অ্যাপের গাড়ি ‘খ্যাপে’ চলায় ঠকছে সরকারও

সিরাজুম সালেকীন, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৪ আগস্ট ২০১৯, ০৮:৩১

মোবাইল অ্যাপে চলার কথা থাকলেও সিএনজি অটোরিকশার ‘রোগ’ ভর করেছে মোটরগাড়ি বা মোটরসাইকেলে। এতে যাত্রীরা অতিরিক্ত ভাড়া দিতে বাধ্য হওয়ার পাশাপাশি ক্ষতি হচ্ছে রাষ্ট্রের। অ্যাপ কোম্পানির আয় থেকে যে রাজস্ব যাওয়ার কথা সরকারি কোষাগারে, সেটি যাচ্ছে না।

গাড়ি ভাড়া নিয়ে বিপত্তিতে থাকা রাজধানীতে তিন বছর আগে মোবাইল অ্যাপে যানবাহন চলা শুরুর বিষয়টি আশীর্বাদ হয়েছিল। যদিও মাস তিনেক ধরে জানা যাচ্ছে, যাত্রীদের চুক্তিতে যেতে বাধ্য করছেন চালকরা। অনলাইনে রিকোয়েস্ট পাঠালে বিশেষ করে বাইকাররা বলছেন, ‘অ্যাপে নয়, খ্যাপে যাব।’

অ্যাপ কোম্পানিগুলো বাইকারদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না। এতে যাত্রীরা ঠকছে, কারণ অ্যাপে যে ভাড়া দেখায়, তার চেয়ে বেশি পরিশোধ করতে হচ্ছে তাদের। অ্যাপে বাহন ভাড়া করলে যাত্রী ও বাইকারদের নিরাপত্তাবোধ থাকে। তবে ‘খ্যাপে’ গেলে অনিরাপদ হয়ে যেতে পারে যাত্রা। ছিনতাই বা অন্য অপরাধের শিকার হতে পারে দুই পক্ষই। কিন্তু সিএনজি চালকদের মতোই ‘পোষায় না’ ‘রোগ’ পেয়েছে বাইকারদের। আর ‘জিম্মি’ যাত্রীরা গন্তব্যে যাওয়ার তাড়নায় বাড়তি পয়সা দিতে ‘বাধ্য’ হচ্ছেন।

এমনিতে অ্যাপের যে ভাড়া আসে, তার ওপর কোম্পানি যে কমিশন পায়, তার পাঁচ শতাংশ পায় সরকার। এই অর্থ অ্যাপ চালানো কোম্পানির কাছ থেকে বুঝে নেয় রাজস্ব বোর্ড। কিন্তু বাহনগুলো ‘খ্যাপে’ চললে কে কতবার চলেছে, কত টাকা ভাড়া এসেছে, তা জানার সুযোগ থাকে না। ফলে রাজস্ব পায় না সরকার। অর্থাৎ বাইকাররা ‘জিতলেও’ ঠকছে যাত্রী আর সরকার।

পুলিশ বলছে, বাইকারদের এই প্রবণতার বিষয়ে তাদের কাছেও অভিযোগ আসছে। আর নিরাপত্তার বিষয় মাথায় রেখে ট্রাফিক পুলিশ মোটরসাইকেলের কাগজপত্র পরীক্ষার সময় অ্যাপে যাচ্ছে কি-না সে বিষয়ে নজরও রাখছে। তবে এটি ব্যাপক হারে করা হচ্ছে না বলেও স্বীকার করেছেন একজন কর্মকর্তা।

অন্যদিকে সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ পুরোপুরি হাত গুটিয়ে বসে। তারা বলছে, অ্যাপে গাড়ির চলার নীতিমালা পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়ায় চালকদেরকে শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না।

ব্যক্তিগত গাড়ি ভাড়ায় চরম ভোগান্তির মধ্যে ২০১৬ সালে প্রথম অ্যাপের বাইক সেবা আনে স্যাম। এরপর একে একে আসে উবার, পাঠাওসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। ২০১৮ সালের ৭ জুন উবার-পাঠাওয়ের মতো শেয়ার রাইডিং কোম্পানিগুলোকে আয়ের পাঁচ শতাংশ ভাগ হারে ভ্যাট দিতে বিজ্ঞপ্তি জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

মুসক আইন ও বিধি বিভাগ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এটিকে 'ভার্চুয়াল বিজনেস' এর অন্তর্ভুক্ত বলে উল্লেখ করা হয়। গাড়ি চালক সেবা দেয়ার বিপরীতে যে অর্থ উপার্জন করেন, তা মুসকের আওতায় পড়ে না। কিন্তু আয়ের যে অংশ অ্যাপ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান নেয়, সেই অংশের ওপর পাঁচ শতাংশ হারে ভ্যাট পরিশোধ করতে বলা হয়।

সরকারের এই ঠকার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মফিজ উদ্দিন আহমেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আগে সিএনজির ক্ষেত্রে এমন অভিযোগ প্রতিনিয়ত পাওয়া যেত। এখন অ্যাপভিত্তিক শেয়ার রাইডিংয়ের ক্ষেত্রে পাওয়া যাচ্ছে। মোটরসাইকেলের কাগজপত্র পরীক্ষার সময় অ্যাপে যাচ্ছে কি-না সেটা জিজ্ঞাসা করা হয়।’

‘তবে এটা ঠিক, নানাভাবে শুনলেও আমাদের কাছে এই খ্যাপে চলার বিষয়ে যাত্রীরা খুব একটা অভিযোগ করেন না।’

এই পুলিশ কর্মকর্তা যাত্রীদেরকে চুক্তিতে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘এটাতে যাত্রী ও চালক দুজনেরই ঝুঁকি সমান। নাগরিকদের নিরাপত্তার বিষয় মাথায় রেখে আমরা এমন চলাচল বন্ধ করতে চাই।’

বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাজহারুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘রাইড শেয়ারিংয়ের কোন নীতিমালা নেই, একটা খসড়া আছে। নীতিমালা না থাকলে আমরা কোনো কিছুর বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিতে পারি না। কারণ তাদের কোন আইনের আওতায় আনব? তাই এটা নিয়ে কাজ করার সুযোগ হচ্ছে না।’

অ্যাপ চালানো রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলোকে অবশ্য সরকার নিবন্ধনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এ জন্য আবেদন করেছে ১৬টি প্রতিষ্ঠান। যদিও এখনো লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়াটি শেষ হয়নি।

খাতটিকে আইনি কাঠামোর মধ্যে আনতে ২০১৭ সালে রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নেয় বিআরটিএ। এ সংক্রান্ত একটি খসড়া নীতিমালা গত বছরের ১৫ জানুয়ারি অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। এরপর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নীতিমালাটি গত বছরের ৮ মার্চ থেকে কার্যকরের ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে সে নীতিমালারও বাস্তবায়ন হয়নি।

নানা অনিয়ম আর সরকারের রাজস্ব বঞ্চনার বিষয়ে জানতে রাইড শেয়ার রাইডিং সেবা দেওয়া একাধিক কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। প্রতিষ্ঠানগুলো বরাবরই গণমাধ্যমকে এড়িয়ে চলে। অনিয়মের বিষয়ে বক্তব্য দিতে সব সময় অনীহা দেখিয়েছে কোম্পানিগুলো। এমনকি সংবাদ সম্মেলন ডাকলেও প্রশ্নের জবাব না দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে একাধিকবার।

ঢাকাটাইমস/২৪আগস্ট/এসএস/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

মজুত ফুরালেই বাড়তি দামে বিক্রি হবে সয়াবিন তেল

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে ইরান-ইসরায়েল সংকট

ছাদ থেকে পড়ে ডিবি কর্মকর্তার গৃহকর্মীর মৃত্যু: প্রতিবেদনে আদালতকে যা জানাল পুলিশ

উইমেন্স ওয়ার্ল্ড: স্পর্শকাতর ভিডিও পর্নোগ্রাফিতে গেছে কি না খুঁজছে পুলিশ

জাবির হলে স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে জঙ্গলে ধর্ষণ, কোথায় আটকে আছে তদন্ত?

নাথান বমের স্ত্রী কোথায়

চালের বস্তায় জাত-দাম লিখতে গড়িমসি

গুলিস্তান আন্ডারপাসে অপরিকল্পিত পাতাল মার্কেট অতি অগ্নিঝুঁকিতে 

সিদ্ধেশ্বরীতে ব্যাংক কর্মকর্তার মৃত্যু: তিন মাস পেরিয়ে গেলেও অন্ধকারে পুলিশ

রং মাখানো তুলি কাগজ ছুঁলেই হয়ে উঠছে একেকটা তিমিরবিনাশি গল্প

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :