জাতীয় শোক দিবস

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের আগে খুনিদের ফেরাতে হবে

প্রকাশ | ১৫ আগস্ট ২০১৯, ১৬:১৩ | আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৯, ১৬:৫২

অনলাইন ডেস্ক

১৫ আগস্ট জাতীয় শোক ও বেদনার দিন। বাংলাদেশ ও বাঙালির সবচেয়ে হদয়বিদারক ও মর্মস্পর্শী শোকের দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে ঘাতকেরা হত্যা করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। একই সঙ্গে তারা হত্যা করে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের, যাদের মধ্যে ছিল শিশুপুত্র রাসেলও। তবে বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ওই সময় দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে যান ঘাতকের বুলেট থেকে।

প্রতিবছর দিনটি আসে বাঙালির হৃদয়ে কষ্টের দীর্ঘশ্বাস হয়ে। এদিন বাঙালি জাতি গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় তার শ্রেষ্ঠ সন্তানকে স্মরণ করে। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট যারা জীবন দিয়েছেন, তাদের প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড ছিল প্রকৃত অর্থে অনেক সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের অংশ। ঘাতক ও ষড়যন্ত্রীরা চেয়েছিল বাংলাদেশকে আবার একাত্তরের পরাজিত শক্তির পদানত করতে। তাই ১৫ আগস্ট তারা জাতির অস্তিত্বের ওপর আঘাত হানে। পরবর্তী সময়ে তারা রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি উপড়ে ফেলে। সংবিধান থেকে বাদ দেয় ধর্মনিরপেক্ষতা। জেলখানায় হত্যা করে বঙ্গবন্ধুর সহযোগী জাতীয় চার নেতা- সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও এম মনসুর আলীকে। এভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভোমত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দিতে থাকে কুচক্রীরা। তবে বেশি দিন টিকে থাকতে পারেনি তারা।

কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার অবহেলায় নীরব-নিভৃতে কেঁদেছে। জাতির ওপর কলঙ্কের বোঝা হয়ে চেপেছিল তা। নানা বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার, যার নেতৃত্বে রয়েছেন বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা, ১৫ আগস্ট ও জেলহত্যার বিচার সম্পন্ন ও রায় কার্যকর করতে সক্ষম হয়েছে। তবে তার জন্য জাতিকে অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘদিন। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর দীর্ঘ ২১ বছর তো বিচারের আশা করাই ছিল সুদূরপরাহত।

কেননা ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ক্ষমতা দখলকারী খন্দকার মোশতাক আহমদ ইনডেমনিটি জারি করে হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছিলেন। পরে জিয়াউর রহমান সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সেই অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত করেছিলেন। সেই বাধা কেটে একসময় আলোর দেখা পায় ১৫ আগস্ট হত্যা মামলা।

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার শেষ হলেও সব ঘাতকের সাজা কার‌্যকর হয়নি এখনো। পাঁচ ঘাতকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে বটে, কিন্তু বিদেশে পালিয়ে থাকা ছয় খুনিকে এখনো দেশে আনতে পারেনি সরকার। এত দীর্ঘ সময়ে পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে না পারা অত্যন্ত দুঃখজনক।

পলাতক খুনিদের মধ্যে দুজনের অবস্থান জানা আছে সরকারের। তাদের একজন নূর চৌধুরী আছেন কানাডায়। রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে। কিন্তু তারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদের কাউকেই ফিরিয়ে আনার মতো কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। এ ছাড়া কর্নেল (বরখাস্ত) রশিদসহ অন্য তিনজনের হদিস জানা নেই। দুটি বিষয়ই জাতির বুকে পাথরের মতো ভারী হয়ে আছে।

বঙ্গবন্ধু-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দিবসে সংবাদমাধ্যমে খবর হয় পলাতক খুনিদের বিষয়টি। সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ব্যক্তিরা আশ্বাস দেন খুনিদের ফিরিয়ে আনতে কাজ করছেন তারা। কিন্তু তার কোনো ফল মেলেনি আজও , কেবল কথার মধ্যে রয়ে গেছে দীর্ঘদিন ধরে।

আমরা আশা করি, বঙ্গবন্ধুর এই ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকীতে সরকার ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শপথ নেবে যে, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর আগেই বিদেশে পলাতক খুনিদের দেশে এনে রায় কার‌্যকর করা হবে।

বঙ্গবন্ধু সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তুলতে সংগ্রাম করে গেছেন।  তার কন্যা শেখ হাসিনার  নেতৃত্বে দেশ আজ সেদিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ আজ এক সমীহ জাগানো নাম। মাথাপিছু আয় থেকে শুরু করে সামাজিক-অর্থনৈতিক নানা সূচকে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে অনেক এগিয়ে বাংলাদেশ। কিন্তু বলা হচ্ছে সুশাসনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট পিছিয়ে বাংলাদেশ। এবারের জাতীয় শোক দিবসে আমাদের অঙ্গীকার হোক- বঙ্গবন্ধুর আজীবনের স্বপ্ন ঘুষ-দুর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তোলার।