মইজ্জ্যারটেক পুলিশ বক্স ভাঙচুর

ঘটনার সময় মিলে কর্মরত শ্রমিক মামলার আসামি

প্রকাশ | ২৪ আগস্ট ২০১৯, ০৮:৫৭

জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার মইজ্জ্যারটেক এলাকায় পুলিশ ভাঙচুরের মামলায় কয়েকজন নির্দোষ ব্যক্তিকে আসামি করার অভিযোগ উঠেছে। তাদের মধ্যে এমন একজন আছেন, যিনি ভাঙচুরের ঘটনার সময় শিকলবাহায় এস আলম কোল্ড রুলড স্টিল মিলে কর্মরত ছিলেন। মোরশেদ খান নামের এই শ্রমিককে করা হয়েছে মামলার ২৭ নম্বর আসামি।

সরকারি কাজে বাধা প্রদান ও ক্ষতিসাধনের ওই মামলায় ১৮ নম্বর আসামি ওসমান। ২৩ ও ২৬ নম্বর আসামি করা হয়েছে যথাক্রমে মাইন উদ্দিন (১৯) ও রাকিবকে (২২)। স্থানীয়রা বলছেন, এই তিনজন ঘটনার সময় পুলিশকে সহযোগিতা করলেও তাদের মামলার এজাহারে আসামি করা হয়।

গত ১৯ আগস্ট সন্ধ্যা সাতটার দিকে মইজ্জ্যারটেকে এক পেয়ারা বিক্রেতাকে মারধর করেন ডিবি পুলিশের একজন সদস্য। এর জেরে পুলিশ বক্সে ভাঙচুর চালায় একদল লোক। এ ঘটনায় পুলিশ মামলা করে।

মামলার ২৭ নম্বর আসামি মোরশেদ (১৯) সাংবাদিকদের জানান, তিনি হামলার ঘটনার কথাই জানতেন না। তিনি বলেন,  ‘আমি ঘটনার সময় শিকলবাহা কালারপোলে অবস্থিত এস আলম কোল্ড রুলড স্টিল মিলে কাজে ছিলাম। আমার কাছে ফ্যাক্টরির অ্যাটেনডেন্স রেজিস্ট্রার, মিলের লগ বুক কপি, অফিসের ফিঙ্গার পাঞ্চ কপি ও সিসিটিভি ফুটেজ রয়েছে।’

‘আমি ওই দিন দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে স্টিল মিলে প্রবেশ করে রাত ১০টা ৫ মিনিটে বের হয়েছিলাম। আমি কী করে সন্ধ্যা ৭-৮টার ঘটনায় মইজ্জ্যারটেক পুলিশ বক্স ভাঙচুর করলাম! আমি মিলে কাজ করে জীবন নির্বাহ করি। এই মামলার কারণে কী যে বিপদে পড়লাম!’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন মোরশেদ খান। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সুষ্ঠু তদন্ত করে তাকে যেন মামলা থেকে রেহায় দেন সেই আশা করছেন তিনি।

ঘটনার সময় মিলে মোরশেদের উপস্থিতি ও কাজের সত্যতা নিশ্চিত করেন এস আলম কোল্ড রুলড স্টিল লিমিটেডের শিফট ইনচার্জ আল এমরান। তিনি বলেন, ঘটনার সময় মোরশেদ তার কর্মস্থলে ছিলেন।

এদিকে মামলার ১৮ নম্বর আসামি ওসমানের (২৫) দাবি, তিনি ঘটনার সময় পুলিশের পক্ষে ভূমিকা রাখেন। নিজেকে মুজিব আদর্শের একজন সৈনিক দাবি করে তিনি বলেন, ‘সেদিন আমার এলাকার চেয়ারম্যান মো. আলী ও পাড়ার সর্দার তালেব আলীর নির্দেশে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পক্ষে কাজ করেছি। সিসিটিভি ফুটেজে এর প্রমাণ রয়েছে। আহত এসআই কার্তিককে আমিই সহযোগিতা করেছি। অথচ আমাকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। আমি এর সঠিক বিচার চাই।’

মামলায় আসামি হিসেবে নাম ওঠা আরও কয়েকজন জানান, তারা চান ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের শনাক্ত ও বিচার করা হোক। যারা ঘটনায় জড়িত ছিলেন না তাদের নাম চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত হবে না বলে আশা করছেন তারা।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, সন্ধ্যার পর রাতের অন্ধকারে সংঘটিত ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের তদন্ত করে বের করার আগেই নির্বিচারে নিরীহ অনেককে আসামি করা হয়েছে। তাই মামলার অধিকতর তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কর্ণফুলী থানাধীন শিকলবাহা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আলমগীর হোসেন বলেন, ‘মামলাটি তদন্তাধীন। ঘটনায় জড়িত প্রকৃত আসামিদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। সিসিটিভি ফুটেজ আরো নিবিড়ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।’

নগর পুলিশের উপকমিশনার (গোয়েন্দা, বন্দর) এস এম মোস্তাইন হোসাইন বলেন, ‘ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করেছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। একই সঙ্গে অভিযুক্ত মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের বন্দর জোনের এএসআই জায়িদ আজিজকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।’

পুলিশ বক্স ভাঙচুরের ঘটনায় গত মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) কর্ণফুলী থানার এসআই মো. নাছির উদ্দিন বাদি হয়ে সরকারি কাজে বাধা প্রদান ও ৫০ হাজার টাকার ক্ষতিসাধন করার অভিযোগে কর্ণফুলী থানায় মামলাটি করেন। মামলায় ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে আরো ১২০-১৩০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।

ইতোমধ্যে এনাম হোসেন ওরফে আকাশ (২২), মো. রাব্বি (২২), আসিফুর রহমান ইমন (২০) ও আব্দুল মান্নান (৩৫) নামের চারজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।

(ঢাকাটাইমস/২৪আগস্ট/মোআ)