পোস্তার এমন চিত্র আর দেখেনি এলাকাবাসী

প্রকাশ | ১৪ আগস্ট ২০১৯, ২০:৫১

সৈয়দ ঋয়াদ, ঢাকাটাইমস

পশুর চামড়া বেচাকেনার সবচেয়ে বড় বাজার রাজধানীর লালবাগের পোস্তা। কোরবানি ঈদের পর কয়েক দিন এখানে পা ফেলার জায়গা থাকে না। তবে এবারের চিত্রটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ঈদের তৃতীয় দিনেই সুনসান নীরবতা। এমন দৃশ্য এখানকার বাসিন্দারা আগে কখনো দেখেছেন বলে মনে করতে পারছেন না।

ঈদের দিন ও পরদিন কিছু চামড়া এলেও তৃতীয় দিনে তেমন কোনো চামড়া আসেনি। এতে আড়ৎদারদের চামড়া সংগ্রহের যে লক্ষ্যমাত্রা তার অর্ধেকও পূরণ হয়নি। এই পরিস্থিতিতে চামড়া শিল্প বড় ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।     

বুধবার সরেজমিনে পোস্তায় গিয়ে দেখা যায়, কোনো ভিড় নেই। আড়ৎদার ও টেনারি মালিকদের চোখে-মুখে হতাশার ছাপ। যখন পুরোপুরি ব্যস্ত থাকার কথা তখন তারা অলস সময় কাটাচ্ছেন।

হাজি মো. শাহাদাত হোসেন নামের এক আড়ৎদার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমাদের  নিজেদের যে পরিমাণ চামড়া দরকার দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এবার সে পরিমাণ চামড়া আসেনি। তবে আশা করছি আরও চামড়া আসবে।’

হঠাৎ চামড়ার দাম পড়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে পোস্তার এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমাদের দেশের চামড়া এখন চীন ছাড়া অন্য কোথাও যায় না। চীন আমাদের কাছ থেকে চামড়া নিয়ে ইউরোপের বাজারে বিক্রি করে।’ আমাদের এখানে ক্রেতা না আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিবেশ নিয়ে তারা সন্তুষ্ট নয়, সে কারণেই ইউরোপের বাজার আমার হারিয়েছি।’

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে, এক বছরে দেশের চামড়ার মোট চাহিদার ৯০ ভাগই পূরণ হয়ে থাকে কোরবানির ঈদের মৌসুমে। আর এই চামড়া সংগ্রহ করা হয় ঈদের তিন দিনে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এ তিন দিন ট্রাক বোঝাই করে হাজার হাজার মৌসুমী ব্যবসায়ী তাদের কেনা চামড়া নিয়ে আসেন পোস্তায়।

কিন্তু এবারের পোস্তার চিত্র একদমই ভিন্ন। এতে হতাশ আড়ৎ মালিকরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক আড়ৎদার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বড় কোনো চক্র কাজ করছে আমাদের চামড়া শিল্প ধ্বংস করতে। এমন অবস্থা হলে কোনো মানুষই আর চামড়া বিক্রি করবে না, মাটিতেই পুঁতে দেবে।’

চামড়ার দাম হঠাৎ পড়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘চামড়ার দাম কমে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। এটা অসাধু সিন্ডিকেট কাজ করছে। চামড়া কিনতে বাজারে টাকা ছাড়ছে না ব্যবসায়ীরা। মৌসুমি ব্যবসাযীদেরও এরা জিম্মি করছে।’

লালবাগের বাসিন্দা রোমেল হোসেন হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ঈদে চামড়া কিনে প্রতি বছরই আমরা ব্যবসা করি। এবার চামড়াই আসেনি।  আড়ৎদাররা সবাই সিন্ডিকেট করেছে। চামড়া নিয়ে এলেও তার সঠিক মূল দেন না। যে কারণে গ্রামের মানুষ চামড়া নিয়ে আসে না।’

‘আজ ২০ বছর ধরে এই এলাকায় আছি। এর আগে কখনো কোরবানির ঈদের সময় এমন নীরব পোস্তা দেখিনি।’

(ঢাকাটাইমস/১৪আগস্ট/এসআর/জেবি)