সবুজ হয়ে উঠছে বার্সেলোনা

প্রকাশ | ২১ আগস্ট ২০১৯, ১২:৪৬

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আস্তে আস্তে দৃশ্যমান হচ্ছে। বৃহত্তর উদ্যোগের উপর নির্ভর না করে বার্সেলোনা শহর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব উদ্যোগে সবুজায়ন ও প্রকৃতি সংরক্ষণের বিশাল উদ্যোগ শুরু করেছে।

সবুজ পাহাড় ও ভূমধ্যসাগরের মাঝে বার্সেলোনা স্পেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রতি বছর এই শহরে আসেন। শুধু শহরের অভিনব পরিবেশ উপভোগ করতে নয়, স্থপতি আন্টোনি গাউডির কাসা মিলা ও সাগ্রাদা ফামিলিয়ার মতো বিশ্বখ্যাত ভবনও তারা নিজের চোখে দেখতে চান।

এবার বার্সেলোনা পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও খ্যাতি অর্জন করতে পারে। পৌর পরিষদের নগর সংক্রান্ত পরিবেশবিদরা ২০৩০ সালের মধ্যে বাড়তি ১৬০ হেক্টর সবুজ করে তোলার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছেন। অর্থাৎ বাসিন্দা প্রতি এক বর্গ মিটার সবুজ অংশ। বার্সেলোনা পৌর পরিষদের অক্টাভি বোরুয়েল ত্রান্চ বলেন, ‘এই পরিকল্পনা অবশ্যই বড় আকারের উচ্চাকাঙ্ক্ষা বটে। সেই লক্ষ্য পূরণ করতে পারলে স্থানীয় মানুষের অনেক সুবিধা হবে। সবুজ এলাকা দূষণ শুষে নিয়ে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে’।

এমন পরিবর্তনের সত্যি প্রয়োজন রয়েছে। সাম্প্রতিক দশকগুলিতে বার্সেলোনা শহরের গড় তাপমাত্রা দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়েও বেড়ে গেছে। এখন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে মানুষের মনোভাবে পরিবর্তন ও একাধিক সবুজ প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

শহরের কেন্দ্রে গ্লোরিয়াস স্কোয়্যারে বিশাল খননকাজ চলছে। শহরের ব্যস্ততম পরিবহণ কেন্দ্র বিশাল নির্মাণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। কাজ শেষ হলে যানবাহন মাটির নীচে সুড়ঙ্গ দিয়ে যাতায়াত করবে। উপরে বিশাল সবুজ পার্ক সৃষ্টি হবে। ত্রান্চ বলেন, ‘ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের প্রবণতা থেকে সরে এসে আমরা এমন এক পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই যেখানে পায়ে হাঁটা, সাইকেল চালানো অথবা গণপরিহণ ব্যবস্থা ব্যবহার সহজ হয়ে ওঠে’।

স্কোয়ারের একটি অংশের কাজ শেষ হয়ে গেছে। শহরের নতুন এই সবুজ ফুসফুসের স্বাদ পেতে অনেক মানুষ সেখানে যাচ্ছেন। কিছু ছোট প্রকল্পও চলছে। যেমন গাছপালা কীটপতঙ্গের হাত থেকে রক্ষা করতে সেগুলির চারিপাশে বিশেষ ধরনের ফুলগাছ লাগানো হচ্ছে। এছাড়া গোটা শহরে সবুজ অংশগুলির মধ্যে এক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার কাজও চলছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করতে অদূর ভবিষ্যতে হাজার হাজার বাড়ির ছাদে আরও বেশি খাড়া বাগান সৃষ্টি করা হচ্ছে। বার্সেলোনা পৌর পরিষদের জুয়ান ব্যার্নার্দো মার্তিন মনে করেন, এর ফলে পরিস্থিতি পুরোপুরি বদলে যাবে। বার্সেলোনা শহরের অবকাঠামো আগেই তৈরি হয়ে গেছে। তাই এখন নতুন করে বাগান সৃষ্টি করা কঠিন। বারান্দা, ছাদ ও বাড়ির দেওয়াল সবুজ করে তোলাই একমাত্র সুযোগ।

তবে ছাদে এমন পরিবর্তনের আগে বাড়িঘরের কাঠামো পরীক্ষা করতে হয়। তাছাড়া ফ্ল্যাটের মালিকদেরও প্রকল্পে অর্থ ঢালতে হয়। পৌর কর্তৃপক্ষ এমন গাছপালা বেছে নিচ্ছেন, যেগুলি অত্যন্ত তাপ প্রতিরোধী এবং যেগুলির কম পানির প্রয়োজন হয়। সেই পানিও বৃষ্টির পানির ট্যাংকে জমা রাখার চেষ্টা করা হয়।

নতুন এই সবুজ অংশ ছাদে উত্তাপের মাত্রা ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে পারে। ফলে নীচের ফ্ল্যাটগুলির তাপমাত্রাও কমে যায়। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ও হিটিং এর প্রয়োজন কমে যায়। মার্তিন বলেন, ‘এটা থার্মাল ইনসুলেশনের মতো। পাথর, নুড়িপাথর, মাটি এবং অবশ্যই গাছপালা তার নির্দিষ্ট কাঠামোর সাহায্যে একসঙ্গে এক ধরনের বাফার বা ফাঁপা অংশ সৃষ্টি করে, যা ভবন ও তার আশেপাশের অংশের জন্য ইনসুলেশন সৃষ্টি করে’।

সবুজায়নের এই পরিকল্পনা বার্সেলোনার ভবিষ্যতের জন্য বিশাল বিনিয়োগ। গত বছর কর্তৃপক্ষ এই লক্ষ্যে কমপক্ষে ৬ কোটি ইউরো ব্যয় করেছে।

নতুন প্রজন্মও বড় অবদান রাখছে। যেমন স্থানীয় একটি স্কুলে শিশুরা তাদের নতুন গাছপালা ও ছাদের বাগানের দেখাশোনা করছে। প্রকৃতির জন্য তাদের মনে সত্যি শ্রদ্ধাবোধ জন্মাচ্ছে। এক শিশুর মতে, গাছপালারও আবেগ আছে, তাই তাদের দেখাশোনা করতে হয়। একজন মনে করে, গাছপালা মারা উচিত নয়, কারণ এর কোনো অর্থ নেই। একটি শিশু বিভিন্ন ধরনের গাছপালা ও সেগুলির দেখাশোনার কায়দা শিখে খুশি।

সবুজের এত বৈচিত্র্য, হাতের নাগালেই তাজা শাকসবজি এবং তাজা বাতাসের পাশাপাশি এই পরিকল্পনার আওতায় শহরে আরও বন্য প্রাণী আকর্ষণের লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। প্রকৃতিকে কাছে নিয়ে আসার এই বিশাল কর্মযজ্ঞ নানা প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীকে বার্সেলোনা শহরে বাসা বাঁধতে উদ্বুদ্ধ করবে।

ঢাকা টাইমস/২১আগস্ট/একে