‘ট্যানারি মালিকদের কাছে আর জিম্মি থাকব না’

প্রকাশ | ১৮ আগস্ট ২০১৯, ০৮:১৭ | আপডেট: ১৮ আগস্ট ২০১৯, ০৮:১৯

জহির রায়হান
টিপু সুলতান

কাঁচা চামড়া রপ্তানির সুযোগকে স্বাগত জানিয়ে কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের সংগঠন বলছে, ট্যানারি মালিকরা আর তাদের কোনো কৌশলেই জিম্মি করতে পারবে না। আর এতে আগামী কোরবানির মৌসুমে মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও উপকৃত হবেন। চামড়ার দাম ভালো হলে গরিব মানুষও উপকৃত হবে।

কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের সমিতি বাংলাদেশ হাইড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতান এবারের চামড়া পরিস্থিতির সামগ্রিক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন ঢাকাটাইমসের সঙ্গে।

এবার কাঁচা চামড়ার দাম এত কম হলো কেন?

এই প্রথম ৯০ শতাংশ ট্যানারি আমাদের বকেয়া টাকা দেয়নি। চামড়া যারা ব্যবসা করে তারা কিন্তু এই ব্যবসা করে আবেগ থেকে। ব্যবসায়ীরা চামড়া দেখার সঙ্গে সঙ্গে উদগ্রীব হয়ে যান তা কেনার জন্য। কিন্তু টাকার জন্য লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কিনতে পারিনি। অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে এবার চামড়া নষ্ট হয়েছে।

ঈদের দিন থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত কেনার পর আর কুলিয়ে উঠতে পারিনি। আর টাকা ছিল না। এরপর যারা যারা চামড়া নিয়ে আসছে ৫০ টাকা ১০০ টাকা করে বিক্রি হয়েছে। এক পর্যায়ে তারা চামড়া ফেলে রেখে চলে গেছে।

ট্যানারিদের কাছে আমদেরই দুই থেকে আড়াইশ কোটি টাকা বকেয়া রয়ে গেছে। এটা চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের বকেয়া বাদে। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা সরাসরি ট্যানারি মালিকদের কাছে চামড়া বিক্রি করে। আমরা আমাদের বকেয়া টাকা হিসাব করছি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে এ বিষয়ে তুলে ধরব।

সরকার কাঁচা চামড়া রপ্তানির সুযোগ দিচ্ছে, এটা কীভাবে দেখছেন?

আমরা রপ্তানির পক্ষে। আগে শুধু ট্যানারি থেকে রপ্তানি আয় আসত। এখন কাঁচা চামড়া থেকেও রপ্তানি আয় হবে। যদি সরকার এটা বাস্তবায়ন করে আমরা উপকৃত হব। আমরা ট্যানারি মালিকদের জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হতে পারব। আর সরকার রপ্তানির সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলে আমাদের করার কিছু নেই।

রপ্তানি করলে আপনাদের কী সুবিধা হবে?

আমাদের আর ট্যানারি মালিকদের ওপর নির্ভর হতে হলো না। কারো হাত পাও ধরা লাগল না। টাকার জন্য বসে থাকতে হলো না। এলসি দেব, মাল সিপমেন্ট হলে টাকা ব্যাংকে চলে আসবে। আমরা ট্যানারির মুখাপেক্ষী হলাম না। আমরা নিজেরাই সব করতে পারব। একটা এক্সপোর্ট লাইসেন্স করে রপ্তানি করব।

টাকার অঙ্কে আপনাদের বাজারের আকার কত?

আমাদের বাজার শুধু কোরবানি ঈদেই সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। আর সারা বছর মিলে ১০ হাজার কোটি টাকার উপরে।

এবার তো অনেক চামড়া নষ্ট হয়েছে। কত শতাংশ হতে পারে?

গরমে ও বৃষ্টিতে ২৫ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়েছে। আর যে চামড়া ফেলে দেওয়া হয়েছে তা মিলিয়ে মোট ৪০ শতাংশ হবে। চিটাগাংয়েই দুই লাখ পিস চামড়া নষ্ট হয়েছে। সিলেটেই এক লাখের উপর মাটিতে পুঁতে ফেলেছে।

কাঁচা চামড়া বিক্রি করবেন কবে?

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক আছে আমাদের। ওখানে সব কিছুর সিদ্ধান্ত হবে।

কাঁচা চামড়া আগে রপ্তানির হয়েছিল?

হ্যাঁ, আগে লবণ মেশানো চামড়া রপ্তানি হতো। ৪০ বছর আগে লবণ দেওয়া চামড়া রপ্তানি হয়েছে ইংল্যান্ডে। লবণ মাখিয়ে এটা কেজি হিসেবে বিক্রি হতো। লোমসহ কাঁচা চামড়া রপ্তানি হতো। এখন তো প্রযুক্তি আরও আধুনিক হয়েছে।

ঢাকার বাইরে থেকে আরও চামড়া আসবে পোস্তায়?

হ্যাঁ, আসবে। ঢাকার বাইরের চামড়ার জন্য তো আমাদের অর্ডার দেওয়া। ব্যাপারীরা আছে ওখানে। সব চলে আসবে আমাদের এখানে।

চামড়া পাচারের যে অভিযোগ আসে এখন চামড়া ফেলে দেওয়ার চেয়েতো সীমান্ত খুলে দেওয়া ভালো ছিল?

সেই হিসেবে ভালো, নষ্ট হওয়ার চেয়ে ১০ টাকা ২০ টাকা পাক। তাও ভালো।

এবার বকেয়া টাকা না পেলে চামড়া বিক্রি করবেন?

প্রশ্নই আসে না। ভালো ট্যানারি ছাড়া আমরা বেচব না। আগামী তিন মাস লবণ দিয়েই আমরা কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ করতে পারব।

এবার যে চামড়ার দাম নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হলো, এর দায়ভার কার?

এর পুরো দায়ভার ট্যানারি মালিকদের ওপর বর্তায়। তারা আমাদের বকেয়া টাকা পরিশোধ করেনি। এর ওপর চট্টগ্রামের সঙ্গে আমাদের ডাইরেক্ট পারসেজ নেই। ট্যানারি মালিকরা ডাইরেক্ট সেখান থেকে সংগ্রহ করে। তারাও বকেয়া টাকা পায়নি। সিলেট আর চট্টগ্রামে ১২৫ কোটি টাকার মতো বকেয়া রয়েছে ট্যানারি মালিকদের কাছে।

একেবারে প্রান্তিক চামড়া সংগ্রহকারী এবার ক্ষতিগ্রস্ত হলো। এখানে আপনাদের কোনো সিন্ডিকেট আছে কি না?

আমাদের সিন্ডিকেটেরও তো প্রশ্নই আসে না। সিন্ডিকেট কারা করে? যাদের কাছে কোটি কোটি টাকা আছে। আমাদের কাছে তো টাকাই নেই। আমরা সাধ্যমত চামড়া কিনেছি। আমরা টাকা পেলে চামড়া রাস্তায় ফেলার অবস্থা থাকতো না।

আমাদের পোস্তার বাজারে দুই চারটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সব চামড়াই কেনা হয়েছে। তবে সেটাও পারা গেছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা করে চামড়া কিনতে পারার কারণে। প্রতি পিস দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা হলে এ চামড়া কেনার মতোও আমাদের টাকা থাকতো না। এবার পাঁচ লাখের মতো ছিল পোস্তায় চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা, চার লাখ থেকে সাড়ে চার লাখ চলে এসেছে। আর বাকিগুলো মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছে আছে। এগুলো সব ঢাকার আশেপাশের।

(ঢাকাটাইমস/১৮আগস্ট/ডব্লিউবি/জেবি)