পবিত্র ঈদুল আজহা

উদ্ভাসিত হই ত্যাগের মহিমায়

প্রকাশ | ১১ আগস্ট ২০১৯, ১৯:২৬ | আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৯, ১৩:২৯

আরিফুর রহমান দোলন

বছর ঘুরে আবার এসেছে ত্যাগের উৎসব ঈদুল আজহা। এদিন ধর্মপ্রাণ মুসলমান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি দেবেন। আর এর মাধ্যমে ঘোষিত হবে আল্লাহর প্রতি তার ভালোবাসা আর আনুগত্য।

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকাটাইমসের পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা।

প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে নবী হজরত ইব্রাহিম (আ.) স্বপ্নযোগে আল্লার কাছ থেকে আদিষ্ট হন তার প্রিয়তম বস্তু উৎসর্গ করার জন্য। তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য প্রিয় কনিষ্ঠ পুত্র ইসমাইলকে কোরবানি দিতে উদ্যত হন। প্রিয় বান্দার ত্যাগের সদিচ্ছায় সন্তুষ্ট হয়ে মহান রাব্বুল আলামিন হজরত ইসমাইলের পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি কবুল করেন।

ঈদুল আজহায় পশু কোরবানি আসলে ত্যাগের একটা প্রতীকী প্রকাশ। এর মাধ্যমে আমাদের মনের পশুত্বকে বিসর্জন দিয়ে নিজেকে নৈতিক ও আত্মিকভাবে পরিশীলিত করা হয়। তাই কোরবানি যেন লোক দেখানো উৎসব না হয় সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। কোরবানি হতে হবে শুদ্ধ নিয়তে। আসমানি কিতাব আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না এগুলোর গোশত ও রক্ত, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া।' (সূরা আল-হজ, আয়াত-৩৭)।

কোরবানির পশুর গোসত বণ্টনের ক্ষেত্রে শরিয়তের বিধান সঠিকভাবে মেনে চলতে হবে। এক ভাগ দরিদ্রদের জন্য, এক ভাগ আত্মীয়স্বজনের জন্য এবং এক ভাগ নিজের জন্য রাখব আমরা। তা না হলে কোরবানির বিধান ক্ষুণ্ন হয়ে তা শুধু পশু জবাই হিসেবে পরিগণিত হবে।

ঈদের আনন্দ একা উদযাপনের বিষয়  নয়। এই ধর্মীয় উৎসব ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব আর সাম্যেরও উপলক্ষ।  সবার মাঝে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার মধ্যেই এর সার্থকতা নিহিত। আমাদের চারপাশে গরিব-অসহায় মানুষ আছে, এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অনেকে, যে যার সাধ্যমতো তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে প্রত্যেকে।

এবারের ঈদে আনন্দের পাশাপাশি আছে ডেঙ্গু রোগ নিয়ে উদ্বেগ। ইতিমধ্যে ডেঙ্গু আমাদের বেশ কাঁদিয়েছে। এডিস মশাবাহিত এই ভাইরাস রোগের উৎকণ্ঠা মাথায় নিয়ে প্রিয়জনের কাছে ছুটে গেছে মানুষ। কোনো রূপ অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির মুখোমুখি না হয়ে সবাই যেন সুষ্ঠুভাবে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারে, সেটাই কামনা করি আমরা।

আর সরকারও নিশ্চয়ই প্রতিরোধ-প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছে। ডেঙ্গুর বিপদ সামনে রেখে দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ ও নগর কর্তৃপক্ষ তাদের কর্মীদের ঈদসহ সব ধরনের ছুটি বাতিল করেছে। তাদের এই ত্যাগকে সাধুবাদ জানাই আমরা। তবে অবশ্যই নাগরিক সমাজকে ঈদের ছূটিতে এডিস মশা প্রতিরোধের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে সব সময়।

পশু কোরবানির পর আর একটি দায়িত্বের কথা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। যেখানে-সেখানে পশু জবাই ও কাটাকুটির কারণে পরিবেশ-দূষণের বড় আশঙ্কা থেকে যায়। আমরা যদি নিজ দায়িত্বে রক্ত ও বর্জ্য মাটিচাপা দিই তাহলে ওই আশঙ্কা থেকে অনেকটা রেহাই মিলবে।

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন সিটি করপোরেশন তাদের বাসিন্দাদের কোরবানির পশু জবাইয়ের  জন্য নির্ধারিত স্থানের ব্যবস্থা করেছে। সেখানে প্যান্ডেলসহ আরও নানা সুবিধার বন্দোবস্ত আছে। আমরা এই সুবিধাটি গ্রহণ করলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় চমৎকার একটি সুফল মিলবে। পরিবেশ-দূষণ হবে কম। গত কয়েক বছর ধরে এই ব্যবস্থা হয়ে এলেও নাগরিকদের কাছ থেকে তেমন একটা সাড়া মেলেনি। আশা করি ধীরে ধীরে এই ব্যবস্থার সঙ্গে মানুষ খাপ খাইয়ে নেবে। 

সেটি যত দিন না হচ্ছে, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোর সচেষ্ট থাকতে হবে যত দ্রুত সম্ভব হাট ও পাড়া-মহল্লা থেকে কোরবানির পশুর বর্জ সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা জারি রাখা।

পবিত্র ঈদুল আজহার ত্যাগের মহিমা আমাদের সবার অন্তরকে মনুষ্যত্বের আলোয় উদ্ভাসিত করুক। ঈদ মোবারক।

লেখক: সম্পাদক, ঢাকাটাইমস এই সময়