রুয়েট শিক্ষককে পিটুনি: তোলপাড়েও গা-ছাড়া পুলিশ

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী
| আপডেট : ১৬ আগস্ট ২০১৯, ১৬:১৬ | প্রকাশিত : ১৬ আগস্ট ২০১৯, ১৫:৪৩

স্ত্রীকে যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করয় রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষক রাশিদুল ইসলামকে পিটুনির ঘটনায় তোলপাড় চলছে কয়েকদিন ধরে। কিন্তু এ নিয়ে গা ছাড়া মনোভাব পুলিশের।

প্রায় এক সপ্তাহ চলে গেলেও কাউকে আটক করা হয়নি। দায়সারা গোছের বক্তব্য দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আবার একজন পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনার সত্যতা নিয়েই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

গত ১০ আগস্ট শিক্ষক রাশিদুল ইসলাম স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছিলেন রাজশাহী মহানগরীর মনিচত্বর এলাকায়। রুয়েটের ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের এই শিক্ষক ভালো ফলাফলের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে স্বর্ণ পদক পেয়েছিলেন।

কয়েকজন তরুণ ওই শিক্ষকের স্ত্রীকে ইচ্ছা করে গায়ে ধাক্কা দিয়েছিলেন। আর প্রতিবাদ করতে গিয়ে পিটুনি খান রাশিদুল। পুরো ঘটনাটি দেখেও এগিয়ে আসেনি শত শত মানুষ।

ভুক্তভোগী রাশিদুল ফেসবুকে ঘটনাটির বর্ণনা দিয়ে লেখেন, ‘মেনে নিন নয়তো দেশ ছেড়ে চলে যান। এ দেশে আপানার চোখের সামনে আপনার মা, বোন অথবা বউ ধর্ষিত হলেও প্রতিবাদ করবেন না, আশেপাশে কাউকে পাবেন না। মার খেয়ে মরবেন। কারণ, আপনি একটা জানোয়ার, আমিও একটা জানোয়ার, জানোয়ারে ভরা সমাজ আমাদের।’

মুহূর্তেই ইন্টারনেটের দুনিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায় এই ঘটনাটি। উঠে নিন্দার ঝড়। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানচ্ছে লাখো মানুষ। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃশ্যমান কোনো তৎপরতাই নেই।

রাশেদ এরই মধ্যে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন, তিনি দেশে না ফেরার বিষয়ে ভাববেন। তিনি লেখেন, ‘ধরেই নিয়েছিলাম, পিএইচডি শেষ করে দেশে ফিরব, মা বাবা চান না বাইরে সেটল হই। এই ঘটনার পর দ্বিতীয়বার ভাবব অবশ্যই।’

ঘটনাস্থল রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানাধীন। এই ঘটনায় কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চাইলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিবারণ চন্দ্র বর্মণ তখন জানান, ওই শিক্ষকের শ্বশুর তাকে বিষয়টি ফোন করে জানিয়েছেন। এরপর তিনি নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। আশপাশে থাকা ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজ দেখেছেন। কিন্তু কিছু বুঝতে পারেননি। এ নিয়ে ভুক্তভোগী কোনো অভিযোগ না করায় তিনি নিজেই থানায় সাধারণ ডায়েরি করছেন বলে জানান ওসি। বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ কিংবা মামলা হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পুলিশ বলছে, তারা শিক্ষক রাশিদুলকে থানায় আসতে বারবার অনুরোধ করছেন। কিন্তু তিনি আসছেন না। একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বলেন, ‘ঘটনা হয়ত কিছুটা ঘটেছে, এখন নিজে হিরো হওয়ার জন্য স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তা না হলে ওনি কেন আসছেন না।

এ বিষয়ে কথা বলতে বৃহস্পতিবার রাতে শিক্ষক রাশিদুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আইনের আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে। আসলে এখন এ বিষয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না। পরবর্তীতে কথা বলা যাবে।’

রাশিদুলের বিভাগ ইইই এর প্রধান অধ্যাপক অজয় কৃষ্ণ সরকার বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে বখাটেদের মিনিমাম শনাক্ত করাটা পুলিশের উচিত ছিল। সেটা শুধু শিক্ষক বলে নয়, যে কেউই হেনস্থার শিকার হলে আইন প্রয়োগ করা উচিত।’

ওই শিক্ষকের বর্ণনা

ফেসবুকে শিক্ষক রাশিদুলের ঘটনার বর্ণনা ছিল এমন: ‘সাহেববাজার মনিচত্বরের মত জনবহুল এলাকাতেও আমার বউ হেনস্তার শিকার হয়। এক পাল ছেলের মধ্যে একজন আমার বউকে পেছন থেকে কয়েকবার ইচ্ছাকৃত ধাক্কা দেয়। দুই-তিনবার সহ্য করলেও পরেরবার প্রতিবাদ করি। ব্যাস, সোনার ছেলেদের দাপট শুরু। শেষে আমাকে সোনাদীঘি মসজিদের সামনে ৫-৭ জন মিলে ঘিরে ধরে মারা শুরু করে। এই পর্যন্ত না হয় মেনে নিলাম।’

‘কিন্তু ওখানে কম করে হলেও ৫০ জন আমার মার খাওয়া দেখছিল। একজনও এগিয়ে আসেনি। মার খাওয়ার এক পর্যায়ে আমি দর্শকদের উদ্দেশ্যে বলি, ‘বাঁচান আমাকে’, কোন রেসপন্স পাইনি। একজন মোটরসাইকেল থামিয়ে আমার মার খাওয়া দেখছিল, আমি সাহায্য চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মোটরসাইকেল চালিয়ে চলে গেল।’

‘মার খেয়ে কাপুরুষ আমি দর্শকদের বলি, আপনারা আজ এগিয়ে এলেন না, একদিন আপনার বউয়ের সঙ্গে এমন হলেও কেউ এগিয়ে আসবে না। ও আমার বউ, গার্লফ্রেন্ড না, কাবিননামা দেখাতে হবে আপনাদের?’

“এ সময় একজন ভিড়ের মধ্য থেকে বলে বসল, ‘হ্যাঁ, কাবিননামা নিয়েই চলাফেরা করতে হবে’।”

ঢাকাটাইমস/১৬আগস্ট/আরআর/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :