হালদায় দূষণ: এশিয়ান পেপার মিল বন্ধের নির্দেশ

প্রকাশ | ১৮ আগস্ট ২০১৯, ১৮:৩৫

মোহাম্মদ হোসেন, হাটহাজারী

প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী দূষণের দায়ে এশিয়ান পেপার মিলসের উৎপাদন বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। নির্দেশ অনুযায়ী, পরিবেশ রক্ষায় ব্যবস্থা গ্রহণ না করা পর্যন্ত কারখানার উৎপাদন বন্ধ রাখতে হবে।

রবিবার দুপুরে অধিপ্তরের চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক আজাদুর রহমান মল্লিক তার কার্যালয়ে শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত দেন।

এশিয়ান পেপার মিলসটি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার নন্দীরহাট এলাকায় অবস্থিত। বন্দরনগরী চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ পাহাড়তলী এলাকার নন্দীরহাটে এশিয়ান পেপার মিলের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে একুতি ছড়া (মরা খাল)। তা আবার হাটহাজারী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কাটাখালি, খন্দকিয়া, বাথুয়া, মাদারি ও কৃষ্ণখালী খাল ধরে হালদা নদীতে গিয়ে মিশেছে। কারখানার অপরিশোধিত প্রাণঘাতী বর্জ্য এসব খালের মাধ্যমে মিঠা পানির রুইজাতীয় মাছের প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে গিয়ে পড়ে। এতে নদীর জীববৈচিত্র ও নদীর প্রাকৃতিক পরিবেশকে হুমকির মুখে ফেলছে।

১২ বছর ধরে এভাবে দূষিত হচ্ছে হালদা নদী। চট্টগ্রামের পরিবেশ অধিদফতরের একজন কর্মকর্তার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে প্রতিষ্ঠানটি এ ধরনের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে।

এর আগে এই পেপার মিলকে একাধিকবার জরিমানা এবং সতর্ক করলেও তারা দূষণ বন্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এবার চূড়ান্তভাবে কারখানাটি বন্ধের আদেশ দিল পরিবেশ অধিদপ্তর। শুনানির পর সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ত্রুটি সংশোধন করে ইটিপি সার্বক্ষণিক চালু রাখার পদক্ষেপ গ্রহণ ও পরিবেশ রক্ষায় স্লাজ অপসারণের ব্যবস্থা নিতে মিল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এর আগে চলতি বছরের ১০ জুন পরিবেশ অধিদফতর হালদা দূষণের কারণে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করেছিল। ওই সময় প্রতিষ্ঠানটিকে ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছিল অধিদফতর।

ওই ঘটনার দুই মাসের মাথায় ১০ আগস্ট শনিবার রাত সাড়ে ১০টায় ওই কারখানা থেকে পাশের মরা ছড়ায় ছুটির সুযোগে অপরিশোধিত প্রাণঘাতী তরল বর্জ্য ছাড়ার প্রমাণ পেয়েছেন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমিন। ওই রাতে এবং পরের দিন রবিবার দুপুরে ইউএনও’র সঙ্গে হালদা গবেষক দলের সদস্যরা ওই পেপার মিলের দূষণের স্থান পরিদর্শন করেন।

ওইদিন রাতে এশিয়ান পেপার মিল যে রাতের আঁধারেই অপরিশোধিত প্রাণঘাতী তরল বর্জ্য ছেড়ে দেয় হালদায়, এর স্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে ইউএনও’র সরেজমিন পরিদর্শনে।

এর আগে গত ৩০ মে হালদা নদীর রাউজান অংশে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার স্থানীয় বাসিন্দা ও সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে এশিয়ান পেপার মিলের বিরুদ্ধে মামলাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।

পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক সংযুক্তা দাশ গুপ্তা গণমাধ্যমকে বলেন, গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদফতরের একটি টিম সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিস্থিতি নাজুক দেখতে পান। এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটিকে ১৮ আগস্ট শুনানিতে অংশ নেয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়। শুনানি শেষে পরিবেশ রক্ষায় ব্যবস্থা গ্রহণ না করা পর্যন্ত কারখানার উৎপাদন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ঢাকাটাইমস/১৮আগস্ট/ইএস