ভৈরবে বঙ্গবন্ধুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী

‘তোরা কিসের মিলাদের আয়োজন করেসিস...’

রাজীবুল হাসান, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ)
| আপডেট : ১৫ আগস্ট ২০১৯, ১৪:১৬ | প্রকাশিত : ১৫ আগস্ট ২০১৯, ১২:৪৫

‘তোরা কিসের মিলাদের আয়োজন করেসিস, এত বড় সাহস, এখন জেলে যেতে হবে।’ পুলিশের সদস্যরা এসব কথা বলেই সবাইকে লাঠিপেটা শুরু করল। পায়ের বুট আর বন্দুকের বাট দিয়ে আঘাত করতে লাগল যুবলীগ নেতাকর্মীদের। পুলিশের নির্যাতনে সেদিন অনেকেই রক্তাক্ত হয়েছিলেন। উপস্থিত কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পেলেন না।

বঙ্গবন্ধুর হত্যার এক বছর পর ১৯৭৬ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক শেখ মজিবুর রহমানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী ভৈরবে পালন করতে গিয়ে এই ঘটনাটি ঘটেছিল।

এদিন স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করতে গিয়ে ২২ জন নেতাকর্মী পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিল। পরে তাদের ভৈরব থানায় নিয়ে অমানসিক নির্যাতনের পর তাদের জেলে পাঠানো হলো।

সেদিন আয়োজকদের অপরাধ ছিল বঙ্গবন্ধুর নামে মিলাদ পড়ানো। তারপর দীর্ঘদিন কারাভোগের পর পর্যায়ক্রমে তাদের কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়। সেই সাহসীদের কথা ভৈরবে এখন কেউ স্মরণ করে না। তারা আজ অবহেলিত।

সেদিন গ্রেপ্তার ২২ জনের মধ্যে ছয়জন মারা গেছেন। এদের কয়েকজনের পরিবার এখনও দুঃখ-কষ্ট ও দরিদ্রতার কষাগাতে দিন কাটাচ্ছেন। সেদিন যারা গ্রেফতার হয়েছিলেন, তারা হলেন- তৎকালীন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফখরুল আলম আক্কাছ ( বর্তমান ভৈরব পৌর মেয়র), আসাদুজ্জামান ফারুক (বর্তমানে যুগান্তরের সাংবাদিক), রুহুল আমিন, মাহাবুব, মতিউর রহমান, মফিজুর রহমান, মোশারফ হোসেন (জজ মিয়া) , জিল্লুর রহমান জিল্লু, আসাদ মিয়া, আতাউর রহমান, আসাদুল হক শিশু, ফিরোজ মিয়া, দীলিপ চন্দ্র সাহা ও তার ভাই দীজেন্দ্র চন্দ্র সাহা, ফজলুর রহমান, আবদুল হামিদ, ইদ্রিছ মিয়া, মাহবুব আলম, রসরাজ সাহা, সুবল চন্দ্র কর, শাহজালাল হোসেন ও আজমল ভূইয়া।

বঙ্গবন্ধুর ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী আজ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে ঘাতকদের হাতে নিহত হন। জাতির জনকের হত্যার পর দেশে সামরিক শাসন জারি করা হয়। তখন সমরিক আইন প্রশাসক ছিলেন জিয়াউর রহমান। তখন সামরিক সরকারের ভয়ে বঙ্গবন্ধুর নামটি পর্যন্ত কেউ উচ্চারণ করতে পেত না। দেশের অধিকাংশ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী সেই সময়ে আত্মগোপনসহ কারাগারে ছিরেন। এই দুঃসময়ে ভৈরবের ২২ জন নেতাকর্মী তৎকালীন হাজী আসমত কলেজের শহীদ আশুরঞ্জন ছাত্রাবাসে (বর্তমান শৈবাল হোটেল) বঙ্গবন্ধুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর আয়োজন করেছিল। শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে মিলাদ মাহফিল, কোরআন খতম ও দোয়ার আয়োজন করা হয় সেদিন।

বিকাল সাড়ে ৩টায় ১২ জন মৌলভী ছাত্রাবাসে এসে কোরআন খতম শুরু করেন। বিকাল ৪টার মধ্যে একে একে ২২ জন নেতাকর্মী মিলাদ মাহফিলে উপস্থিত হন। মিলাদে আসার কথা ছিল, কিন্তু সামরিক সরকারের ভয়ে শেষ পর্যন্ত অনেকেই মিলাদে উপস্থিত হননি।

সেদিনের গ্রেপ্তার সবচেয়ে কম বয়সী ছাত্রলীগ কর্মী আসাদুজ্জামান ফারুক বললেন, ‘মিলাদ পড়ানোর অপরাধে গ্রেপ্তার হব তখন ভাবতেও পারেনি। এই অপরাধে সেই সময় ছয় মাস কারাগারে ছিলাম। ১৯৭৬ সালে আওয়ামী লীগের অনেক বড় বড় নেতারা মিলাদ পড়াতে সাহস পাননি। এখন দল ক্ষমতায়, তাই অনেক নেতাই ক্ষমতা ভোগ করছে; কিন্তু আমরা দলের কাছে মূল্যহীন।’

গ্রেপ্তার রসরাজ ও ফিরোজ মিয়া ঢাকাটাইমসকে দুঃখ করে বলেন, ‘আমাদের কথা এখন কেউ স্মরণ করে না। আমরা আজ অবহেলিত। ১৫ আগস্টের দলীয় অনুষ্ঠানে দাওয়াত কার্ডটি পর্যন্ত আমরা পাই না।’

সেদিনের গ্রেপ্তার যুবলীগ নেতা ফখরুল আলম আক্কাছ বললেন, ‘বঙ্গবন্ধুর মত মহান নেতাকে পরিবারসহ হত্যা করা হয়। আমরা সেদিন তার মৃত্যুবার্ষিকীটিও পালন করতে পারলাম না। তখন সামরিক সরকারের এতটা ভয় ছিল বঙ্গবন্ধুর কোন অনুসারী এদেশে রাখা যাবে না। জাতির জনকের মিলাদের আয়োজন করার অপরাধে সেই সময় এক বছর জেল খাটলাম।’

(ঢাকাটাইমস/১৫আগস্ট/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :