শাপলা বেচে লাখ টাকা আয়

প্রকাশ | ১৯ আগস্ট ২০১৯, ২১:৩৪

আরাফাত রায়হান সাকিব, মুন্সীগঞ্জ

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরসহ ঢাকার নবাবগঞ্জ ও দোহার উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের প্রায় ৭০টি গ্রাম নিয়ে গড়ে উঠেছে আড়িয়াল বিল।  এক লাখ ৬৬ হাজার ৬০০ একর আয়তনের এ বিল শুষ্ক মৌসমে আলু-ধানসহ বিভিন্ন সবজি উৎপাদন হয়।

তবে শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে বিলের পানিতে দিগন্তজুড়ে ফুটে শাপলা। ফুল প্রজাতির হলেও শাপলা সবজি হিসেবে খাবার উপযোগিতা রয়েছে। প্রতিদিন কয়েকশ নৌকা শাপলা বিল থেকে উত্তোলন করেন স্থানীয় কৃষকরা। তাদের কাছ থেকে ক্রয়ের পর পাইকাররা সরাসরি বিক্রির জন্য নিয়ে যান রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে।

শাপলা উত্তোলনকারীদের তথ্য মতে, বর্ষা মৌসমে প্রতিদিন কয়েকশত নৌকা শাপলা বিক্রিতে আয় ছাড়িয়ে যায় লক্ষাধিক টাকার বেশি। এদিকে শাপলা উত্তোলন ও বিক্রি করে সংসার চলছে বিলের আশেপাশের শতাধিক কৃষকের।

সরজমিনে আড়িয়াল বিলের আলমপুর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বিলের পাশে স্তূপ করে রাখা হয়েছে শাপলা। আরেকটু এগিয়ে দেখা যায়, নৌকা থেকে শাপলা গাড়িতে তোলা হচ্ছে। শুধু আলমপুর নয়- বিলের দয়হাটা, শ্যামসিদ্ধি, প্রাণীমণ্ডল, গাদিঘাট, শ্রীধরপুর, বাড়ৈখালী, মদনখালী, আলমপুর, কেউটখালী, মোহনগঞ্জ, কামারগাঁও, জগন্নাথপট্টি, কাঁঠালবাড়ি, মহতপাড়া এলাকায়ও প্রতিদিন শাপলা তোলার কাজ চলে।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, প্রতিদিন রাত ৪টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত শাপলা উত্তোলন করে তারা। প্রতি নৌকায় লোক থাকে দুজন করে। শাপলায় নৌকা বোঝাই হলে বিলের পাশে রাস্তা সংলগ্ন বিভিন্ন স্থানে স্তূপ করা হয় করা হয়। কোন কোন স্থানে বিলের পাশে নৌকায় রেখে দেয়া হয়। পরে প্রতিদিন বিকালে পাইকার এসে পিকআপ গাড়িতে করে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে নিয়ে যায় শাপলা।

বিক্রেতারা জানান, লম্বা শাপলা নৌকা প্রতি ১৪শ থেকে ১৫শ ও মাঝারি  আকারের শাপলা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা দামে পাইকারের কাছে বিক্রি করে তারা।

আলমপুর এলাকার শাপলা বিক্রয়ে জড়িত মামুন জানান, গড়ে ১৬ নৌকার শাপলা একটি গাড়িতে জায়গা হয়। 

একই এলাকার আলিম জানান, বর্ষাকালে জমি পানিতে তলিয়ে যায়, বিলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করি পাশাপাশি শাপলা তুলে বিক্রি করে রোজগার হয।

তিনি আরো জানান, বর্ষা মৌসমে স্থানীয় প্রতিটি গ্রামের শতশত মানুষ বিলের শাপলা তুলে বিক্রির কাজ করেন।

শাপলা বিক্রির সাথে ১৯ বছরের বেশি সময় ধরে জড়িত পাইকার চান মিয়া শিকদার ঢাকা টাইমসকে জানান, আড়িয়াল থেকে কিনে শাপলা গাড়ি প্রতি ঢাকায় নিতে খরচ হয় ১৪-১৫ হাজার টাকা। এরপর এসব শাপলা ঢাকার বাজারে প্রতি আটি ২৫ টাকা ধরে বর্তমানে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতি গাড়িতে প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ আঁটি শাপলা থাকে।

এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সফিকুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে জানান, প্রতিবছরই জেলার আড়িয়াল বিলসহ বিভিন্ন স্থানে শাপলা ফুটে, কৃষকশ্রেণীর মানুষ এসব শাপল বিক্রি করে। শাপলা প্রাকৃতিকভাবে হওয়ায় এক্ষেত্রে কৃষি অধিদপ্তরের পরামর্শের তেমন কিছু নেই, তবে অন্যান্য বিষয়ে কৃষকদের কোন সহযোগিতা প্রয়োজন হলো আমরা করতে পারব।

(ঢাকাটাইমস/১৯আগস্ট/এলএ)