২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা

এখনো কান্না থামেনি স্বজনহারাদের

সাগর হোসেন তামিম, মাদারীপুর প্রতিনিধি
| আপডেট : ২১ আগস্ট ২০১৯, ১১:২২ | প্রকাশিত : ২১ আগস্ট ২০১৯, ১০:৫৪
গ্রেনেড হামলায় নিহত রাজৈরের লিটন মুন্সীর স্ত্রী মাফিয়া আক্তার (বায়ে) ও মেয়ে মিথিলা আক্তার (ডানে)।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের মহাসমাবেশে গ্রেনেড যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ছিলেন মাদারীপুরের চারজন। এছাড়া সেদিনেও হামলায় আহত হয়েছেন এই জেলার পাঁচজন।

বর্বরোচিত ওই হামলায় নিহতের পরিবারের সদস্যরা ভালো নেই। এসব পরিবারে এখনো কাটেনি স্বজন হারানোর শোক। স্বজনের মৃত্যুর কথা মনে করলেই তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এছাড়া একই ঘটনায় আহতরা শরীরে স্পি­ন্টার নিয়ে পঙ্গু হয়ে দুঃসহ জীবনযাপন করছেন।

সেদিনের নারকীয় স্মৃতি এখনও তাদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। ১৪ বছর অতিবাহিত হলেও সে দিনের দুঃসহ স্মৃতি আজও কষ্ট দেয় নিহতদের স্বজন ও আহতদের।

গ্রেনেড হামলায় মাদারীপুরের যে চারজন নিহত হয়েছিলেন তারা হলেন- শ্রমিক লীগ নেতা ও কালকিনি উপজেলার কয়ারিয়া ইউনিয়নের রামপোল গ্রামের নাসির উদ্দিন, একই উপজেলার ক্রোকিরচর গ্রামের যুবলীগ নেতা মোস্তাক আহম্মেদ ওরফে কালা সেন্টু, রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ি ইউনিয়নের মহিষমারি গ্রামের সুফিয়া বেগম এবং রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের চানপট্টি গ্রামের যুবলীগ নেতা লিটন মুন্সি।

তৎকালীন সময়ে গ্রেনেড হামলায় নিহত লিটন মুন্সীর মেয়ে মিথিলাকে আদর করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বামপাশে নিহত লিটনের স্ত্রী মাফিয়া বেগম। গ্রেনেড হামলায় নিহত লিটন মুন্সীর মেয়ে নুসরাত জাহান মিথিলা ঢাকাটাইমসকে জানান, ‘২০০৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর ছিল আমার প্রথম জন্মদিন। মায়ের মুখে শুনেছি, বাবা ঢাকা থেকে নতুন জামা নিয়ে আসবে। সেই জামা পড়ে কেক কাটা হবে। কিন্তু বাবা আর ফিরে আসেননি। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আমার বাবা মারা যান। তখন হয়তো কিছুই বুঝিনি। আস্তে আস্তে বড় হওয়ার পর সব বুঝতে পারছি। এ বছরের ১ সেপ্টেম্বর আমার ১৫ বছর পূর্ণ হবে। কিন্তু এতো বছর পার হলেও বাবাসহ বহু মানুষের অকাল মৃত্যুর রায় কার্যকর হয়নি। আজও অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাই সরকারের কাছে আমার একটাই দাবি, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অপরাধীদের রায় যেন দ্রুত কার্যকর করা হয়। তাহলে এই ঘটনায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের আত্মা শান্তি পাবে।’

সেদিনের হামলায় কালকিনি পৌরসভার বিভাগদী গ্রামের মোহাম্মাদ আলী হাওলাদারের ছেলে হালান হাওলাদারের একটি পা গ্রেনেড হামলায় নষ্ট হয়ে গেছে। আজীবন পঙ্গুত্ব নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে তাকে। বর্তমানে তিনি ঢাকায় থাকেন।

ঢাকাটাইমসকে হালান হাওলাদার বলেন, ‘২১ আগস্ট অনেক শখ করে নেত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য শুনতে যাই। হাজারো মানুষ ঠেলে মঞ্চের খুব কাছাকাছি আসতেই বোমার বিকট শব্দ হয়। তারপর আর কিছু মনে নেই। জ্ঞান ফিরে দেখি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এখনও দুই হাত পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে শতাধিক স্পিøন্টার নিয়ে যন্ত্রণায় বেঁচে আছি।’

কালকিনির ঝাউতলা গ্রামের ওয়াহেদ সরদারের ছেলে সাইদুল হক সরদার শরীরে অসংখ্য স্পিøন্টার নিয়ে এখনো যন্ত্রণায় জীবনযাপন করছেন। বর্তমানে চোখে ঝাপসা দেখেন। বেঁচে থাকার তাগিদে মালোশিয়ায় যান। শেষ সম্বল জমিটুকু বিক্রি করে বিদেশ গেলেও শরীরে স্পিøন্টারের যন্ত্রণার কারণে বিদেশে বেশিদিন থাকতে পারেননি। চলে আসেন দেশে।

গ্রেনেড হামলায় নিহত লিটন মুন্সীর বাবা আইয়ুব আলী ও মা আছিয়া বেগমসেদিকের কথা জানতে চাইলে সাইদুল হক বলেন, ‘মহাসমাবেশ শুরু হয়। আমি ছিলাম অনেক পেছনে। শেখ হাসিনাকে দেখার জন্য আস্তে আস্তে মঞ্চের ১০ থেকে ১২ হাত দূরত্বে চলে আসি। দাঁড়িয়ে মন দিয়ে নেত্রীর বক্তব্য শুনতে থাকি। বক্তব্য প্রায় শেষ। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু শেষ করতে পারেনি তার মধ্যে বোমা ফাঁটানোর শব্দ। পরপর দুটি বোমা বিষ্ফোরণের পরই চারদিকে কালো ধোয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। মানুষজনের আর্তনাদ করতে থাকেন। চারিদিকে চিৎকার আর ছোটাছুটি। আমিও যখন দৌড় দেওয়ার চিন্তা করি ঠিক তখনি তৃতীয় বোমাটি বিষ্ফোরিত হয়। আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। বুঝতে পারি অসংখ্য মানুষ আমার শরীরের উপর দিকে যাচ্ছে। তারপর জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। ভাবিনি বেঁচে যাবো। বর্তমানে শরীরে যে যন্ত্রণা, এর চেয়ে সেদিন মৃত্যুই ভালো ছিল’।

এছাড়াও গ্রেনেড হামলায় কালকিনির কৃষ্ণনগর গ্রামের কবির হোসেনের ডান হাত বাঁকা হয়ে গেছে। তিনি ঢাকার এক বস্তিতে থেকে দিনমজুরের কাজ করেন।

কবির জানান, ঘটনার পর আমি তিন বছর ভীষণ অসুস্থ ছিলাম। বাড়ির জমি বিক্রি করে চিকিৎসা করাতে আমার ৪-৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু শরীরে এখনও স্পি­ন্টার রয়ে গেছে। যার যন্ত্রণায় এখনও ঘুম আসে না। আমার পরিবার এখন অন্যের জায়গায় বাস করে। সব হারিয়ে এখন আমি নিঃস্ব।

ঢাকাটাইমস/২১আগস্ট/প্রতিনিধি/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :