‘শখ’ বেচে খাবার খাবেন তানিয়া

প্রকাশ | ১৭ আগস্ট ২০১৯, ১৭:২৩ | আপডেট: ১৭ আগস্ট ২০১৯, ২০:০৫

কাজী রফিক, ঢাকাটাইমস

গৃহিনীদের শখ নতুন হাড়ি-পাতিল কেনা। সেসব হাড়ি ব্যবহার না হলেও ঘরে সাজিয়ে রাখতে পছন্দ করেন নারীরা। শুক্রবার সন্ধ্যায় মিরপুরের রূপনগর চলন্তিকা বস্তিতে লাগা আগুনে পুড়েছে গৃহিনীদের সেসব তৈজসপত্র। আগুন সর্বশান্ত করে গেছে ওই বস্তির হাজার হাজার মানুষকে। আগুনে পুড়েছে বস্তিবাসীর স্বপ্ন, সম্পদ, সম্বল, শখ। তাই শখের তৈজসপত্র ভাঙারির দোকানে বিক্রি করে দুপুরের খাবার খেয়েছেন কেউ কেউ।

শনিবার সকালে চলন্তিকার মোড়ের ভাঙারির দোকানে দেখা যায়, এমন শত শত তৈজসপত্র। বস্তিবাসী যার যার ঘরে ধ্বংসাবশেষ তুলে এনেছেন ছাই-কয়লার স্তুপ থেকে। আর সেসব বিক্রি করে গেছেন ভাঙারির দোকানে।

অগ্নিকাণ্ডের সময় ঘর থেকে বের হয়ে আসতে পারলেও কোনো দামি জিনিসপত্র কিংবা টাকা-পয়সা বের করতে পারেননি বস্তির অধিকাংশ বাসিন্দা। বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে বস্তিবাসীর খাবারের ব্যবস্থা করা হয়।

অনেকেই সকালে বিক্রি করেছেন নিজ নিজ তৈজসপত্র। সেসব বিক্রি করেই খেয়েছেন দুপুরের খাবার। কেউ কেউ বিক্রি করেছেন রাতের এবং পরদিনের কথা ভেবে। আর বিক্রি না করেও লাভ নেই। কারণ এসব তৈজসপত্র আর কোনো কাজে আসবে না।

ঈদের আগে সপরিবারের গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন তানিয়া আক্তার। ফিরেছেন শুক্রবার সন্ধ্যায়। রূপনগর এসে নিজের ঘরটার দিকে তাকালেই দেখলেন ঘরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে।

তানিয়া জানান, মুহূর্তের মধ্যে চোখের সামনে ছাই হয়ে গেছে যত্নে সাজানো তার সংসার। বাদ যায়নি শখের তৈজসপত্রগুলো। সেসবই বিক্রি করতে এসেছেন ভাঙারির দোকানে।

কথা হয় তানিয়া সঙ্গে। কান্নাভেজা কণ্ঠে জানান, তার কষ্টের কথা। বলেন, ‘আমি মাত্র আইসা নামলাম। গল্লির মুখে যাইয়াই দেখি সবাই দৌড়াদৌড়ি করে। একজন কইল আগুন লাগছে। আমিও দৌড়াইয়া গেলাম। যাইয়া দেহি আমার ঘরটাই পুড়তাছে।’

রাতভর পোড়া স্তুপের কাছে যেতে পারেননি তিনি। ভোরে ঘরের ধ্বংসস্তূপ থেকে তুলে এনেছেন তৈজসপত্রগুলো। পেয়েছেন কাপড় ও দাবি জিনিস রাখার ট্রাঙ্ক। যার কোনো কিছুই অক্ষত নেই। তাই বিক্রি করতে এনেছেন ভাঙারির দোকানে।

তানিয়া বলেন, ‘মাইনসের বাসা বাড়িতে কাজ কইরা অনেক কষ্টে জিনিসগুলা কিনছিলাম। অনেক কষ্টের টাকা ভাই... আবার কিনতে পারুম কিনা কে জানে!’

‘দুপারে খাইছি। রাইতেও তো খাওয়া লাগবে। বাড়ি থেকে আওয়ার টাইমে বোনডারেও নিয়া আইছি। ওরে আইনাও বিপদে ফালাইছি।’
তানিয়ার বোন সুমি আক্তার বলেন, ‘আসার পর দৌড়াদৌড়ি করার টাইমে আপার কাছে যে কয়টা ছিল, তাও কই জানি পইরা গেছে। এখন খাওয়া তো লাগব। তাই এগুলা বিক্রি করি। বিক্রি না কইরাও লাভ কি? এগুলা তো আর কোনো কাজে লাগব না।’

(ঢাকাটাইমস/১৭আগস্ট/কারই/জেবি)