প্রত্যাবাসন না হওয়ায় খুশি রোহিঙ্গারা

মো. শাহীন, টেকনাফ
| আপডেট : ২২ আগস্ট ২০১৯, ২২:৫২ | প্রকাশিত : ২২ আগস্ট ২০১৯, ২২:৩৬
দ্বিতীয় দফায়ও ভেস্তে গেল প্রত্যাবাসন

মিয়ানমারে নিজেদের নিরাপত্তা ও বসতভিটা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ফিরতে রাজি না হওয়ায় দ্বিতীয় দফা প্রত্যাবাসন স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। আর এতে খুশি হয়েছে কক্সবাজারের বিভিন্ন শিবিরে আশ্রিত রোহিঙ্গারা।

গতকাল টেকনাফের ২৬ নম্বর শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম সাংবাদিকদের এক ব্রিফিংয়ে প্রত্যাবাসন স্থগিতের কথা জানান।

গত বছরে ১৫ নভেম্বর প্রথম প্রথম দফা উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার পর আজ বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দফা প্রত্যাবাসনও স্থগিত হলো।

সংবাদ ব্রিফিংয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার জানান, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে গত দুই দিনে ২৩৫টি পরিবারের মতামত নেয়া হয়েছে। আজকেও ১২৬টি পরিবারের মতামত নেওয়া হয়। কিন্তু রোহিঙ্গারা ফিরতে রাজি নয়। তাদের জোরপূর্বক ফেরত পাঠানো হচ্ছে না। তবে প্রত্যাবাসনের তালিকাভুক্ত ১০৩৭ পরিবারের মতামত নেওয়া অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।

সংবাদ ব্রিফিংয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই কর্মকর্তা ইয়া পিং ও জ্যাং থিনজ্যুঁ এবং মিয়ানমার দূতাবাসের এক কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রত্যাবাসন না হওয়ার ব্যর্থতা বাংলাদেশের নয়। সমস্যাটি মিয়ানমারের। তাই সমাধানের উদ্যোগও তাদের নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার আন্তরিক সহযোগিতা করবে তাদের।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। প্রত্যাবাসনের জন্য ঘুমধুম ট্রানজিট ঘাটও প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের জন্য পরিবহন, মেডিকেল টিমসহ যাবতীয় সরঞ্জামাদিও প্রস্তুত ছিল।

এদিকে প্রত্যাবাসনকে ঘিরে গত কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন মহলে নানা গুঞ্জন চলছিল। রোহিঙ্গারা আগে থেকে স্বদেশে ফিরে যেতে নানা শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। এ ছাড়া স্থানীয়রা প্রত্যাশা করেছেন দ্রুত প্রত্যাবাসনের জন্য। শেষ পর্যন্ত প্রত্যাবাসন না হওয়ায় রোহিঙ্গারা খুশি। তারা আনন্দ প্রকাশ করেছে।

টেকনাফের শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জহির আহমদ বলেন, ‘আমাদের জোর করে মিয়ানমার ফেরত পাঠালে সেটি আমাদের জন্য অবিচার হতো। আমরা চাই আমাদের দাবিগুলো আগে মিয়ানমার সরকার মেনে নিলে আমরা স্ব-উদ্যোগে দেশে ফিরে যাব।’

তালিকায় নাম আসার পর থেকে উৎকণ্ঠায় ছিলেন একই ক্যাম্পের ডি ব্লকের রোহিঙ্গা নারী জুহুরা খাতুন। তিনি বলেন, ‘গত রাত থেকে আমাদের ঠিকমতো ঘুম হয়নি। তবে বাংলাদেশ সরকার আমাদের জোর করে না পাঠানোতে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’

জুহুরা খাতুন আরো বলেন, ‘মিয়ানমার সরকার আমাদের পূর্ণ নাগরিকত্ব না দিলে, আমাদের ভিটেমাটি ফিরিয়ে না দিলে সেখানে গিয়ে আমাদের জেলখানার বন্দিজীবন কাটাতে হবে। তাই আগে আমাদের নাগরিকত্ব দেয়াসহ দাবিগুলো পূরণের জন্য আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বাান করছি।’

প্রত্যাবাসন না হওয়ায় ভিন্নমত দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। টেকনাফের জাদিমুরার ব্যবসায়ী মোহাম্মদ জাকের হোসেন বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গাদের মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে আশ্রয় দিয়েছিলাম। রোহিঙ্গাদের কারণে আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় প্রভাব পড়েছে। তারা মিয়ানমার ফিরে গিয়ে তাদের দাবিগুলো পেশ করতে পারত। এভাবে হলে আর তাদের ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখছি না।’

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে পুলিশ ও সেনা চৌকিতে হামলার জের ধরে সেদেশে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর দোষারোপ করেছিল মিয়ানমার। এর সূত্র ধরে রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বর নির্যাতন চালায় মিয়ানমার সামরিক বাহিনী। খুন, ধর্ষণ, হামলা, নির্যাতন ও ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের মুখে প্রাণ বাঁচাতে সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয় বাংলাদেশে। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের পাহাড়ি এলাকায় ৩৪টি ক্যাম্পে ঠাঁই হয় তাদের। এর আগে থেকে কক্সবাজারে অবস্থান করছির আরও প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা।

রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকারের কাছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বানে গত বছর ১৫ নভেম্বর প্রথম দফা প্রত্যাবাসনের দিনক্ষণ ধার্য্য করা হয়েছিল। সেদিন রোহিঙ্গাদের বিক্ষোভের মাঝে প্রত্যাবাসন ব্যর্থ হয়।

এরপর দ্বিতীয় দফা (আজ) প্রত্যাবাসনের দিন ধার্য করে ৩৪৫৫ রোহিঙ্গা নাগরিকের তালিকা পাঠায় মিয়ানমার সরকার। প্রত্যাবাসনের তালিকাভুক্তরা ছিল টেকনাফের ২৩, ২৪, ২৬ ও ২৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা। তাদের মধ্যে ২৬ নম্বর শালবাগান ক্যাম্প থেকে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক রোহিঙ্গার নাম ছিল তালিকায়।

(ঢাকাটাইমস/২২আগস্ট/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :