টেলিফোনে কথা বলতে এক মিনিট সময় পাচ্ছেন কাশ্মীরিরা

প্রকাশ | ১৯ আগস্ট ২০১৯, ০৮:৪৮ | আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০১৯, ০৯:০৬

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস

ভারত-শাসিত কাশ্মীরে টানা দু’সপ্তাহ ধরে চলা ‘কমিউনিকেশন ব্ল্যাক আউট’ কিছুটা শিথিল করা হয়েছে বলে সরকার দাবি করলেও সাধারণ কাশ্মীরিদের অভিজ্ঞতা সে কথা বলছে না। শনিবারই ভারত সরকার বলেছিল, কাশ্মীর উপত্যকার সতেরোটি টেলিফোন এক্সচেঞ্জ খুলে দিয়ে ল্যান্ডলাইন পরিষেবা সেখানে ফের চালু করা হয়েছে।

কিন্তু দিল্লিতে বসবাসকারী একাধিক কাশ্মীরি জানিয়েছেন, তাদের পরিবারের লোকজনকে থানায় গিয়ে লম্বা লাইন দিয়ে কথা বলতে হচ্ছে- আর তারা সেখানে বড়জোর মিনিটখানেকই কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন।

দিল্লিতে থাকেন বারামুলার মেয়ে সাদাফ ওয়ানি। তিনি জানান, তার আব্বু ছোট মেয়েকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে থানা থেকে ফোন করেছিলেন- কিন্তু সে কথাটা মেয়েকে বলার আগেই লাইন কেটে যায়।

এদিকে মোবাইল ফোন তো দূরস্থান, সাধারণ কাশ্মীরিদের বাড়িঘর-ব্যবসা-দোকানপাটে এখনও ল্যান্ডলাইন পর্যন্ত চালু হয়নি। বস্তুত মোবাইল, টেলিফোন বা ইন্টারনেটে কাশ্মীর উপত্যকা বাকি পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে ঠিক দু’সপ্তাহ হতে চলল।

তবে জম্মু ও কাশ্মীর সরকারের মুখপাত্র রোহিত কানসাল শনিবার শ্রীনগরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছিলেন, তারা ৫০ হাজারেরও বেশি ল্যান্ডলাইন অবিলম্বে চালু করে দিচ্ছেন, যাতে সাধারণ মানুষের পক্ষে যোগাযোগ এখন অনেক সহজ হয়ে যাবে। কিন্তু দিল্লিতে থেকে যে কাশ্মীরিরা পড়াশুনো বা চাকরিবাকরি করেন তাদের অভিজ্ঞতা বলছে এখনও আসলে পরিস্থিতি কিছুই পাল্টায়নি।

সাদাফ ওয়ানি বলেন, ‘মিডিয়াতে কত কিছুই পড়লাম, কিন্তু আমি জানি কাশ্মীরে ল্যান্ডলাইন এখনও চালুই হয়নি। আমার আব্বা আর আম্মা গতকাল বিকেলে প্রথম আমার সঙ্গে কথা বলতে পেরেছেন, তাও সেটা থানায় গিয়ে পুলিশের ফোন দিয়ে। ওদের কাছে যেটা জানতে পারলাম, মানুষজনকে কথা বলার জন্য থানায় গিয়ে প্রথমে লাইন দিতে হচ্ছে। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর পুলিশের ফোন বা স্যাটেলাইট ফোনে তাদের সামনে বসেই তারা আত্মীয়স্বজনের খোঁজ নিতে পারছেন- তবে সবাই কথা বলার জন্য মাত্র মিনিটখানেকই সময় পাচ্ছেন।’

পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি ল্যান্ডলাইন চালু হয়ে গেছে- প্রশাসনের এমন দাবির বিষয়ে সাদাফ জানান, ‘দেখুন, গোটা কাশ্মীর জুড়ে, শ্রীনগর-বারামুলা-সোপোরে আমার আত্মীয়স্বজনরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন। আমি ক্রমাগত তাদের নম্বর ঘুরিয়ে চলেছি, কিন্তু কাউকে এখনও পাইনি। দিল্লিতে আমি এমন কাউকেই জানি না যে কাশ্মীরে কাউকে ল্যান্ডলাইনে ধরতে পেরেছে বলে। কাজেই সরকারের এই দাবিটা খুবই বিভ্রান্তিকর।’

তিনি জানান, ‘এদিন সকালেও আমার আব্বু আমাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য আবার থানায় লাইন দিয়েছিলেন। কারণ আজ আমার ছোট বোনের জন্মদিন, ওকে তিনি উইশ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু হাতে মাত্র এক মিনিট সময় ছিল, বোনকে ফোন লাইনটা দেওয়ার আগেই সেটা কেটে গেল- ওদের আর বোনকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো হল না!’

কাশ্মীরের কোনো কোনো পুলিশ থানা থেকে আসা কলে হঠাৎ বেজে উঠছে কাশ্মীরিদের ফোন- যারা ছড়িয়ে আছেন ভারতের নানা প্রান্তে। দিল্লিতে কাশ্মীরি যুবক মুদাসসারও শনিবার রাতে এভাবেই তার বাবা-মার সঙ্গে প্রথম কথা বলতে পেরেছেন ঠিক পনেরো দিন পর। তিনি বলেন, ‘বাকি দেশের আর সব মার মতোই আমার মাও ছেলের চিন্তায় পাগল। আর আমি এদিকে ভেবে কূল পাচ্ছিলাম না, ওদের কীভাবে দিন কাটছে। রাষ্ট্র কিন্তু এভাবে মানুষকে আলাদা করে দিতে পারে না- আপনি কেন আবেগের মাঝে দেওয়াল তুলে দেবেন? এভাবে আপনি তো মানুষের গলা চেপে ধরতে চাইছেন।’

সাদাফ ওয়ানিও বলছিলেন, তার আব্বা-আম্মাও প্রথমেই তার কাছে জানতে চেয়েছেন দিল্লিতে কিছু ওর লাগবে কি না- তাহলে সেটা তারা পাঠাতে চেষ্টা করবেন। এখন তার বা বোনের কাশ্মীরে আসার কোনো দরকার নেই, খুব সংক্ষিপ্ত আলাপে জানিয়ে দিয়েছেন সেটাও।

এদিকে ভারত-শাসিত কাশ্মীরে বিভিন্ন শীর্ষ প্রশাসনিক ও সামরিক পদে কাজ করেছেন, ভারতের এমন বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিক সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপের সরকারি সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সে দেশের সুপ্রিম কোর্টের শরণাপন্ন হয়েছেন। তারা যুক্তি দিচ্ছেন, জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষের মতামত না নিয়ে এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হলে সেটা হবে অসাংবিধানিক।

ঢাকা টাইমস/১৯আগস্ট/একে