ট্রান্সফর্মার না, আগুনের সূত্রপাত প্লাস্টিক কারখানা থেকে
রাজধানীর লালবাগের পোস্তা পুলিশ ফাঁড়ি এলাকায় অগ্নিকা-ের মূল কারণ এখনো নিশ্চিত করেনি ফায়ার সার্ভিস। তবে আগ্নিকা-ের কারণ হিসেবে কারখানা মালিকরা দায়ী করছেন বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মারকে। অন্যদিকে প্রত্যক্ষদর্শী ও বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তাদের বয়ানে উঠে এসেছে ভিন্ন তথ্য। তারা বলছেন, আগুনের সূত্রপাত অগ্নিকা-ের শিকার হওয়া কারখানা থেকেই।
বুধবার রাত দশটার কিছু পরে পোস্তার একটি প্লাস্টিকের কারখানায় অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিস জানায়, রাত ১০টা ৪০ মিনিটে তাদেরকে আগুনের কথা জানালে নয় মিনিটের মধ্যে তারা ঘটনাস্থালে পৌঁছান।
প্রায় আড়াই ঘণ্টা চেষ্টার পর রাত ১টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের ১৬টি ইউনিটের ৮০ জন কর্মীর পাশাপাশি যোগ দেন স্থানীয়রা। সকলের সম্মিলিত চেষ্টায় আগুনটি বড় আকার ধারণ করতে পারেনি।
বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ওই আড়াই ঘণ্টার আগুনে পুড়ে গেছে পোস্তার তিনটি কারখানা। এরমধ্যে রয়েছে একটি জুতার কারখানা, একটি প্লাস্টিকের খেলনা প্রস্তুতকারী কারখানা এবং একটি টেস্টটিউব তৈরির কারখানা।
আগুনে সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে কারখানার সব মালামাল এবং মেশিনপত্র। তবে ঈদের ছুটিতে শ্রমিকরা কারখানায় না থাকায় কেউ হতাহত হননি।
বায়ো ল্যাব নামের টেস্টটিউব তৈরিকারী কারখানার মালিক বশির আলম। ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে পাওয়া না গেলেও বশির আলমের বোন এবং কারখানার দ্বায়িত্বে থাকা আয়েশা আক্তার জানান, বুধবার রাতে কারখানার পেছন দিকের একটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মারে সমস্যা হয়। সেটি ঠিক করতে ডিপিডিসি কর্মকর্তারা আসেন।
আয়েশা বলেন, ‘বিদ্যুৎ অফিসের লোক আইসা এইটা ঠিক করতে ছিল। তখন এটা আবার ব্লাস্ট হয়। সবদিকে টিন ছিল, টিনের মধ্যে আইসা লাগাতে ধামধাম কইরা ধইরা গেছে।’
আয়েশা সিদ্দিকার মতো একই তথ্য জানানোর চেষ্টা করেছেন স্থানীয় অনেকেই। কিন্তু ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেলো ভিন্ন কিছুই।
যে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মার থেকে আগুনের সূত্রপাতের কথা বলে হচ্ছে, সেখানে একত্রে দুইটি ট্রান্সফর্মার রয়েছে। যার দুটিই সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় রয়েছে। এমনকি প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুসারে যেখানে প্রথম আগুন দেখতে পাওয়া যায়, সেখান থেকে ট্রান্সফর্মারের দূরত্ব প্রায় চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ ফুট।
অগ্নিকা-ের শিকার হওয়া কারখানার পাশের দেয়ালটি আগুনে তাপে ভেঙে পড়েছে। আর কারখানার ভেতরে দেখা যাচ্ছে বড় আকারের বেশ কয়েকটি মেশিন। যা সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. রবিন বলেন, ‘আগুন লাগার টাইমে কারখানার ভেতরে কেউ ছিল না। সবগুলা কারখানাই ঈদের কারণে বন্ধ।’
স্থানীয় কারখানাগুলোতে বিভিন্ন ধরনের দার্হ্য পদার্থ আছে বলে জানান তিনি। বলেন, ‘এখানে যে কয়টা কারখানা আছে তার সবগুলাই প্ল্যাস্টিক বা পলিথিনের। এগুলা বানাইতে ক্যামিকেল লাগেই। এগুলাতে আগুন লাগলে সহজে নিভে না।’
ঘটনাস্থলের পেছনের কারখানাগুলোর দেখা শোনার দায়িত্বে আছেন শ্রী চিররঞ্জন দাস। তিনি জানান, ট্রান্সফর্মারটি থেকে মাঝে মধ্যে আগুনের ছোট ছোট ফুলকি পড়ত। কিন্তু সেখান থেকে আগুন লাগার কোনো ব্যবস্থা নেই। বুধবার রাতে ট্রান্সফর্মারের প্রায় চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ ফুট দূরের কারখানায় আগ্নিকা- ঘটে।
তিনি বলেন, ‘আগুন লাগার টাইমে আমি ছিলাম। ট্রান্সফর্মার থেকে আগুন লাগে নাই। আগুন লাগছে কারখানা থেকে। যেখানে আগুন লাগছে, ঐ কারখানার পুরা দেওয়ালটা পড়ে গেছে। এইখানে কিছু হয় নাই।’
ডিপিডিসি লালবাগ বিভাগের অভিযোগ কর্মকর্তা আমির হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের কোনো ট্রান্সফর্মার থেকে আগুন লাগে নাই। ওখানে আমাদের যতগুলো ট্রান্সফর্মার আগে তার সবগুলোই অক্ষত আছে।’
ঢাকাটাইমস/১৫আগস্ট/কারই/ইএস