এখন চামড়া পাচ্ছে না ট্যানারি

প্রকাশ | ১৭ আগস্ট ২০১৯, ১৬:১৭ | আপডেট: ১৭ আগস্ট ২০১৯, ১৭:৪৭

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

আড়তদারদের বকেয়া না দিয়ে দুই বছর ধরে নিজেরা সরাসরি এজেন্ট দিয়ে চামড়া কেনার চেষ্টায় থাকা ট্যানারি এবার চামড়া সংকটে পড়তে যাচ্ছে। ঘোষণা দিয়ে চামড়া কিনতে যাওয়া ট্যানরি মালিকদেরকে আশাহত হতে হচ্ছে। আড়তদাররা তাদের কাছে বিক্রি করতে রাজি হচ্ছে না।

এবার কোরবানির পশুর চামড়ার দর অস্বাভাবিক হারে কমে যাওয়ার পেছনে অর্থ সংকটকে দায়ী করা হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে বেশি দামে চামড়া কিনে আড়তে কম দামে বিক্রি করা মৌসুমি ব্যবসায়ীরা এমনিতেই দাম দিয়েছেন কম। তার ওপর তারা আড়তে এসে শুনেছেন আরো কম দাম।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আড়তদাররা ভুগছেন অর্থ সংকটে। ট্যানারি মালিকদের কাছে আড়তদারদের ৩০০ কোটি টাকার মতো অর্থ বকেয়া রয়ে গেছে। কিন্তু টাকা পরিশোধ না করে গত বছর থেকে ট্যানারিগুলো নিজেরাই সরাসরি চামড়া কেনা শুরু করেছে বলে তথ্য মিলেছে। চলতি বছরও ঈদের দিন বিপুল পরিমাণ চামড়া কেনা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে চামড়ার দরপতনের পর সরকার এবার কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। আর এরপর ট্যানারি মালিকরা প্রথমে ২০ আগস্ট ও পরে ১৭ আগস্ট থেকে আড়তদার বা বড় হাট থেকে সরকার নির্ধারিত মূল্যে চামড়া কেনার ঘোষণা দেন।

কিন্তু নির্ধারিত দিনে এসে বেঁকে বসেছেন আড়তদাররা। তারা বলছেন, বকেয়া পরিশোধ না করলে ট্যানারিকে চামড়া দেবেন না তারা।

কাঁচা চামড়া ব্যবসায়িদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট এসোসিয়েশন’ এতদিন ৩০০ কোটি টাকার কথা বললেন এখন বলছেন, অংকটা ৪০০ কোটির মতো হবে। আর সব পাওনাদারদেরকে হিসাব নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। রবিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব জমা দেওয়া হবে।

রাজধানীর পোস্তায় সংগঠনের কার্যালয়ে নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে ট্যানারির কাছে চামড়া না বেচার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরপর সংবাদ সম্মেলন করে সে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়।

সংগঠনের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘ট্যানারি মালিকরা টাকা পরিশোধ না করায় ঈদের সময় কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। এতে করে এবার কোরবানি ঈদের সময় বিপুলসংখ্যক চামড়া নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে দেশ তার মূল্যবান সম্পদ হারিয়েছে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন থেকে বঞ্চিত হয়েছে।’

ট্যানারি মালিকদের কারণে চামড়ার দাম কমেছে অভিযোগ করে আড়তদারদের এ নেতা বলেন, ‘ট্যানারিগুলো বকেয়া টাকা না দেওয়ায় এবার অর্থের অভাবে চামড়া কিনতে পারিনি। অন্যান্য বছর ঈদের আগেরদিন আড়তদারদের সঙ্গে আলোচনা করলেও এবার তারা কোনো কথা বলেনি। তারা যদি আমাদের আশ্বস্ত করত, তাহলে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হত না। কিন্তু এটি না করে উল্টো মিডিয়ার কাছে নানা কথা বলেছে। এ কারণে আরও দর কমেছে। তাই ট্যানারি মালিকরাই এ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন।’

‘আজ থেকে ট্যানারি মালিকরা কাঁচা চামড়া ক্রয় করার কথা রয়েছে। কিন্তু আমরা বকেয়া টাকা পরিশোধ না করায় আজ কোন ধরনের কাঁচা চামড়া বিক্রি করব না।’

দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘২০১২ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ট্যানারি মালিকদের কাছে  আমাদের পোস্তায় ব্যবসায়ীদের পাওনা ১০০ কোটি টাকা এবং সারাদেশের কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের সহ বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায়  ৪০০ কোটি টাকা। এই  টাকা পরিশোধ করা হলেই কেবল আমরা কাঁচা চামড়া বিক্রি করব।’

রবিবার এ নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বৈঠকের পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে বলেও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতান কাঁচা চামড়া রপ্তানি কারার সুযোগ দেওয়ায় সরকাকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘এতে করে রপ্তানি আয়ের আরেকটা সুযোগ সৃষ্টি হলো।এ সুযোগ অব্যহত থাকলে ট্যানারি মালিকদের হাতে কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা আর জিম্মি থাকবে না।’

এবারও পবিত্র ঈদুল আজহার আগে সরকার ও ব্যবসায়ীরা মিলে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেয়। এবার ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ৪৫-৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৫-৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

তবে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ছোট গরুর চামড়া ২০০ থেকে ২৫০, আর বড় গরুর চামড়া কিনেছেন চার থেকে আটশ টাকায়। তবে আড়তে এসে  তারা দাম শুনেছেন আরো কম।

রাগে, ক্ষোভে চামড়া বিক্রি না করে বহু মৌসুমি ব্যবসায়ী রাস্তার ধারে বা নদীতে চামড়া ফেলে দিয়েছেন।

(ঢাকাটাইমস/১৭আগস্ট/জেআর/ডব্লিউবি)