সেফ হোম থেকে নতুন জীবনে ১০ নারী

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী
 | প্রকাশিত : ২২ আগস্ট ২০১৯, ২১:৫৭

সবাই বাকপ্রতিবন্ধী। কেউ কেউ শুনতেও পান না। কথা বলেন ইশারায়। এতোদিন জীবন কেটেছে রাজশাহী মহানগরীর বায়া এলাকায় সরকারি সেফ হোমে। তবে সেই সেফ হোম থেকেই তারা পেলেন নতুন আরেক জীবন। আর বন্দি নয়, এখন থেকে কর্মব্যস্ত থাকবে তাদের জীবন।

সেফ হোম কর্তৃপক্ষ তাদের চাকরির ব্যবস্থা করেছে।

এই ১০ নারী হলেন- মায়া সুলতানা, আসমা খাতুন, নাসরিন খাতুন, তারা, সালমা, তানিয়া, আলোকি, লতা, জাহানারা ও হাজেরা। তারা এখন ইস্কয়ার গ্রুপের কর্মী। বন্দিজীবন ছেড়ে নতুন পৃথিবীর সন্ধানে সেফ হোমের ব্যবস্থাপক লাইজু রাজ্জাক তাদের চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।

অবশ্য চাকরির জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল ১৫ জনকে। ১০ জন চাকরি করার উপযোগী হয়েছেন। এসব নারীর বিদায় উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিকালে সেফ হোমে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। অনুষ্ঠানের অতিথিদের অনেকেরই চোখ ভিজে ওঠে।

বেসরকারি সংস্থা ‘ইউসেফ বাংলাদেশে’র পক্ষ থেকে এই মেয়েদের সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। আর তাদের মাধ্যমেই ‘ইস্কয়ার গ্রুপ’ তাদের টেক্সটাইল ডিভিশনে এদের চাকরি দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরে।

অনুষ্ঠানে ইউসেফের প্রশিক্ষক রউফুল ইসলাম বলেন, তারা এই ধারা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করবেন।

বিদায় অনুষ্ঠানে সেফ হোমের উপ-তত্ত্বাবধায়ক লাইজু রাজ্জাক শোনালেন কীভাবে তাদের চাকরির জোগাড় হলো। তিনি একদিন ইউসেফ বাংলাদেশের রাজশাহী কার্যালয়ের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখেন ‘চাকরির মেলা’ শিরোনামে একটি নোটিশ ঝুলছে। সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন তারা মেয়েদের সেলাই প্রশিক্ষণ দিয়ে চাকরির ব্যবস্থা করেন। প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ কোটা রয়েছে। যেই কথা সেই কাজ। সেফ হোমে ১৫ জন মেয়ে প্রশিক্ষণ নিল।

এবার চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানে ‘ইস্কয়ার গ্রুপে’র লোকেরা এলেন। সেফ হোমেই পরীক্ষা হলো। পাস করল ১০ জন। সঙ্গে সঙ্গে নিয়োগপত্র। প্রথম অবস্থায় তারা মাসে ছয় হাজার টাকা করে বেতন পাবে। ভালো করলে পরের বছরই বেতন বেড়ে হবে ১২ হাজার। থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা তারাই করবে। এ জন্য মাসে বেতন থেকে দুই হাজার টাকা কাটা যাবে।

সেফ হোমের উপ-তত্ত্বাবধায়ক জানালেন, আগামী শনিবার তিনি এই মেয়েদের নিয়ে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে যাবেন। নিজ হাতে তাদের ব্যাংক হিসাব নম্বর খুলে দিয়ে আসবেন। যাওয়ার আগেই তাদের জন্য নতুন জমা বানিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রত্যেকের জন্য একটা করে কম্বল, মশারি, এক জোড়া করে স্যান্ডেল ও একটি করে ব্যাগ কিনে দেয়া হয়েছে। এ যেন কনে বিদায়ের অনুষ্ঠান।

অনুষ্ঠানে কথা বলতে গিয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় উপ-পরিচালক রাশেদুল কবীরের কণ্ঠ ধরে এল। যেন নিজের মেয়েকে বিদায় দিচ্ছেন। বললেন, হয়তো ঠিকমতো দেখাশোনা করতে পারিনি। মায়েরা, তোমরা আমাকে ক্ষমা করে দিও।

(ঢাকাটাইমস/২২আগস্ট/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :