‘সেদিন মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখেছি’

প্রকাশ | ২১ আগস্ট ২০১৯, ০৮:২৭ | আপডেট: ২১ আগস্ট ২০১৯, ০৮:৩৮

কাজী রফিক, ঢাকাটাইমস
সাবিনা আক্তার তুহিন (ফাইল ছবি)

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় প্রাণ গেছে ২৪ জনের। আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাসহ সেদিন আহত হন আরও প্রায় তিন শতাধিক। সেদিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আওয়ামী লীগের নারী নেত্রী এবং সাবেক সংসদ সদস্য সাবিনা আক্তার তুহিন।

ঢাকা টাইমসের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় ২১ আগস্টের ভয়াবহতার বর্ণনা দিয়েছেন তুহিন। বলেন, ‘সেদিন খুব কাছ থেকে দেখেছি মৃত্যুর ভয়াবহতা! চারপাশে শুধু রক্ত আর রক্ত। আইভী আপার রক্তাক্ত দেহ...হানিফ ভাই লুটিয়ে পড়েছিলেন, মায়া ভাই লুটিয়ে পড়েছিলেন যারা ছিলেন ট্রাকে। আমরা মনে করেছি, নেত্রী বোধ হয় নেই। এ রকম একটি পরিবেশ। আমরা মৃত্যুকে দেখেছি, খুব কাছ থেকে দেখেছি।’

‘আমার চারপাশে অনেকেই আহত হয়েছেন, নিহত হয়েছেন। কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমি ট্রাকের সামনে থাকা সত্ত্বেও বেঁচে গেছি। এটা আল্লাহর অশেষ রহমত ছিল।’

‘সেদিন আইভী আপার রক্তাক্ত শরীর দেখেছি, তিনি পরে হাসপাতালে মারা গেছেন। আহত অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। অনেকে এখনো রাতে ঘুমাতে পারেন না শরীরে স্পিøন্টারের যন্ত্রণায়।

ঘটনাটি যে তৎকালীন বিএনপি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ঘটেছে তা তখনই উপলব্ধি করেছিলেন তুহিন। বলেন, ‘একটা জিনিস তখন বোঝা গেছে, এতে সরকারের একটা পৃষ্ঠপোষকতা আছে। আমাদের যারা আহত হয়েছিলেন আমরা যখন তাদের নিয়ে যাব, তখন খুনিদের পালিয়ে যাওয়ার জন্য কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করা শুরু করল পুলিশ। পুলিশের লাঠিচার্জ শুরু হলো। এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা, সেটা এখানে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।’

‘ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করবে না’ উল্লেখ করে সাবিনা বলেন, ‘একুশে আগস্টের হত্যাকা-ের মূল হোতা তারেক জিয়া। সে বিদেশে থাকার কারণে ওভাবে তাদের বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। তবে একটা কথা মনে রাখবেন, ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। আমরা দেখেছি, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের দীর্ঘদিন পরে হলেও আজকে তাদের ফাঁসি হয়েছে।’

আইনের মাধ্যমেই দ্রুত সময়ের মধ্যে একুশে আগস্টের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি কার্যকর হবে -এমন  প্রত্যাশা জানিয়ে তুহিন বলেন, ‘আমি মনে করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেমন নরম মনের অধিকারী, তেমনি তিনি  কঠোরও। ২১ আগস্টের হামলায় আমাদের অনেকগুলো প্রাণ চলে গেছে। অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, তাই এর বিচার বাংলার মাটিতে হবেই।’

‘২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক জিয়ার যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে। তাকে দেশে এনে বিচার করা হোক। এটা এখন আমাদের দাবি। যেকোনো উপায়ে কূটনৈতিকভাবে তারেক জিয়াকে দেশে ফিরিয়ে এনে এর বিচার করা উচিত।’ বলেন সাবিনা।

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের যেভাবে শাস্তিÍ হয়েছে একই ভাবে এই হত্যাকা-েরও বিচার প্রত্যাশা করেন সাবিনা আক্তার তুহিন। বলেন, ‘এর মধ্যে তো বাবর-পিন্টু গ্রেপ্তার আছে। আমাদের সরকার আইনের ব্যত্যয় কখনো ঘটায়নি। আমরা বিশ্বাস করি, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হয়েছে, ফাঁসির রায় হয়েছে, ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। একইভাবে আমাদের একুশে আগস্টের শাস্তি কার্যকর হবে বলে আশা করি।’

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার সেই  দিনটির ভয়াবহতা ২১ আগস্টের মাধ্যমে অনেকটাই উপলব্ধি করা যায় বলে মনে করেন তুহিন। বলেন, ‘আমরা ১৫ আগস্ট দেখিনি। কিন্তু এই ২১ আগস্টের ঘটনায় আমরা ১৫ আগস্টের ভয়াবহতা উপলব্ধি করতে পারি। ২১ আগস্ট যখন নিজের চোখের সামনে ভেসে ওঠে তখন ১৫ আগস্টের কথা মনে পড়ে। মনে হয় যে সদিন শিশু রাসেল কতটা ছটফট করেছিল।’

(ঢাকাটাইমস/২১আগস্ট/মোআ)