এডিসের লার্ভাতে ভরা সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের শৌচাগার

প্রকাশ | ১৩ আগস্ট ২০১৯, ১৯:৪৮ | আপডেট: ১৩ আগস্ট ২০১৯, ১৯:৫৯

কাজী রফিক, ঢাকাটাইমস

ডেঙ্গু নিয়ে প্রতিদিনই সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে ছুটছেন অগণিত রোগী। আর সেই হাসপাতালই যদি এডিস মশার প্রজননের নিরাপদ জায়গা হয় তাহলে সেটি বাড়ায় আতঙ্ক। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের শৌচাগারে জমে থাকা পানিতে লার্ভায় ভরা। তার ওপর ঘুরে বেড়াচ্ছে মশা। ডেঙ্গু আতঙ্কের মধ্যে মশা দেখলেই আঁৎকে উঠছে যে কেউ। তার মধ্যে হাসপাতালে মশার প্রজনন হচ্ছে দেখে শঙ্কিত রোগী ও স্বজনরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর হাসপাতালপল্লীখ্যাত শেরে বাংলা নগরের শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য খোলা হয়েছে নতুন দুটি ওয়ার্ড। হাসপাতালের মূল ভবনের ভেতরে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে পুরুষ ডেঙ্গু রোগীদের জন্য নতুন ওয়ার্ড। এ ওয়ার্ডটির বিপরীতেই রয়েছে একটি বাথরুম। ১২০৬ নম্বর বাথরুমটির ভেতরে প্রবেশ করতে দেখা গেল একটি নোংরা পরিবেশ।

ডান পাশে শেষ কক্ষটি শৌচাগার। কিন্তু তা ব্যবহার হয় না তেমন। শৌচাগারের মেঝেতে জমে আছে পানি। আর সেই পানিতে দেখা মিলল এডিসের লার্ভা। দেখা গেল, বিপুল পরিমাণ লার্ভা কিলবিল করছে এই বদ্ধ পানিতে। সেখান থেকে লার্ভাগুলো পরিনত হচ্ছে মশায়।

বদ্ধ অবস্থায় থাকা এই পানি কতদিন ধরে জমে আছে, তার উত্তর পাওয়া যায়নি বলতে পারেনি হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ। তবে শাহ আলম নামের এক রোগীর আত্মীয় জানান, তিনি পাঁচ দিন আগে তার ভাইকে নিয়ে এখানে এসেছেন। আসার পর থেকেই তিনি সেখানে পানি জমে থাকতে দেখেছেন। তবে সেখানে যে লার্ভা আছে, সেটি তিনি বুঝতে পারেননি। শুধু এই শৌচাগারটিই নয়, হাসপাতালের আরো বেশ কয়েকটি স্থানে দেখা মিলেছে জমে থাকা পানির। আর পানির অবস্থা দেখে মনে হয় তা বেশ কয়েকদিন ধরেই জমে আছে।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য মতে, ঈদের দিন সোমবার বিকাল পর্যন্ত এই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ৩৮৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি আরো ১৬০ জন। এখন পর্যন্ত হাসপাতালটিতে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে এক হাজার ৮২৮ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়ে ফিরে গেছেন ১ হাজার ৪৪৫ জন।

বাথরুমে এডিসের লার্ভার বিষয়ে জানতে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক ডা. উত্তর কুমার বড়ুয়ার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। গতকাল সোমবার এবং মঙ্গলবার তাকে বারংবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

এদিকে গত ২৮ জুলাই হাসপাতালটিতে অভিযান চালায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তখনো হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে থাকতে দেখা যায়। বিষয়টিকে তখন সিটি করপোরেশনের ঘাড়ে চাপিয়েছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সেসময় তারা দুদককে বলে, সিটি করপোরেশনকে বারবার জানানোর পরেও তারা হাসপাতালে মশক নিধন ওষুধ ছিটায়নি।

এ বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান মামুন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাদেরকে যতবার জানানো হয়েছে ততবার আমরা হাসপাতালে মশার ওষুধ ছিটিয়েছি। বর্তমানেও হাসপাতালটিতে সবদিকে নিয়মিত ওষুধ ছিটানো হয়। শুধু হাসপাতাল নয়, ডিএনসিসির কোনো এলাকা এখন আর মশক নিধন কর্মসূচির বাইরে নেই।’

এরপরও হাসপাতালের ভেতরে ওষুধ ছিটানোর বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানালে তারা সহজেই ব্যবস্থা নিতে পারেন বলেও জানান ডিএনসিসির এ কর্মকর্তা।

এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের ভেতরে আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুমতির ছাড়া ওষুধ দিতে পারি না। কারণ সেখানে অনেক রোগী আছে। কর্তৃপক্ষ আমাদের জানালে আমরা অবশ্যই সেখানে মশার ওষুধ দিব।’

তবে এ প্রতিবেদকের কাছে জানার পর ওই এলাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

ঢাকাটাইমস/১৩আগস্ট/কারই/ডিএম