৩৩ লাখ মামলা অস্বাভাবিক, কমাতে হবে: আইনমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২২ আগস্ট ২০১৯, ২৩:০০

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, দেশের আদালত গুলোতে ৩১ বা ৩২ কিংবা ৩৩ লাখ মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। এটা কিন্তু অস্বাভাবিক সংখ্যা। তাই এটিকে অবশ্যই কমিয়ে আনতে হবে।

বৃহস্পতিবার জাস্টিস রিফর্ম অ্যান্ড করাপশন প্রিভেনশন (জেআরসিপি) প্রকল্পের আওতায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ন্যাশনাল জাস্টিস অডিট বাংলাদেশ: ফলাফল উপস্থাপন ও আলোচনা” শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

আইন মন্ত্রণালয় এবং জিআইজেড যৌথ উদ্যোগে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। অনুষ্ঠানে সারা দেশের সকল জেলা জজ ও সমপর্যায়ের বিচারক এবং চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটরা অংশ নেন।

আইনমন্ত্রী বলেন, বহু আগে থেকে প্রবাদ চালু আছে ‘জাস্টিস ডিলেইড ইজ জাস্টিস ডিনাইড’। আর আজকে এই নতুন মাত্রার মধ্যে আর একটা জিনিস যোগ করার প্রয়োজন রয়ে গেছে। সেটা হচ্ছে, জাস্টিস ডিলেইড শুধু জাস্টিস ডিনাইড না। এখন জাস্টিস যদি ডিনাইড হয়, জাস্টিস কিন্তু বসে থাকে না। স্ট্্িরট জাস্টিস চলে আসে। আমরা কিন্তু সেটা চাই না। আমরা চাই জনগণ বিচার পাক।

আনিসুল হক বলেন, জাস্টিস অডিটের তথ্যানুযায়ী দেশের শতকরা ৮৭ ভাগ মানুষের বিচার বিভাগের ওপর আস্থা আছে। তিনি বলেন, আজকের যে ৩১ লাখ মামলারজট সেটা যদি ১০ বছর পর ৬২ লাখে দাঁড়ায় তাহলে কিন্তু এই ৮৭ ভাগ আস্থা কমে ৩৭ ভাগে নেমে আসবে। সেজন্যই আমাদের মামলাজট কমানোর যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে জাস্টিস অডিটের তথ্য এবং অভিজ্ঞ বিচারকদের পরামর্শকে কাজে লাগানো যেতে পারে।

মামলাজট কমানোর লক্ষে সরকার বিদ্যমান আইন সংশোধন সহ বহুমুখী পদক্ষেপ নিয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, তা না হলে অধ্যাদেশ আকারে পাস করে এটা চালু করা হবে। এছাড়া ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষে যুগ্ম জেলা জজের পাশাপাশি সিনিয়র সহকারী জজ ও সহকারী জজকে এসব মামলার বিচার করার ক্ষমতা দেয়া হবে।

‘প্রায় ৩২ লাখ মামলার ভারে ন্যুজ আমাদের আদালতগুলোতে বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা; কারাগারে বন্দিসংখ্যাধিক্য, বিশেষ করে বিচারাধীন বন্দিদের আধিক্য; মামলার দ্রুত নিষ্পত্তিকরণে বিচারকবৃন্দের ওপর বিপুল চাপের বিষয়ে আমরা সকলেই ওয়াকিবহাল।

‘মামলাজট নিরসন বর্তমান সরকারের একটি অন্যতম অগ্রাধিকার এবং আমরা পদ্ধতিগতভাবে এই জট নিরসন করতে চেয়েছি। তাই মামলজটের কারণসমূহ শনাক্তকরণের পাশাপাশি কোথায় কোথায় মামলাজট রয়েছে তা অনুসন্ধানের লক্ষ্যে বিচারঙ্গণের একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র দেখতে আমরা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বনের কথা চিন্তা করছিলাম। আর তখনই আমরা “জাস্টিস অডিট” নামের এই ওয়েবভিত্তিক তথ্যভাণ্ডারের কথা জানতে পারি। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার পর ২০১৩ সালে আমরা জার্মান সরকারের সহযোগিতায় দেশের পাঁচটি জেলায় পরীক্ষামূলকভাবে ‘জাস্টিস অডিট’ সম্পাদন করি। এই নিরীক্ষণের ফলাফল থেকে আমরা ওই পাঁচটি জেলার বিচারব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ চিত্র দেখতে পেয়েছিলাম। এই ফলাফলের উপর ভিত্তি করে জার্মান এবং ব্রিটিশ সরকারের সহযোগিতায় আইন মন্ত্রণালয় ২০১৬ সালে দেশব্যাপি ‘ন্যাশনাল জাস্টিস অডিট’ সম্পন্ন করে।

আনিসুল হক বলেন, আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশ যেখানে বিচারপ্রার্থীদের একটি বড় অংশ আর্থ-সামাজিকভাবে পিছিয়ে আছে তাদের জন্য আইনি পরামর্শ গ্রহণ এবং আইনি প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা কষ্টসাধ্য। মামলার দীর্ঘসূত্রতা তাদের আইনি যাত্রাকে আরো কষ্টকর করে তোলে। আর তাই, নানাবিধ আর্থ-সামাজিক কারণে বিচার প্রাপ্তিতে অসমর্থ জনগোষ্ঠী সহ সকল বিচারপ্রার্থীর আইনি অধিকার নিশ্চিতকল্পে সংশ্লিষ্ট সকলের সক্রিয় ও সমন্বিত উদ্যোগ একান্ত প্রয়োজন।

আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জার্মানির ডেপুটি অ্যাম্বাসেডর বুর্কহার্ড দুকফে, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. মো. জাকির হোসেন, জিআইজেড বাংলাদেশ সংক্রান্ত প্রকল্পের জাতীয় প্রকল্প পরিচালক এবং আইন ও বিচার বিভাগের যুগ্ম সচিব উম্মে কুলসুম, জার্মান সরকারের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জিআইজেড বাংলাদেশের ‘রুল অব ল’ প্রোগ্রামের প্রধান প্রমিতা সেনগুপ্ত, জাস্টিস রিফর্ম প্রকল্পের ম্যানেজার এটিএম মোর্শেদ আলম প্রমুখ।

ঢাকাটাইমস/২২ আগস্ট/এএ/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :