জাল টাকা থেকে সাবধান থাকবেন কীভাবে?

প্রকাশ | ১০ আগস্ট ২০১৯, ২০:১৪

ঢাকাটাইমস ডেস্ক
ফাইল ছবি

সাধারণত কোনো উৎসব এলে অথবা বিশেষ কোনো দিন উপলক্ষে মানুষে অর্থ লেনদেনের হার স্বাভাবিকের চাইতে বেড়ে যায়। এর একটা বড় অংশই হয়ে থাকে কাগজের নোটের মাধ্যমে, আর ঠিক এই সময়গুলোতেই আশংকা থাকে জাল নোট কারবারিদের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ার। তাই অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে সব সময় সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

দেশে সাধারণত সবচেয়ে বেশি জাল করা হয় ১০০০, ৫০০ ও ১০০ টাকার নোট।

নিরাপদ অর্থ লেনদেনের পরামর্শ

‘যদি বড় অংকের লেনদেন হয় তাহলে সেটা অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফারের মাধ্যমে করুন’ - এ পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম।

তবে যদি নগদে লেনদেন করতেই হয় - তাহলে প্রতিটি নোট ভালোভাবে যাচাই করার পাশাপাশি প্রয়োজনে জাল নোট শনাক্তকারী প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।

এসব প্রযুক্তির মধ্যে একটি হলো 'মানি কাউন্টিং মেশিন।' তবে এটি বড় বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানই ব্যবহার করে থাকে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে এর ব্যবহার দেখা যায় না।

তবে কোরবানির ঈদে গরুর হাটে যেহেতু বেশিরভাগ ব্যবসায়ী নগদে অর্থ লেনদেন করে থাকে তাই জাল টাকা রোধে নিরাপত্তাবাহিনীর পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে বিভিন্ন ব্যাংক কর্মকর্তারা দেশের প্রতিটি হাটে ২৪ ঘণ্টা কাজ করছেন - জানান সিরাজুল ইসলাম।

সেখানে মানি চেকার মেশিনের পাশাপাশি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকা লেনদেনের সুযোগ রাখা হয়েছে সেইসঙ্গে সচেতনতামূলক পোস্টার টানিয়ে দেয়া হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

ব্যক্তিগত পর্যায়ে জাল নোট শনাক্তের ক্ষেত্রে মানি চেকার মেশিন বেশ সস্তা এবং সহজলভ্য। এটি নীল আলোর সাহায্যে নোটের নিরাপত্তা যাচাই করে থাকে।

এছাড়া রয়েছে ব্যাংক নোট চেকার পেন। এই কলমটি দিয়ে যদি জাল নোটে দাগ কাটা হয়, তাহলে ভিন্ন রং দেখাবে।

খালি চোখে ব্যাংক নোট যাচাই করবেন কীভাবে?

সাধারণ কয়েকটি নিরাপত্তা চিহ্নের ব্যাপারে খেয়াল রাখলে যে কেউ আসল নোট চেনার ব্যাপারে সতর্ক হতে পারবেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, আসল নোটের কিছু বৈশিষ্ট্য।

প্রথমত অমসৃণ ইন্ট্যাগলিও মুদ্রণের বিষয়টি লক্ষ্য করা।

বাংলাদেশের ১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটের ডানপাশে হেলানো সাতটি সমান্তরাল লাইন থাকে।

হেলানো লাইনের নিচে বৃত্তাকার ছাপ দেখা যায়। ১০০০ টাকার নোটে পাঁচটি, ৫০০ টাকার নোটে চারটি এবং ১০০ টাকার নোটে তিনটি বৃত্তাকার ছাপ থাকে।

এই সমান্তরাল লাইন, বৃত্তাকার ছাপ এবং পেছনে সামনে বাংলাদেশ ব্যাংক লেখা ইন্ট্যাগলিও পদ্ধতিতে মুদ্রণ করায় এগুলো অমসৃণ অনুভূত হবে।

দ্বিতীয়ত প্রতি নোটের বাম পাশে থাকা নিরাপত্তা সূতার দিকে নজর দিতে হবে।

নিরাপত্তা সূতা হলোগ্রাফিক এবং রং পরিবর্তনশীল হয়।

নোট নাড়াচাড়া করলে এর রং বদলাবে এবং ছোট ছোট বাংলাদেশ ব্যাংক লেখাটি উঠবে।

তবে ১০০০ টাকার লাল নোটটি আলোর বিপরীতে ধরলে নিরাপত্তা সূতায় '১০০০ টাকা' লেখা দেখা যাবে।

সূতাটি নোটে এটা এমনভাবে গাঁথা থাকে যে ধারালো কিছু দিয়ে ঘষলেও উঠে আসবে না। জাল নোটে এটা আঁটা দিয়ে লাগানো থাকায় সহজেই উঠে আসে।

তৃতীয়ত খেয়াল করতে হবে নোটের জলছাপগুলো।

শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সম্বলিত নোটগুলো আলোর বিপরীতে ধরলে শেখ মুজিবের ছবি, বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম এবং উজ্জ্বলভাবে নোটের ইংরেজি মূল্যমান দেখা যাবে।

তবে লাল রঙের ১০০০ হাজার নোটের ক্ষেত্রে শাপলা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম দেখা যাবে।

এছাড়া উজ্জ্বল মূল্যমানটি থাকবে শহীদ মিনারের ছবির উপরের দিকে।

চতুর্থত নোটের ডানদিকের কোনায় থাকা টাকার অংকটি রং পরিবর্তনশীল কালিতে ছাপানো থাকে।

এই মূল্যমান অপটিক্যাল ভ্যারিয়েবল কালিতে মুদ্রিত হওয়ায় সেটা অমসৃণ হবে, সেইসঙ্গে নাড়াচাড়া করলে রঙ বদলাবে।

১০০০ টাকার নোটের পেছনের বাম অংশে বাংলাদেশ ব্যাংক লেখাটি বাংলাদেশ ব্যাংক লেখাটি হালকাভাবে মুদ্রিত দেখা যাবে। যেটা নাড়াচাড়া করলে বোঝা যাবে।

এছাড়া আরও অনেক পদ্ধতিতে আসল নোট চেনার উপায় আছে। যেমন লুকানো লেখা, খুব ছোট আকারে লেখা, ইত্যাদি।

অর্থ উত্তোলনের ক্ষেত্রে এটিএম বুথগুলোকে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মনে করা হলেও গত বছর মিরপুরের বাসিন্দা মিজান রহমান বুথ থেকে একটি জাল নোট পান। তবে ব্যাংকের কাছে বিষয়টি প্রমাণ করতে পারায় তিনি টাকাটি ফেরত পান।

এ ব্যাপারে সিরাজুল ইসলাম তিনটি উপায়ে বুথ থেকে জাল টাকা হাতে পাওয়ার বিষয়ে প্রমাণ সংগ্রহের কথা বলেছেন।

প্রথমত, নোটের নম্বরটি বুথের সিসিটিভি ক্যামেরার সামনে দেখাতে হবে।

এরপর বুথের নিরাপত্তায় দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তারক্ষীর কাছে বিষয়টি অবহিত করে তাদের সঙ্গে থাকা খাতায় নোটের নম্বর, বিবরণ ও অভিযোগের বিষয়টি লিখে আসতে হবে।

এরপর সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে বিষয়টি অবহিত করতে হবে এবং কোন বুথে কবে কোন সময় টাকাটি তুলেছেন সেটা জানাতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ১০০০ টাকা,, ৫০০ টাকা এবং ১০০ টাকা মূল্যমানের চার হাজারেরও বেশি জাল নোট ধরা পড়েছে - যার মোট মূল্য ৩৪ লাখ ৩১ হাজার ৩০০ টাকা।

জাল নোটের বিরুদ্ধে শক্ত কোনো আইন না থাকায় এর বিস্তার রোধ করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সিরাজুল ইসলাম। তিনি জানান, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব জাল নোটের লেনদেনে কোনো সাক্ষী থাকে না। আবার সাক্ষী থাকলেও তারা আদালতে এসে সাক্ষ্য দিতে চান না। এ কারণে তাদেরকে বিচার করা সম্ভব হয় না। সহজেই ছাড়া পেয়ে যায় এবং আবার একই চক্রে জড়িয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে জাল নোট বিস্তার রোধে কঠোর আইন প্রণয়নের প্রতি জোর দেন তিনি।

প্রচলিত আইনানুযায়ী জাল নোট যার হাতে থাকে তাকেই বিচারের আওতায় আনা হয়। তাই কোনো নোটের যথার্থতা নিয়ে সন্দেহ হলে সেটা বাংলাদেশ ব্যাংক অথবা অন্য যেকোনো ব্যাংকে অবহিত করার কথা জানিয়েছেন সিরাজুল ইসলাম।

তবে ওই নোটটি জাল নোটের বিপরীতে আপনার আসল নোট ফেরত পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই এ ধরনের খেসারত দিতে না হলে অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে সতর্কতা ও সচেতনতার ওপরই জোর দিয়েছেন সিরাজুল ইসলাম। -বিবিসি বাংলা

(ঢাকাটাইমস/১০আগস্ট/জেবি)