পুলিশের জব্দ করা গাড়িতে ডেঙ্গুর বিপদ

সিরাজুম সালেকীন, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২০ আগস্ট ২০১৯, ১০:৩৪

ঢাকায় কাগজপত্র ঠিক না থাকায় অথবা মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করা বিপুল গাড়ি নিয়ে নতুন বিপত্তি দেখা দিয়েছে। ডেঙ্গুর বাহক এডিস ইজিপ্টি মশা যেসব পরিবেশ পছন্দ করে, তার মধ্যে পড়ে থাকা অচল গাড়িও রয়েছে।

রাজধানীর আগারগাঁও ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের ডাম্পিং স্টেশনে দেখা যায়, সেখানে দেড়শরও বেশি যানবাহন পড়ে আছে খোলা আকাশের নিচে। জায়গা সংকটে রাখা হয়েছে একটির ওপর আরেকটি। কোনটি টোপ খাওয়া, কোনটির দরজা খোলা, আবার কোনটির ইঞ্জিনের সামনের অংশ ভাঙা। এসবের গা বেয়ে জন্মেছে আগাছা। কদিনের বৃষ্টিতে জমেছে হাঁটু সমান পানি। প্রাইভেট কার, সিএনজি, মোটরসাইকেলে জমা পানিতে জন্ম নিতে পারে মশা।

এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসে ঢাকা মহানগর পুলিশের সব ইউনিট থেকে ৫০ হাজার পুলিশ সদস্যকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে- এমন ঘোষণার রেশমাত্র চোখে পড়েনি থানা ও ডাম্পিং স্টেশনগুলোতে।

ডেঙ্গুর ভয়াবহ বিস্তারের মধ্যে মশা নিধনে তোড়জোড়ের মধ্যে রাজধানীর থানা প্রাঙ্গণের এমন বহু জায়গা রয়ে গেছে, যেখানে মশার লার্ভা খালি চোখেই দেখা যাচ্ছে। ডিএমপির ৫০টি থানার বেশিরভাগ ডাম্পিং করা গাড়ির কারণে স্যাঁতসেতে ও নোংরা পরিবেশে মশার বিস্তার বাড়ছে।

ডেঙ্গুর বাহক এডিস ইজিপ্টি মশা যেসব জায়গায় জন্ম দিতে পারে, তার একটি হলো এসব পরিত্যক্ত গাড়ি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের প্রধান কীটতত্ত্ববিদ ভুপেন্দর নাগপাল গত ৫ আগস্ট ঢাকায় একটি সেমিনারে বক্তব্য দিয়ে এগুলোতে নজরদারি করায় পরামর্শ দিয়েছেন।

ড. নাগপাল বলেছেন পরিত্যক্ত পরিবহন, হাসপাতাল, পুলিশ স্টেশন ও ডাম্পিং জোন, বিমানবন্দর, নার্সারি ও পার্ক, নির্মাণাধীন ভবন, সরকারি অফিস ও বাসার আশপাশে জমে থাকা পানি বা যেখানে স্বল্প পরিমাণে পানি জমতে পারে এমন জায়গা পরিচ্ছন্ন রাখলে ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্ভব।

তবে দুই সপ্তাহ কেটে গেলেও বিপজ্জনক বহু জায়গায় এখনো পরিচ্ছন্নতার কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় গিয়ে দেখা যায়, থানা প্রাঙ্গণ ও রাস্তার পাশে রাখা আছে বেশ কিছু মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কার। এসব যানবাহন মামলার আলামত অথবা কাগজপত্র না থাকায় জব্দ করা। দিনের পর দিন সেগুলো পড়ে থাকায় জমেছে আগাছা। প্রাইভেট কারের বিভিন্ন জায়গায় পানি জমেছে।

থানার একজন উপ-পরিদর্শক (এসআই) বলেন, ‘সারাদিন বাইরে বাইরে ডিউটি করে সময় যায় আবার এসব পরিষ্কার করল কি করল না সেটা দেখার সময় কোথায়? তবে এটা স্যারদের দেখা উচিত। যেভাবে এসব গাড়ি থানা চত্বরে রাখা হয়েছে তাতে মশার জন্ম নিচ্ছে। কারণ, প্রতিদিন পুলিশের অনেক সদস্য ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে।’

রাজধানীর বেশ কয়েকটি থানায় মশার বিস্তারে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ দেখা গেছে। রমনা থানা, শাহবাগ থানা, নিউ মার্কেট থানা, ধানমন্ডি থানা, উত্তরখান থানা, মিরপুর মডেল থানা রয়েছে।

তবে ভিন্ন চিত্র আদাবর থানায়। থানা চত্বরের বাইরের রাস্তায় একটি মিনি ট্রাক ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন নজরে আসেনি। একই দৃশ্য শেরে বাংলা থানাতেও। নতুন ভবনে যাওয়ার পর থেকে থানা চত্বর সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে দেখা গেছে নিজ উদ্যোগে। তেজগাঁও থানাতেও মামলার আলামত হিসেবে রাখা হয়েছে প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল। তবে ততটা অপরিচ্ছন্ন চোখে পড়েনি।

থানার থেকে বেশি নাজুক অবস্থা ডিএমপির আগারগাঁওয়ে ট্রাফিক বিভাগের ডাম্পিং স্টেশনে। সেখানে মোটরসাইকেল থেকে শুরু করে পিকআপসহ হরেক ধরনের গাড়ি রয়েছে। খোলা আকাশের নিচে রোদে শুকায় আবার বৃষ্টিতে ভেজে এসব যানবাহন। আর এভাবেই বছরের পর বছর পরে রয়েছে গাড়িগুলো।

খোলা অবস্থায় ফেলা রাখার কারণে গাড়ির গায়ে জন্ম নিয়েছে আগাছা। আর মরিচা আর ধুলোর আস্তরণে রঙ হারিয়েছে বহু আগে। কিছু কিছু গাড়ি থাকতে থাকতে তো মাটির নিচে দেবে গেছে। সেখানে জন্মেছে মশা। আশপাশে বাসাবাড়ি ও অফিসে মশার উৎপাত বেড়েছে।

আশপাশের বাসিন্দারা বলছে, সারাদিন মশার কয়েল অথবা স্প্রে ছিটিয়ে রুমে থাকতে হয়। তা না থালে ঘরে থাকা যায় না। ডাম্পিং স্টেশন পরিষ্কার না করায় তাদের বাসা-বাড়িতে মশা খুব বেশি। দিনের বেলায় আগে মশা না থাকলেও এখন তা বেড়েছে।

ডাম্পিং স্টেশনে দায়িত্বরত এক আনসার সদস্য নাম প্রকাশ না শর্তে বলেন, ‘এখানে কত গাড়ি আসে যায়। কিন্তু কখন পরিষ্কার করা হয় না। অবহেলায় পড়ে থাকে জায়গাটি। সব সময়ই এখানে মশা থাকে। তবে এখন সেটা বেড়েছে।’

‘আমাদের কাজ গাড়ি দেখে রাখার। পরিষ্কারের দায়িত্ব তো আর আমাদের না।’ পরে নিজেই সিএনজি ও প্রাইভেটকারের বডিতে মশা জন্ম নেওয়ার দৃশ্য দেখান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির তেজগাঁও জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) আনিসুর রহমান জানান, ‘আমার এই বিষয়গুলো জানা নেই। তবে জানলাম আমি এখনই সব থানা ও ডাম্পিং স্টেশনকে বলে দিচ্ছি।’

ঢাকাটাইমস/২০আগস্ট/এসএস/ডব্লিউবি/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :