ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাবেক প্রতিমন্ত্রীর বাড়ি ভাঙার তাণ্ডব

ঘুরে বেড়াচ্ছে রাজনৈতিক পদধারী আসামিরা

প্রকাশ | ১৯ আগস্ট ২০১৯, ১৭:৫২ | আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০১৯, ১৮:৫৮

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাবেক এক প্রতিমন্ত্রীর বাড়ি ভাঙায় জড়িত রাজনৈতিক পদধারীদের ধরতে পুলিশের অনীহার অভিযোগ উঠেছে। তাদের কেউ কেউ দিব্যি শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। দু-একজন ইতিমধ্যে বিদেশে পালিয়েছেন। সেখানে সেলফি তুলে তা ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট দিচ্ছেন তারা।

সাবেক বিএনপি সরকারের প্রতিমন্ত্রী হারুন আল রশিদের বাড়ি ভাঙার আড়ালে অনেক রাঘব-বোয়াল জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, যারা এতে মদদ দিয়েছেন বলে প্রচার আছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শহরকেন্দ্রে অবস্থিত প্রেসক্লাবসংলগ্ন বাড়িটি ভেঙে জায়গা দখল ও প্রস্তাবিত হাসপাতালে যাওয়ার রাস্তা করে দেয়ার শর্তে এর অংশীদারি নেন তারা। তাদের শক্তিবলেই ওই প্রবীণ নেতার বাড়ি ভাঙার মচ্ছব হয়। এ ঘটনা টক অব দ্য ডিস্ট্রিকেপরিণত হয়েছে। 

শহরে ভূমিদস্যুহিসেবে চিহ্নিত সিন্ডিকেটের এই কাণ্ডে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। এর আগেও শহরে অনেক বাড়ি-জায়গা দখল হয়েছে। কিন্তু এতটা বিচলিত বা আতঙ্কিত হয়নি মানুষ। তাদের আশঙ্কা, পাঁচবারের সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রীর বাড়ি যদি এভাবে ভেঙে দখলে উদ্যোগী হয় চক্রটি, তাহলে সাধারণ মানুষের অবস্থা কী হবে!

শারীরিকভাবে অসুস্থ বর্ষীয়ান রাজনীতিক হারুন আল রশিদ বর্তমানে বিদেশে তার মেয়ের কাছে অবস্থান করছেন। ঈদুল আজহার পরদিন মঙ্গলবার দিবাগত রাতে তার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাড়িতে ভাঙচুরের তাণ্ডব চালায় দখলদাররা। এ ঘটনার হোতাদের কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে থানায় অভিযোগ করেন হারুন আল রশিদের চাচাতো ভাই শামীম রশিদ।

তাতে ১ নম্বর আসামি করা হয় প্রস্তাবিত ডা. জাকারিয়া মা ও শিশু জেনারেল হসপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. জাকারিয়াকে।  প্রচার আছে, ঘটনার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে মালদ্বীপ চলে যান তিনি।

প্রস্তাবিত হাসপাতালের চেয়ারম্যান হিসেবে অভিযোগে নাম রয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পুনিয়াউট গ্রামের মো. হেলাল উদ্দিনের।

আসামিদের একজন সদর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও হলি ল্যাব হাসপাতালের পরিচালক আবু কাউসার। ঘটনার পরদিনই তিনি সিঙ্গাপুর চলে যান। সেখানকার বিভিন্ন স্পটে ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দেন। কাউসার বিদেশ যাওয়ার আগে দাবি করেন এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন তিনি।

রাজনৈতিক পদধারী আরও কয়েকজন ওই বাড়ি ভাঙার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগে নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে শহর যুবলীগের আহ্বায়ক আমজাদ হোসেন রনির নাম রয়েছে ২ নম্বরে। তিনি শহরেই অবস্থান করছেন।

আরেকজন শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম তৌছির। ঘটনার দিন রাত ১২টার পর  একাধিকবার হারুন আল রশিদের বাড়ির ভাড়াটিয়া মডার্ন এক্স-রে ক্লিনিকের মালিক আজিজুল হককে বাড়ি ভেঙে ফেলা হবে বলে মোবাইল ফোনে হুমকি দেন তিনি- এমন অভিযোগ রয়েছে।

এ ছাড়া হাসপাতালের অংশীদার হিসেবে বাড়ি ভাঙায় জড়িত আরও বেশ কয়েকজনের তথ্য পেয়েছে পুলিশ। তারা হলেন পৌর এলাকার শেরপুরের বাছির ওরফে ধোপা বাছির, দাড়িয়াপুর গ্রামের মিজান ওরফে জামাই মিজান, উত্তর পৈরতলার মো. মিজান মিয়া, হলি ল্যাব হাসপাতালের পরিচালক ওবায়দুল হক সূচি, নাসিরনগরের রুবেল মিয়া। এই রুবেল বাড়ি ভাঙার সময় বেশ তৎপর ও ব্যানার টানিয়ে ছবি ওঠায়।

অভিযুক্তদের মধ্যে সূচিকে ১৫ আগস্ট বিকালে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি বাড়ি ভাঙায় জড়িতদের বিষয়ে তথ্য দিয়েছে বলে পুলিশ জানায়।

অভিযোগ রয়েছে, শহরে দিব্যি ঘুরে বেড়ালেও রাজনৈতিক পদধারী আসামিদের কাউকে স্পর্শ করছে না পুলিশ। চুনোপুঁটিদের গ্রেপ্তারে শুধু অভিযান চালানো হচ্ছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সেলিম উদ্দিন এই অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা নমনীয় নই। তদন্তে যাকে পাওয়া যাবে তাকেই গ্রেপ্তার করা হবে। মোবাইল ফোনে লোকেশন চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে জেলা সদরের বাইরে আশুগঞ্জ, ভৈরবে অভিযান চালানো হয়েছে।

ঢাকাটাইমস/১৯ আগস্ট/মোআ