‘ক্ষোভের চামড়া’ পড়ছে এখানে সেখান

কাজী রফিক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৪ আগস্ট ২০১৯, ২২:০৭

কোরবানির ঈদের আনন্দ এবার ক্ষোভে পরিণত হয়েছে চামড়ার দরপতনের কারণে। এত কম দামে চামড়া বিক্রির কথা বর্তমান প্রজন্ম দেখেনি। আর এই ক্ষোভের কারণে নজিরবিহীন ‘নীরব প্রতিবাদ’ও দেখেছে বাংলাদেশ।

খুচরা ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কম দামে চামড়া বিক্রি না করে তা ফেলে দিতে বেশি পছন্দ করছেন। কেউ কেউ মাটিতে পুঁতে প্রতিবাদ জানিয়েছেন চামড়ার এমন অস্বাভাবিক দরপতনের। কেউ চামড়া ফেলে গেছেন রাস্তায়, কেউ নদীতে।

ঢাকা নদীবন্দরের তুরাগ নদের আমিনবাজার এলাকায় অবিক্রীত বিপুল পরিমাণ চামড়া নদীতে ফেলে গেছেন একদল ব্যবসায়ী। দাম কম হওয়ার কারণে চামড়া বিক্রি করতে পারেননি। আর দুই দিন ধরে চামড়া রেখে দেয়ার কারণে চামড়ায় পচন ধরেছে। তাই তা নদীতে ফেলার কথা জানান তারা।

নদীরক্ষায় বুড়িগঙ্গা নদীর তীরের হাজারীবাগ এলাকা থেকে ট্যানারি সরিয়ে নিয়েছে সরকার। এই স্থানান্তরের জন্য সরকারের ভাণ্ডার থেকে খরচ হয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ।

এছাড়া নদীরক্ষায় সম্প্রতি নানাবিধ পদক্ষেপ নিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ নদী উদ্ধারের উচ্ছেদ অভিযানের পাশাপাশি নদী দূষণের দায়ে অনেককে শাস্তি এবং জরিমানার আওতায় এনেছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআইডব্লিউটিএ’র যুগ্ম পরিচালক এ কে এম আরিফ উদ্দিন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘নদীতে চামড়া ফেলে যাওয়ার ঘটনা জানার পর তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’

‘আমি বিষয়টি জানার পরে আমিনবাজার নৌপুলিশের ওসির সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বিষয়টি দেখবে। এছাড়া আমাদের (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মকর্তাদের সেখানে পাঠিয়েছি। তারাও বিষয়টি জেনে আমাকে জানাবে এবং আমরা উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

গোমতী সয়লাব

চামড়া ফেলা হয়েছে কুমিল্লার গোমতী নদীতেও। দরপতনের কারণে লোকসানে চামড়া বিক্রি না করে তা ফেলে দিয়েছে স্থানীয় খুচরা ব্যবসায়ীরা।

জেলার পাড়ামহল্লায় মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীদের সংগ্রহ করা চামড়া বিক্রি করতে পারেননি অনেকেই। কোথাও দাম নেই।

ছয় থেকে সাতশ টাকা দরে চামড়া কিনে তার দাম পাওয়া যাচ্ছে দুই থেকে আড়াইশ টাকা। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হন শতাধিক খুচরা ব্যবসায়ী। সন্ধ্যা পর্যন্ত গরু, মহিষের চামড়া সর্বোচ্চ তিনশ টাকা আর ছাগল ও ভেড়ার চামড়া ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত দাম ওঠে। শহরের একটু দূরে ভাড়ায় ট্রাকে করে চামড়া শহরে এনে বিক্রি করে ট্রাক ভাড়ার টাকাই উঠেনি কারও কারও। এই ক্ষোভে নদীতে তারা ফেলেছেন চামড়া।

এছাড়া জেলার অনেক স্থানে চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ স্টেডিয়ামের চারপাশ যেন ভাগাড়

চামড়া পড়ে আছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ফতুল্লার জালকুড়ি আর্ন্তজাতিক ভেন্যু খান সাহেব ওসমান আলী ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উল্টো পাশের রাস্তায়। চামড়া বিক্রি করতে না পেরে সেখানে হাজার হাজার চামড়া ফেলে যাওয়া হয়। মঙ্গলবার সকালে ফেলে যাওয়া এসব চামড়া পচে দুর্গন্ধের সৃষ্টি করে।

প্রতিবছর শহরের চাষাঢ়া এলাকায় পাইকাররা চামড়া কিনতে এলেও এবছর কোনো পাইকারের দেখা মেলেনি। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কয়েকজন ব্যবসায়ী দেখা পাওয়া গেলেও দুপুরের পর থেকে আর কোনো পাইকারের দেখা মেলেনি। ফলে অবিক্রীত চামড়া রাস্তায় ফেলে যান মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। বুধবার বিকাল পর্যন্ত রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে হাজার হাজার চামড়া।

টাঙ্গাইলে মাটিতে পুঁতে প্রতিবাদ

টাঙ্গাইলে ঈদুল আজহার একদিন চলে গেলেও চামড়া কিনতে সেভাবে যাননি বড় ব্যবসায়ীরা। দুই একজন ট্যানারি মালিক ও সাধারণ ব্যবসায়ী বাজারে এলেও দাম বলছেন কেনা দামের চেয়ে দুই থেকে তিনশ টাকা কমে। এতে অনেকেই রাগে ও দুঃখে চামড়া বিক্রি না করে মাটির নিচে পুঁতে ফেলেছেন অনেক ব্যবসায়ী।

ব্যবসায়ীরা জানান, কমদামে কেনা এই চামড়াগুলো স্থানীয় কিছু শ্রমিক লবণ দিয়ে গুদামজাত করেছেন। আগামী হাটে বড় বড় কোম্পানির ট্যানারি মালিকরা তাদের কাছে এসব চামড়া কিনতে আসবেন।

পাকুটিয়া চামড়ার বাজার ইজারাদার আব্দুল কাদের খান বলেন, ‘দেখেন সারা বাজারে কোনো ক্রেতা নেই। ট্যানারি মালিকরা চামড়া কিনছেন না।’

‘ট্যানারি মালিকদের কেউ কেউ সিন্ডিকেট করে নির্ধারিত লোকজন দিয়ে কিছু কিছু চামড়া সংগ্রহ করছেন। এতে আমাদের মতো ব্যবসায়ীরা যারা বছরের এই সময়টার জন্য অপেক্ষায় থাকি তাদের মহাবিপদ হয়েছে।’

চট্টগ্রামে সড়কে ফেলে গেছেন ব্যবসায়ীরা

চট্টগ্রামের বিভিন্ন সড়কেও পড়ে থাকতে দেখা যায় হাজার হাজার চামড়া। মঙ্গলবার বিকাল থেকে আতুরার ডিপো এলাকায় চামড়া নিয়ে হাজির হন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘ অপেক্ষার পর তা বিক্রি না হওয়ায় রাতে হাজার হাজার চামড়া সড়কে ফেলে রেখে চলে যান অনেকে।

ব্যবসায়ীরা জানান, তাদের প্রত্যাশা ছিল শেষ দিকে এসে পাইকারি বাজারে চামড়ার দাম বাড়বে। কিন্তু ঘটেছে বিপরীত। চামড়ার দাম বাড়েনি। তাই খোলা আকাশের নিতে সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে গেছে অনেক চামড়া।

চামড়া ব্যবসায়ী জানে আলম বলেন, ‘তিন থেকে চারশ টাকায় ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনেছে সাথে নানা খরচ যোগ হয়েছে। পাইকার দাম বলছে দেড় থেকে দু’শ টাকা। ফলে লাখ লাখ টাকার চামড়া রাস্তায় ফেলে চলে গেছে।’

ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম বলেন, ‘দাম না পাই অনেকে চামড়া ফেলাই গেইয়্যি। বউত চামড়া নষ্ট হইল। এগিন তো আসলে চামড়া নষ্ট ন হইল, দ্যাশের সম্পদ নষ্ট হইল দি।’

মঙ্গলবার বিকালে নগরীর আতুরার ডিপো এলাকায় বুলডোজারের সহায়তায় চামড়া ময়লার ভাগাড়ে ফেলতে দেখা গেছে। এক পরিচ্ছন্ন কর্মী বলেন, ‘চামড়া পচে গন্ধ বেড়িয়েছে। খারাপ লাগছে এতো টাকার সম্পদ নষ্ট হলো। আমরা জনসাধারণের সুবিধার জন্য দ্রুত এসব পচা চামড়া সরিয়ে নিচ্ছি।’

(ঢাকাটাইমস/১৪আগস্ট/ডব্লিউবি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :