হতাশার। বিদ্যুতের অব্যবহৃত খাম্বা, ফুটপাতের মোটা রেলিং, নষ্ট হয়ে যাওয়া ‘ক্লিন ঢাকার’ ডাস্টবিন কী নেই সেখানে? এসব কবে নাগাদ রাখা হয়েছে তার সঠিক তথ্য দিতে পারেননি সেখানে থাকা কয়েকজন কর্মচারী। কারণ এগুলোর অনেকটা মাটি আর লতাপাতার নীচে চাপা পরে আছে তাও অনেকদিন হবে। অনেকগুলো লোহার জিনিসে মরিচাও ধরেছে।

মেট্রোরেলের কাজের কারণে রাস্তা থেকে এসব পুরানো মালামালের অনেকগুলো রাখা হয়েছে বলে জানালেন একজন কর্মচারী।

ডব্লিউএইচওর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ কীটতত্ত্ববিদ বি এন নাগপাল মঙ্গলবার ঢাকায় সেমিনার করে যেসব এলাকা নিয়ে সতর্ক থাকতে বলেছেন, তার মধ্যে এই ধরনের পরিবেশও আছে।

নগর ভবনের এই দশা নিয়ে কথা বলতে দায়িত্বশীল কাউকে পেতেই গলদঘর্ম হতে হলো। দুই জন আনসার সদস্যকে সেখানে দেখে এ বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করলেও তারা এ নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

মূলভবনে পূর্বদিক দিয়ে দ্বিতীয় তলার নকশা করা কার্নিশ পুরোটায় জমে আছে পানি। ভাসছে  কাগজ, পলিথিন, সিগারেটের খোসা। বৃষ্টি হওয়ায় পুরোটা ভরে গেছে সেটা বোঝা গেছে। উপর থেকে পাইপ থেকেও পানি পড়ছিল এই জায়গাটিতে।

একইদিক দিয়ে চতুর্থ তলায় গিয়ে দেখা যায় সামনে খোলা ছাদে বৃষ্টির পানি আর ময়লা ভাসছে।

চতুর্থ তলায় স্কাভেঞ্জার্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের প্রধান কার্যালয় । সেখানে দেখা যায় কয়েকটি চেয়ার নিয়ে বসে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন লোক। আড্ডাস্থলের পাশেই দেয়াল ঘেঁষে অনেক ময়লা আবর্জনা পড়ে থাকতে দেখা গেছে। দেখেই বোঝা যায়, এগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হচ্ছে না।

পশ্চিম দিকের ঝর্ণাটি নিয়মিত ছাড়া হয় না। প্রায় অচল এই স্থাপনাটিতেও পানি জমে থাকতে দেখা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ডেঙ্গু নিয়ে আলোচনা শুরুর পর থেকেই নগর ভবনজুড়ে ময়লা-আবর্জনা নিয়ে একাধিক সংবাদ হলেও অবস্থা বদলায়নি। যা বিব্রতকর। এ পর্যন্ত বেশ কয়েকজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। অনেকে ঝুঁকিতে আছেন। ঈদের সময়ও আমাদের অফিস করতে হবে।’

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা জাহিদ হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে তার দপ্তরে গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে বলেন, তিনি একটি বৈঠকে। এ বিষয়ে পরে কথা হবে।

পরে অঞ্চল-১ এর সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. শাহাবুদ্দিনের সঙ্গে কথা বলতে একাধিকবার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

নগরভবনে আসা সেবাপ্রত্যাশীরা আগে এগিয়ে গেলেও ডেঙ্গুর প্রকোপ আর পরিচ্ছন্নতা নিয়ে বহু কথাবার্তার কারণে এখন এসব বিষয়ে দৃষ্টি রাখেন। ট্রেড লাইসেন্স সংক্রান্ত কাজে আসা চকবাজার মো. শামিম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘যারা ঢাকা পরিষ্কার রাখবে এদের এই জায়গায় ময়লায় ভরা। সামনে তো ভালোই ফিট, পেছনের দিকে গেলে তো ফাঁকা কোনো জায়গা নেই। দেখবেন খালি লোহা লক্কর। কবে ফালাইছে আর কবে পরিষ্কার করবে তা কেউ জানে না।’

(ঢাকাটাইমস/০৯আগস্ট/ডিএম)