‘টুকুর অনুসারী’কে পদ দেয়া নিয়ে ছাত্রলীগে তোলপাড়

প্রকাশ | ২৩ আগস্ট ২০১৯, ১৯:০৯ | আপডেট: ২৩ আগস্ট ২০১৯, ২০:৪২

কাজী রফিক, ঢাকাটাইমস

একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুর এক অনুসারীকে ছাত্রলীগের কমিটিতে জায়গা দেওয়া নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে।

টুকুর সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের অনুসারী ছাত্র সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির উপদপ্তর সম্পাদক মোমিন শাহরিয়ারের ছবি ফেসবুকে ভাইরাল করে তীব্র সমলোচনা করছেন সংগঠনটিরই নেতা-কর্মীরা।

মোমিনের সঙ্গে ছাত্রদল এবং বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের ঘনিষ্ঠতার ছবি এখনও পাওয়া যাচ্ছে ফেসবুকেই। আবার তার সঙ্গে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের ঘনিষ্ঠতার ছবিও শেয়ার করে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা প্রশ্ন তুলছেন, ছাত্রলীগে কীভাবে এর বিরুদ্ধ দর্শনের অনুসারীরা ঢুকছে।

গত বছরের মে মাসে ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনের পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে ১০ মাস সময় নেওয়ার পেছনে কারণ হিসেবে যাচাই বাছাইয়ের কথা বলা হচ্ছিল। ১০ বছরেরও বেশি সময় আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকার কারণে সুযোগসন্ধানীরা নানাভাবে দলে ভেড়ার চেষ্টা করছে। ছাত্রলীগও এর বাইরে নয়। আর এদেরকে বাদ দিয়ে ‘বিশুদ্ধ ছাত্রলীগ’ গড়ার কথা বলে আসছিলেন আওয়ামী লীগের নেতারা।

তবে গত মার্চে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়ার পর ছাত্রলীগের একটি অংশ তা মানতে চায়নি। কমিটিতে অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকে পড়েছে অভিযোগ তুলে তারা নানাভাবে জানায় প্রতিবাদ। এর মধ্যে কিছুদিন পর পর নানা জনের বিষয়ে নানা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

সম্প্রতি সামনে এসেছে উপদপ্তর সম্পাদক মোমিন শাহরিয়ারের বিষয়টি। যুবদলের সাধারণ সম্পাদক টুকু ছাড়াও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাফায়াত জামান অনিকের সঙ্গেও মোমিনের ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি ভাইরাল করছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। অনিকের সঙ্গে একই মোটরসাইকেলে মমিনের ছবি প্রকাশ করে কীভাবে তিনি ছাত্রলীগের কমিটিতে এসেছেন, সে প্রশ্ন তুলছেন বহুজন।

ছাত্রদল নেতা অনিককে গ্রেপ্তারের পর গত ২৯ জুলাই এর প্রতিবাদে বিবৃতি দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মমিন শাহরিয়ারের বাড়ি জামালপুরের ইসলামপুরের কাচারি এলাকায়। তিনি ছাত্রলীগে এলেও তার পরিবার এখনো বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত। বাবা আব্দুস সোবহান ইসলামপুর উপজেলায় ওয়ার্ড বিএনপির নেতা।

এই মোমিন কীভাবে ছাত্রলীগের পদ পেয়ে গেলেন, সে বিষয়ে কোনো জবাবই মিলছে না। একাধিকবার কল করেও সংগঠনের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন বা সধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। শোভনের কল ওয়েটিংয়ে পাওয়ার পর তাকে এসএমএস পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি। আর রব্বানীর ফোন বন্ধ।  

মোমিন শাহরিয়ারের বক্তব্যও পাওয়া যায়নি তিনি ফোন না ধরায়।

সম্প্রতি জাতীয় শোক দিবস স্মরণে ছাত্রলীগের নামে একটি আয়োজনকে ঘিরেও তীব্র সমালোচনা হয়েছে। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে দোয়া মাহফিল ও হামদ-নাতের ওই আয়োজনে সঙ্গীর পরিবেশনের কথা ছিল মুহিব খান নামে কওমিপন্থী এক গায়কের। তিনি আওয়ামী বিরোধী হিসেবেই পরিচিত। এ ছাতাও আরো কয়েকটি নাম দেখে তীব্র সমালোচনা করেন ছাত্রলীগের একটি অংশ।

পরে ছাত্রলীগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, এই অনুষ্ঠানের আয়োজক তারা নয়, যদিও সংগঠনের একটি বড় অংশ এই দাবিতে বিশ্বাস করেছ না।

ছাত্রলীগেই তীব্র প্রতিবাদ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসুর সদস্য ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য তানবীর হাসান সৈকত কটাক্ষ করে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যে মানবিক ছাত্রনেতা, তার একটি প্রমাণ হলো মোমিন শাহরিয়ারকে ছাত্রলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক পদ দেওয়া।’

“মোমিন শাহরিয়ার ছাত্রদলের একজন সক্রিয় কর্মী। ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর আস্থাভাজন। টুকু সাহেবের রিকোয়েস্টে বর্তমানের ‘মানবিক’ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মোমিনকে পোস্ট দিয়ে মানবতার এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। শুধু তাই নয়, বরং আরো তারা শিবির-ছাত্রল দিয়ে সর্বদলীয় ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা করেছে। ইতিমধ্যে পোস্টার প্রকাশের মধ্য দিয়ে তা প্রমাণিত। তাদের এই যুগান্তকারী দৃষ্টান্তকে সবার সাধুবাদ জানানো উচিত।”

‘আজ বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে তার নিজ হাতে গড়া এই সংগঠনের এ অবস্থা দেখে কী ভাবতেন জানি না। তবে ছাত্রলীগের ক্ষুদ্র কর্মী হিসেবে আজ আমি সত্যিই লজ্জিত।’

টুকুর সঙ্গে মোমিনের ছবি প্রকাশ করে  ছাত্রলীগের সাবেক সহসম্পাদক এস এম মামুন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘৫ জানুয়ারির (২০১৪ সালে) নির্বাচনে সে ছিল ছাত্রদলের একনিষ্ঠ কর্মী, মামলার আসামি ও সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর একান্ত আস্থাভাজন। কালের পরিক্রমায় সে এখন বর্তমান ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বের আস্থাভাজন।’

‘বর্তমান ছাত্রলীগের নেতারা সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকেও নিরাশ করেননি। কিন্তু তারা ঠিকই মাঠের পরিশ্রমী কিছু নেতাকর্মীদের নিরাশ ও হতাশ করেছেন।’

‘পুনশ্চঃ মমিন শাহরিয়ারসহ যারা বিতর্কিত আছে তাদের অতি দ্রুত কমিটি থেকে বাদ দিয়ে জাতির পিতার নিজ হাতে গড়া সংগঠনকে কলঙ্ক মুক্ত করুন।’

(ঢাকাটাইমস/২৩আগস্ট/কারই/ডব্লিউবি)