জার্নি বাই বাস...

প্রকাশ | ১০ আগস্ট ২০১৯, ১৪:৫৪ | আপডেট: ১০ আগস্ট ২০১৯, ১৫:০৩

কায়সার রাহমানি

ঢাকা থেকে দুইটায় বাসে উঠলাম। টাঙ্গাইল পৌঁছাতে লাগলো ভোর চারটা। আরও পথ বাকি। প্রায় ছয় ঘণ্টা জ্যামে। আমার সামনের সিটে নতুন দম্পতি। বউটা সুন্দর। তাদের সামনের সিটেও নতুন দম্পতি। তারাও সুন্দর। কার সঙ্গে যেন একজন তরুণীও আছে।

পাশের সিটগুলোতে বেশ কয়েকজন ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলে দলবেঁধে বাসে উঠেছে। কিছুক্ষণ পরপর গান গেয়ে সেই ছেলেগুলো, মনোযোগ নেবার চেষ্টা করছে। ভার্সিটি পাস করেছি প্রায় এক যুগ আগে। তাই, ছেলেগুলো ক্লান্তিহীনভাবে কেন গান করছে, বুঝতে পেরে মজাই পাচ্ছি। খেয়াল করলাম, মেয়েরা যখন ঘুমাচ্ছে, ছেলেরা গান করছে না। যখন জাগছে, গান ধরছে।

আমার সামনের দম্পতির বউয়ের যমুনা ব্রিজের আগে বাথরুমে যাবার প্রয়োজন হয়েছে। কিন্তু সুযোগের কারণে, যেতে পারছে না। মোটামুটি চার ঘণ্টা পার। তবুও কাজ হয়নি।

ড্রাইভার সাহেব চমৎকার। জিন্স প্যান্ট, ভালো একটা টি শার্ট, চোখে সানগ্লাস। ফর্সা ও লম্বা। বিশাল চুল ঝুঁটি বাঁধা। সবাই আমরা ভীষণ ক্ষুধার্ত। অন্যদিকে বউটির বাথরুমে যাওয়া ব্যাপক প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। প্রায় চার ঘণ্টা চেপে আছেন তিনি, ফুড ভিলেজ হোটেলের আশায়। বউয়ের কারণে, জামাইয়েরও খুব কষ্ট হচ্ছে, বোঝা যাচ্ছে।

জ্যামের কারণে ফুড ভিলেজে গাড়ি ভেড়াতে পারেনি স্মার্ট ড্রাইভার। ক্ষুধার্তদের মাথায় হাত। বাথরুমে যে বউটি যাবে, তার জামাই বেশি ক্ষিপ্ত হলো। শুরু হলো চিৎকার চেঁচামেচি। ড্রাইভারকে গালাগালি। ড্রাইভার কিছুই শুনছে না। সে আল্লার দান নামে একটা হোটেল খুঁজছে। কারণ, গাড়ির চেকার দাঁড়িয়ে আছে সেখানে। সবার মেজাজ ভীষণ খারাপ হলো। কোথায় ফুড ভিলেজ আর কোথায় আল্লার দান হোটেল। শুরু গালাগালি। ক্ষুধা আর অতিরিক্ত আট ঘণ্টার জ্যামে সবার মেজাজ বিগড়ে আছে।

হোটেলে থামানো হলো গাড়ি। শুধু নতুন বউটা নয়, দেখলাম সবাই বাথরুমে যাচ্ছে। পরে ভরপেট খেল অনেকে। এখন রাস্তায় জ্যাম নেই। পেটও ভরা। সবাই ঘুমাচ্ছে। শুধু ড্রাইভার জেগে। ড্রাইভারকে গিয়ে সরি বলতে ইচ্ছা করছিল। এক যাত্রী তাকে ‘শুয়োরের বাচ্চা’ বলে গালি দিয়ে মারতে গেছিল। গালি দেয়া লোকটিও ঘুমাচ্ছে। ড্রাইভার চোখ বড় করে, সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। সে যে ড্রাইভার, তার অনেক দায়িত্ব। সবাইকে মায়ের ঘরে তাকে পৌঁছে দিতে হবে যে!

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী