কোরবানির জরুরি কিছু বিধান

প্রকাশ | ১১ আগস্ট ২০১৯, ২১:৪৬ | আপডেট: ১৮ আগস্ট ২০১৯, ০৯:৫৮

জহির উদ্দিন বাবর
ফাইল ছবি

কোরবানি সামর্থ্যবান মুসলমানদের জন্য ওয়াজিব বা অবশ্য পালনীয়। কোরআনে কোরবানির প্রসঙ্গ আলোচিত হয়েছে। অসংখ্য হাদিসে কোরবানির প্রতি তাগিদ করা হয়েছে। রাসুল সা. নিজে নিয়মিত কোরবানি করেছেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে কোরবানির নির্দেশ দিয়েছেন। কেউ সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপা বা এ পরিমাণ অর্থের মালিক হলে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব। নিজের কোরবানি যেমন নিজে করা যায় তেমনি অন্যের নামেও করা যায়। আসুন, কোরবানির জরুরি কিছু বিধান সম্পর্কে জেনে নিই-

কোরবানির পশু 

ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, গরু, মহিষ ও উট এই ছয় ধরনের পশু দ্বারা কোরবানি দেয়া যায়। এর বাইরে অন্য কোনো পশু দ্বারা কোরবানি বৈধ নয়। ছাগল, ভেড়া, দুম্বা কমপক্ষে এক বছর বয়সের হতে হবে। গরু ও মহিষের বয়স কমপক্ষে দুই বছর হতে হবে। উটের বয়স কমপক্ষে পাঁচ বছর হতে হবে। কোরবানির পশু ভালো এবং হৃষ্টপুষ্ট হওয়াই উত্তম। কোরবানির পশুতে কোনো খুঁত থাকা বাঞ্ছনীয় নয়।

শরিকানা কোরবানি

ছাগল, ভেড়া, দুম্বায় একজনের বেশি শরিক হয়ে কোরবানি করা যায় না। এগুলো একটি একজনের নামেই কোরবানি দিতে হবে। গরু, মহিষ, উটে সর্বোচ্চ সাতজন শরিক হতে পারেন। তবে কারও অংশ সাত ভাগের এক ভাগের চেয়ে কম হলে তা হবে না। মৃত ব্যক্তির নামেও কোরবানি হতে পারে। যার ওপর কোরবানি ওয়াজিব তার নামেই কোরবানি দিতে হবে। নিজের নামে দেয়ার পর আত্মীয়-স্বজনের নাম যোগ করা যাবে। তবে নিজের নাম না দিয়ে অন্যের নামে কোরবানি করা ঠিক হবে না। শরিকানা কোরবানিতে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা চাই। কারণ কারও উদ্দেশ্যে সামান্য ভেজাল থাকলে সবার কোরবানি নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। এজন্য পুরোপুরি জানাশোনা আছে এমন লোকদের শরিক করা উচিত। 

জবাই করার নিয়ম

নিজের কোরবানির পশু নিজে জবাই করা সবচেয়ে উত্তম। রাসুল সা. নিজের পশু নিজে জবাই করতেন। তবে অন্য কাউকে দিয়ে জবাই করানোরও সুযোগ আছে। একটি পশুতে কতজন শরিক সেটা জবাইয়ের আগেই নির্ধারণ করে নিতে হবে। কাগজে লিখিত আকারে উল্লেখ করার দরকার নেই, মনে মনে নিয়ত থাকলেই যথেষ্ট। জবাইয়ের সময় পশুর মাথা দক্ষিণ দিকে এবং পা পশ্চিম দিকে রেখে অর্থাৎ কেবলামুখি করে শোয়ায়ে পূর্ব দিক থেকে চেপে ধরতে হবে, তারপর ছুরি চালাতে করতে হবে। জবাইয়ের ছুরি যেন খুব ধারালো হয়, পশুর যেন কষ্ট কম হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আর কোরবানি করার সময় খেয়াল রাখতে হবে সিনার উপরিভাগ এবং কণ্ঠনালির মাঝামাঝি স্থানে যেন জবাই করা হয়। জবাইয়ের সময় আরবি নিয়ত জরুরি নয়। শুধু  ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলাই যথেষ্ট। নিজের পশু কোরবানির সময় পাশে থাকা উচিত।

কোরবানির গোশত

কোরবানির গোশত তিন ভাগে ভাগ করা উত্তম। এক ভাগ নিজের জন্য, এক ভাগ গরিবদের জন্য, আর এক ভাগ আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীদের জন্য। তবে এ ধরনের বন্টন করা ওয়াজিব নয়, মুস্তাহাব। বরং পুরো গোশত যদি নিজে রেখে দেয়, তাতেও কোনো অসুবিধা নেই, তবে তা অনুত্তম। কোরবানির গোশত শুকিয়ে বা ফ্রিজে রেখে দীর্ঘদিন খাওয়াতেও কোনো অসুবিধা নেই। তবে সমাজের সামর্থ্যহীন, গরিব-দুঃস্থদের বঞ্চিত করে নিজের ফ্রিজ ভরে রাখাটা সমীচীন নয়।

পশুর চামড়া

কোরবানির পশুর চামড়া ব্যবহারের উপযুক্ত করে কোরবানিদাতা নিজেও ব্যবহার করতে পারবে। তবে বিক্রি করলে পুরো মূল্য সদকা করা জরুরি। সদকার ক্ষেত্রে গরিব আত্মীয়-স্বজনকে প্রাধান্য দেয়া উত্তম। আর যে সব দীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গরিব ও এতিম ছাত্রদের ভরণ-পোষণ ও তাদের শিক্ষাদীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়, সেখানে চামড়ার মূল্য দান করলে অধিক সাওয়াবের আশা করা যায়। 

জবাইকারী ও কসাইয়ের পারিশ্রমিক

কোরবানির পশু জবাইকারী ও কসাইয়ের পারিশ্রমিক আলাদাভাবে পরিশোধ করতে হবে। কোনোক্রমেই তা কোরবানি চামড়া বা গোশত দিয়ে পরিশোধ করা জায়েজ নেই। অনেকে জবাইকারীকে চামড়াটি দিয়ে দেন এবং যারা কসাইয়ের কাজ করে তাদের গোশত দিয়ে দেন। এতে কোরবানি ত্রুটিপূর্ণ থেকে যায়। সামান্য কিছু অর্থের জন্য কোরবানি নষ্ট করা ঠিক নয়। তবে জবাইকারী ও কসাইকে ন্যায্য পারিশ্রমিক পরিশোধ করার পর উপহার হিসেবে গোশত, চামড়া দেয়া যেতে পারে। গরিব হলে চামড়া বিক্রির টাকা দান করা যেতে পারে।

কোরবানি করা হয় আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য। এটি একটি মহান ইবাদতও বটে। ত্যাগের এই ইবাদতটুকু লৌকিকতায় যেন বিপর্যস্ত না হয়ে পড়ে সে দিকে সবার লক্ষ্য রাখা উচিত। একমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য যাবতীয় বিধিবিধান পুরোপুরি জেনে কোরবানি করা প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য জরুরি।

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক