এডিসের সম্ভাব্য বহু আস্তানায় নজর নেই কারও

প্রকাশ | ১৭ আগস্ট ২০১৯, ১০:০৯ | আপডেট: ১৭ আগস্ট ২০১৯, ১১:৫১

কাজী রফিক

ডেঙ্গু রোগের বিস্তারের মধ্যেও এর বাহক এডিস ইজিপ্টি মশার সম্ভাব্য বেশ কিছু প্রজননক্ষেত্র এখনো অরক্ষিত পড়ে আছে। এডিসের প্রজননক্ষেত্রে ধ্বংসে অভিযানের মধ্যেও সম্ভাব্য এসব আস্তানা পরিচ্ছন্ন করার কোনো উদ্যোগ নেই।

এরই মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার ছুঁয়েছে। গত ২০ দিন ধরে প্রতিদিনই রোগীর সংখ্যা রেকর্ড হচ্ছে। মৃতের সংখ্যাও গণমাধ্যমের হিসাবে একশ ছাড়িয়েছে। 

এই পরিস্থিতিতে এডিস মশা নির্মূলে এর লার্ভা ধ্বংসের ওপর জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ কীটতত্ত্ববিদরা। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের প্রধান কীটতত্ত্ববিদ ভুপেন্দর নাগপাল ঢাকায় এক সেমিনার করে বাড়িঘরের পাশাপাশি বাইরের বেশ কিছু সম্ভাব্য প্রজনন স্থলের কথা বলে গেছেন।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমনই কিছু জায়গা চোখে পড়েছে যেগুলো এডিসের আবাসস্থল হতে পারে।

মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধের তিন রাস্তার মোড়ের বছিলা নতুন রাস্তার পাশে রয়েছে বেশ কিছু ‘ঢাকাই মেশিন’। ভবন নির্মাণের ঢাকাই সামগ্রী মেশাতে এ মেশিন ব্যবহার হয়। তবে এগুলো প্রতিদিন ব্যবহার হয় না। তাই মালিকরা জড়ো করে রাখেন। 

স্থানীয়দের মতে, মাসে তিন থেকে চারবার একেকটি মেশিন সরানো হয়। বাকি সময় মেশিনগুলো এভাবেই থাকে। আর বৃষ্টির পানি জমে এর ভেতরে মশার লার্ভার জন্ম নেয়ার বিষয়টি খালি চোখেই দেখা যায়। জমে থাকা পানিগুলো পরিষ্কার ও স্বচ্ছ। আর এই পরিবেশ এডিস মশার পছন্দের- জানাচ্ছেন কীটতত্ত্ববিদরা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, এলাকার বিভিন্ন অংশে মশক নিধন কর্মীরা ওষুধ ছিটালেও এদিকে তাদের দৃষ্টি নেই। বাবুল হোসেন নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘পানি তো এখানে সব সময় জমে থাকে। মশাও হয়। কিন্তু কেউ এখানে ওষুধ দেয় নাই।’

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল কাদির বলেন, ‘ওষুধ দেয় মেইন রাস্তায়। বাসার সামনে। কিন্তু যে গাড়িগুলা, মেশিনগুলা রাস্তার পাশে পইরা আছে, এগুলার মধ্যে প্রচুর পানি। কেউ এই দিনে তাকায় না। কিন্তু মশা কিন্তু এইসব জায়গা থেকেই হয়।’

একই অবস্থা দেখা গেছে বেড়িবাঁধে হোসেন মার্কেটের বিপরীতে। বিভিন্ন ধরনের মেশিনপত্র এবং গাড়ি পড়ে থাকতে দেখা গেছে গাবতলীর দ্বীপনগর এলাকায়। সেখানে জমাটবদ্ধ বৃষ্টির পানি।
গাড়ির টায়ারে জমাট পানি

বেড়িবাঁধের গাবতলী থেকে বাবুবাজার পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে দেখা মিলেছে এডিসের প্রজনন উপযোগী পরিবেশের। দেখা মিলেছে গাড়ির টায়ারের স্তূপ। বিশাল বিশাল স্তুপের মধ্যে রয়েছে জমাট পানি। আর সেখানেও বিপুল পরিমাণ জমার লার্ভা। 

স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘টায়ারের দোকানগুলো সরকারি জায়গার ওপরে। সরকার চাইলে এগুলো উচ্ছেদ করতে পারে। কিন্তু তারা তা করছে না। বরং এদের এখানে বসিয়ে রেখে ডেঙ্গু সংক্রমণের আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে তুলছে।’

এই ব্যাংক কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘বেড়িবাঁধের ওপাড়ে যে এলাকাগুলো গড়ে উঠেছে সেখানে প্রচুর মানুষ বসবাস করে। এখানে যদি এডিসের সংক্রামণ কমানো না যায়। তাহলে এসব এলাকার হাজার হাজার মানুষ বিপদে পড়বে। সিটি করপোরেশনের সদয় দৃষ্টি কামনা করছি।’

ঈদের ছুটি থাকার কারণে টায়ার বিক্রি সবগুলো দোকানই বন্ধ। কিন্তু বেড়িবাঁধেই দুই পাড়ে পড়ে আছে হাজার হাজার টায়ার। আর প্রতিটি টায়ারের মধ্যেই পানির জমে আছে। 

স্থানীয়দের থেকে পাওয়া তথ্যমতে, হকাররা বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে টায়ার কিনে আনে। এক সপ্তাহ থেকে ১৫ দিন জমা করে টায়ারগুলো বিক্রি করা হয় পাইকার, আলকাতরা কারখানা এবং ইটভাটায়। কিন্তু এই দীর্ঘ সময় এক জায়গায় টায়ার পরে থাকার কারণে বিপদের মুখোমুখি বেড়িবাঁধ পাড়ে বসবাসকারীরা।

এসব সম্ভাব্য প্রজননস্থল দৃষ্টি এড়িয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ইমদাদুল হক বলেন, ‘ কিছু জায়গা বাদ পড়লেও সেসব স্থানেও মশার ওষুধ ছিটানো হবে।’

‘আমরা আমাদের মশক নিধন কর্মীদের এই ধরনের জায়গাগুলো, নির্মাণাধীন ভবন, বাসার ছাদে যেতে বলছি। হয়ত তারা এখানে যাবে, বাদ পড়েছে...যে কোনোটাই হতে পারে।’

শনিবারের মধ্যে বাদ পড়া এসব স্থানে মশক নিধন ওষুধ ছিটানোর প্রতিশ্রুতি জানিয়ে এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, ‘যে জায়গাগুলোতে তারা যায়নি, আমরা তাদের সেসব জায়গায় পাঠাব। যেন কোনো জায়গা বাদ না যায়।’

ঢাকাটাইমস/১৭আগস্ট/ ইএস